পুলিশ দ্বারা ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় মামলা; বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে নিপীড়নের ঘটনায় রাজধানীর আদাবর থানার পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) রতন কুমারকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে তাঁকে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়। পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার আজ সোমবার দুপুরে সংবাদমাধ্যমকে এই তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে রাজধানীর আদাবর থানার উপপরিদর্শক রতন কুমারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন সেই ছাত্রী। আজ ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক সালেহ উদ্দিন আহমেদ ওই ছাত্রীর জবানবনন্দি রেকর্ড করেন।আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন।
গতকাল রোববার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শিয়া মসজিদের কাছে ওই ছাত্রী পুলিশি হেনস্তার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ছাত্রীর ভাষ্য, রিকশায় করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মোহাম্মদপুরের দিকে যাচ্ছিলেন তিনি। এ সময় শিয়া মসজিদ সিগন্যালের কাছে একটি মোটরসাইকেলে পুলিশের তিন সদস্য তাঁর পথ রোধ করেন। ভাড়া না দিয়েই তাঁকে রিকশা থেকে নামতে বাধ্য করা হয়। এরপর তাঁকে একটি বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের দোকানে নিয়ে যায় পুলিশ। পুলিশের ওই দলটির নেতৃত্বে ছিলেন এসআই রতন। তিনি তাঁকে (ছাত্রী) ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে সাব্যস্ত করার চেষ্টা করেন। তাঁর ভ্যানিটি ব্যাগ ও জ্যাকেট খুলে কথিত ইয়াবা খোঁজা শুরু করেন রতন। ছাত্রীর অভিযোগ, একপর্যায়ে এসআই রতন তাঁকে বিভিন্ন ধরনের বাজে কথা বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, অভিযোগ ওঠার পর এসআই রতনকে গতকাল রাতে প্রত্যাহার করে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনারের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। প্রাথমিক তদন্তের পর আজ রতনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।একজন অতিরিক্ত উপকমিশনারকে অভিযোগ তদন্ত করে আজ দুপুর ১২টার মধ্যে মৌখিকভাবে জানাতে বলা হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে তিনি জানিয়েছেন, গতকাল বেলা তিনটার দিকে শিয়া মসজিদ মোড়ে ওই ছাত্রীকে রিকশা থেকে নামিয়ে প্রায় ১০ মিনিট কথা বলেছেন এসআই রতন। এ সময় তাঁদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হতে দেখেছেন আশপাশের লোকজন। তবে তাদের মধ্যে কী কথা হয়েছে, তা কেউ বলতে পারেননি। ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধে কোনো পরোয়ানা ছিল না। তা ছাড়া তাকে তল্লাশির জন্য নারী পুলিশেরও প্রয়োজন ছিল—এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আজ তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে রতন কুমার দাবি করেন, ওই ছাত্রীর স্বামী যুবদলের একজন নেতা। তিনি গত বছর গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। কিন্তু মামলার কাগজপত্রে তিনি যে ঠিকানা দিয়েছেন, তা ভুল ছিল। এরপর গতকাল টহল ডিউটি পালনের সময় ওই ছাত্রীকে থামিয়ে তার স্বামীর কথা জানতে চান তিনি।
গত মাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী ও সিটি করপোরেশনের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাসকে নিপীড়নের অভিযোগের সুরাহা হওয়ার আগেই পুলিশের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ উঠল।