English Version
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি, ২০১৬ ১০:৪৬

দুই নির্যাতন ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি: পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
দুই নির্যাতন ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি: পুলিশ

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দাসকে নির্যাতনের ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ। বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি মো. নজরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

শুক্রবার পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি হারুন উর রশিদকে প্রধান করে এই কমিটি করা হয় বলে জানিয়েছেন পুলিশ সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা কামরুল আহসান। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন- সদর দপ্তরের অতিরিক্ত এআইজি মিজানুরর রহমান ও পরিদর্শক মো. সালাহউদ্দিন।

কামরুল আহসান বলেন, তদন্ত কমিটিকে সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। গত শনিবার রাতে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তা গোলাম রাব্বীকে রাজধানীর জেনেভা ক্যাম্পের পাশের রাস্তা থেকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটক করেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই মাসুদ শিকদার। আটকের পর এসআই মাসুদ তাকে গাড়িতে তুলে থানায় না নিয়ে আড়াই ঘণ্টা বিভিন্ন ভয়ভীতি ও মারধর করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেন গোলাম রাব্বী।

আবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) সুপারভাইজার বিকাশ চন্দ্র দাসকে নির্যাতনের ঘটনা তদন্তে ওয়ারী জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) সৈয়দ নূরুল ইসলামের পক্ষ থেকে দুই সদস্যের আরো একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

ওয়ারী জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মাঈনুল হক ও সহকারী কমিশনার (এসি) কামরুল ইসলাম এ তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন।

ডিসি সৈয়দ নূরুল ইসলাম জানান, ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। তবে তদন্তে কারও দোষ প্রমাণিত হলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার ভোরে রাজধানীর মীর হাজিরবাগ এলাকায় কর্তব্যরত অবস্থায় বিকাশকে বেধড়ক পেটায় যাত্রাবাড়ী থানার কয়েকজন পুলিশ। তারপর থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। প্রথমে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা দিলেও পরে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে নেওয়া হয়। এর আগে, ৯ জানুয়ারি রাজধানীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তাকে মারধর ও ক্রসফায়ারে মেরে ফেলার ভয় দেখায় মোহাম্মদপুর থানার পুলিশ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাশ (৪০) কর্মস্থলে যাওয়ার পথে পুলিশর বেধড়ক পিটুনির শিকার হয়েছেন বলে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।

গত শুক্রবার সকালে স্বজনেরা তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে তাঁকে ল্যাবএইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা হয়েছে। বিকাশ চন্দ্র দাশের ভাই লিটন চন্দ্র দাশের অভিযোগ, দয়াগঞ্জে নিজের বাড়ি থেকে বৃহস্পতিবার দিবাগত ভোর রাত ৪টার দিকে সায়েদাবাদ এলাকায় কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন বিকাশ। মীর হাজীরবাগ এলাকায় সাদা পোশাকধারী পুলিশের চারজন সদস্য তাঁকে থামার সংকেত দেন। তিনি (বিকাশ) ছিনতাইকারী ভেবে মোটরসাইকেল ফেলে দৌড় দেন। পরে পুলিশ তাঁকে ধরে ফেলে। তিনি পরিচয় দেওয়ার পরও পুলিশ তাঁকে বেধড়ক পেটায়। লাঠি ও পিস্তলের বাট দিয়ে মাথায় মেরেছে।

লিটন চন্দ্র দাশ বলেন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করার পর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকদের পরামর্শে বিকেলে বিকাশকে  স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউ খালি না থাকায় ল্যাবএইড হাসপাতালে নেওয়া হয়। বিকাশকে সেখানে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।

এ ব্যাপারে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনীশঙ্কর কর বলেন, সেখানে পুলিশের সাদা পোশাকধারী দলের টহলের প্রয়োজন ছিল। ওটা ছিনতাইপ্রবণ এলাকা। চারজন সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিল। বিকাশকে পেটানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যদি অন্যায়ভাবে তারা মেরে থাকে, তবে সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। পুলিশ সদস্যরা অন্যায়ভাবে যদি মেরে থাকে বা দোষী সাব্যস্ত হয়, তবে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন, যা গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পরিদর্শক বিকাশ চন্দ্র দাশকে পেটানোর অভিযোগ উঠল।