English Version
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ১১:৩৭

নারায়ণগঞ্জের পাঁচ খুনের মামলা ডিবিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক
নারায়ণগঞ্জের পাঁচ খুনের মামলা ডিবিতে

নারায়ণগঞ্জের বাবুরাইলে একই পরিবারের পাঁচজনের হত্যা মামলাটি জেলা গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে রবিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ মামলাটি ডিবিতে পাঠিয়ে দেয়।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) আবদুল মালেক মামলা হস্তান্তরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ডিবির ওসি মামুনুর রশিদ মণ্ডল জানিয়েছেন, তারা আনুষ্ঠানিক নথি পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় কাজ শুরু করবেন। এর আগে সকালে নিহত তাসলিমা বেগমের স্বামী মো. শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

মামলায় শফিকুল ইসলাম উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী তাসলিমা (২৮), মেয়ে সুমাইয়া (৪), ছেলে শান্ত (১০), ছোট ভাই শরীফ (২৫), শরীফের স্ত্রী লামিয়া (২০) ও শ্যালক মোর্শেদুল নারায়ণগঞ্জ শহরের বাবুরাইলে ইসমাইল হোসেনের বাড়ির নিচ তলার ফ্ল্যাটে বসবাস করে আসছিলেন।

মামলায় বলা হয়, ১০ বছর ধরে ঢাকার জনৈক জিয়ারুল হাসানের গাড়ির চালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন শফিকুল ইসলাম। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তিনি শহরের বাবুরাইলের বাসায় আসতেন। তবে ১৬ জানুয়ারি রাত প্রায় ৮.৪০ টায় তার ছোট ভাই শরীফ মোবাইল ফোনে তাকে জানায় কে বা কারা তাদের বাবুরাইলের ফ্ল্যাটে তালা মেরে পালিয়ে গেছে। পরে তারা তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দুটি রুমের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় তাসলিমা বেগম, ছেলে শান্ত, মেয়ে সুমাইয়া, শ্যালক মোরশেদুল ও ছোট ভাই শরীফের স্ত্রী লামিয়ার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।

মামলায় আরও বলা হয়, তার স্ত্রী তাসলিমার কাছে ঢাকার কলাবাগানের নাজমা ও শাহাজাহান নামের একাধিক ব্যক্তি প্রায় ১২ লাখ টাকা পেত। যা মাসিক চক্রবৃদ্ধি সুদে নেওয়া ছিল। ওই টাকা সময় মতো পরিশোধ করতে না পারায় পাওনাদাররা প্রায় সময় টাকা পরিশোধের জন্য হুমকি দিতেন। এমনকি নাজমাও মাঝে মধ্যে তার পরিবার সন্তানদের দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেবে বলে হুমকি প্রদান করতেন। তার শ্যালক মোর্শেদুলের কাছেও টাকা পেত তারা। টাকা-পয়সা পাওয়ার সুবাদে পাওনাদার ব্যক্তিরা তার বাসায় যাওয়া আসা করতেন। এ ব্যাপারে চাপ প্রয়োগ করতেন।

এছাড়া তার ভাগিনা মাহফুজ তার ছোট ভাই শরীফের স্ত্রী লামিয়ার সঙ্গে ঢাকায় বসবসাসের সময়ে ‘যৌন আবেদন’ করলে পরবর্তীতে মাহফুজকে ঢাকায় রেখে নারায়ণগঞ্জ চলে আসেন তারা। মাহফুজ পুনরায় নারায়ণগঞ্জের বাসায় এসে লামিয়ার সঙ্গে একই ধরনের আচরণ করে। এতে লামিয়া অসন্তুষ্ট হয়। তার স্ত্রী তাসলিমা ও ছোট ভাই শরীফের কাছে লামিয়া বিষয়টি প্রকাশ করে। এ কারণে মাহফুজসহ অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা একই উদ্দেশ্যে পরস্পর যোগসাজশে শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে শনিবার রাত ৮.২০টা পর্যন্ত যে কোনো সময় শক্ত কোনো ভোতা অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম ও গলায় ফাঁস লাগিয়ে পাঁচজনকে হত্যা করেছে। ঘটনার পর থেকে শফিকুল ইসলামের স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল সেট ও শ্যালক মোর্শেদুল ওরফে মোশারফের মোবাইল ফোন পাওয়া যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য গলা কেটে নয়, নারায়ণগঞ্জে এক পরিবারের পাঁচজনকে শ্বাসরোধ এবং মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক। গত রোববার নারায়ণগঞ্জ সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. আসাদুজ্জামান ওই পাঁচজনের লাশের ময়নাতদন্ত করেন। 

পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রত্যেককে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। মাথায় ভারী বস্তুর আঘাতের চিহ্নও রয়েছে। তবে হত্যার আগে কাউকে চেতনানাশক খাওয়ানো হয়েছিল কি-না, এবং নিহত দুই নারীর মধ্যে কাউকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা তা জানতে ফরেনসিক প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে বলে জানান এই চিকিৎসক। 

শনিবার রাতে শহরের ২ নম্বর বাবুরাইল এলাকার প্রবাসী ইসমাইলের পাঁচতলা বাড়ির একতলার পূর্ব পাশের ফ্ল্যাটে ওই পাঁচজনের লাশ পাওয়া যায়।

শনিবার রাতে বাসায় হত্যাকাণ্ডের খবর জানতে পেরে তিনি ‘অসুস্থ হয়ে’ শমরিতা হাসপাতালে ভর্তি হন। রোববার সকালে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নারায়াণগঞ্জ সদর মডেল থানায় নিয়ে যায়।

শনিবার রাতে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, গলা কেটে বা মাথায় আঘাত করে তাদের হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। আর নারায়ণগঞ্জ সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার এহসান উদ্দিন চৌধুরী রোববার সকালে বলেন, খুনীরা পেশাদার নয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাতের পর তাদেরকে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। 

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক আসাদুজ্জামান বলেছেন, হত্যার ধরন দেখে তার মনে হয়েছে খুনিরা পেশাদার কেউ নয়।

এ ঘটনায় শফিকুল ইসলাম অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকে আসামি করে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলা করেছেন। শফিকুলের ভাই শরীফ মিয়া ও তাদের ভাগ্নে মাহফুজ এবং নিহত মোরশেদের খালোতো ভাই শাহাজাদাকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।