English Version
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৩:২৯

পুরোহিত হত্যার ‘রহস্য উন্মোচিত’; গ্রেফতার ৩

নিজস্ব প্রতিবেদক
পুরোহিত হত্যার ‘রহস্য উন্মোচিত’; গ্রেফতার ৩

 

পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে সন্তগৌড়ীয় মঠের প্রধান পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর রায় হত্যার ঘটনায় মুলহোতাসহ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর ৩ সক্রিয় সদস্যকে পুলিশ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে। এই নৃশংস হত্যাকান্ডের পুরো রহস্য পুলিশের কাছে পরিস্কার হয়েছে বলে জানান রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হুমায়ুন কবির। শুক্রবার দুপুরে দেবীগঞ্জ থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি দাবি করেন, গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পুরোহিতকে জবাইকারী মুল অপরাধী, অপারেশনের আগে ও পরে যার বাসায় অস্ত্র রাখা হয়েছিল তাকে এবং হত্যাকাণ্ডের আগে ও পরে ঘটনাস্থলসহ আশপাশে নজরদারি করা ব্যক্তিও গ্রেপ্তারের তালিকায় আছে। যে বাইসাইকেল দ্বারা নজরদারি করা হয়েছে সেটিও উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের নাম জানায়নি পুলিশ।

পুলিশ বলছে, ওই এলাকার একটি বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি পিস্তল, পাঁচটি গুলি, তিনটি ম্যাগাজিন, তিনটি ছুরি ও তিনটি ককটেল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর আগে রংপুরে কুনিও হোশি হত্যা, দিনাজপুরে খ্রিষ্টান পাদরি ও হোমিও চিকিৎসককে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্রের সঙ্গে এসব অস্ত্রের মিল রয়েছে।

এর আগে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দিন রবিবার দেবীগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে জড়িত সন্দেহে জেএমবির দুই সদস্য খলিলুর রহমান (৫৫) ও বাবুল হোসেন (২৮) এবং শিবিরের স্থানীয় নেতা জাহাঙ্গীর হোসেনকে পুলিশ আটক করে। ডিআইজি হুমায়ুন বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া দুই জেএমবি সদস্যর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হলো। তারা হত্যাকাণ্ডের পুরো রহস্য উদঘাটন করতে পেরেছেন। হত্যাকাণ্ডে মোট আটজন জড়িত ছিলেন। এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য দুজনকেও শিগগিরই ধরা হবে।

গত রোববার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় হিন্দু মঠের অধ্যক্ষ যজ্ঞেশ্বর রায়কে (৫০) গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। গুলিবিদ্ধ হন মঠের একজন সাধু। ওই দিন রাতে ওই এলাকায় নিজ নিজ বাড়ি থেকে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির দুই সদস্য খলিলুর রহমান ও বাবুল হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জাহাঙ্গীর আলম (৩০) নামে ছাত্রশিবিরের আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করে বলে দাবি করেছে জঙ্গিগোষ্ঠীর ইন্টারনেটভিত্তিক তৎপরতা নজরদারিতে যুক্ত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ। সাইটের প্রধান রিটা কাৎজ এক টুইটার বার্তায় এ কথা জানান। আইএসের এই দায় স্বীকারের বিষয়টিকে নাকচ করে দেয় পুলিশ।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় দুই বিদেশি নাগরিক হত্যা, একাধিক খ্রিষ্টান পাদরিকে হত্যার চেষ্টা এবং আহমদিয়া ও শিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে বোমা হামলাসহ নয়টি ঘটনায় আইএস দায় স্বীকার করেছিল, যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এসেছিল। তবে শুরু থেকেই বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে এসব দাবি জোরালোভাবে নাকচ করে বলা হয়েছে, এ দেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। পঞ্চগড়ে গতকালের আগে সর্বশেষ ঘটনা ঘটেছিল গত ৭ জানুয়ারি ঝিনাইদহে। ওই দিন সেখানে ধর্মান্তরিত এক হোমিও চিকিৎসককে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পঞ্চগড় পুলিশ সুপার গিয়াসউদ্দিন আহমেদ ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দীন মোহাম্মদ ও সহকারী পুলিশ সুপার মো. কফিলউদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।