English Version
আপডেট : ১৪ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৮:৪৯

হোসাইনী দালানে বোমা হামলাকারী গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক
হোসাইনী দালানে বোমা হামলাকারী গ্রেপ্তার
ফাইল ছবি

রাজধানীর হাজারীবাগে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সন্দেহভাজন দুই জঙ্গি নেতা নিহতের আগে যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়, তাদের একজন হোসাইনী দালানে বোমা হামলাকারী বলে পুলিশ দাবি করেছে। আশুরায় পুরান ঢাকায় শিয়াদের সমাবেশে বোমা হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যার তিন মাস পর বুধবার রাতে রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের নিয়ে অভিযান চালানোর সময় হাজারীবাগে শিকদার মেডিকেল কলেজের কাছে দুই মোটর সাইকেল আরোহী গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যান।

এই ঘটনা নিয়ে বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কামরাঙ্গীরচর থেকে মো. আরমান, জাহিদ হাসান রানা ওরফে মুসহাব এবং নূর মোহাম্মদ ওরফে ল্যাংড়া মাস্টার নামের তিন জেএমবি সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে রানা হোসাইনী দালানে শিয়া সমাবেশে হামলায় সরাসরি অংশ নিয়েছিল বলে জানান গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্মকমিশনার মনিরুল ইসলাম।

সরাসরি হামলায় না থাকলেও আরমান সক্রিয়ভাবে হামলাকারীদের সহায়তা করেছিল বলে এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান। গ্রেপ্তার অন্যজন নূর মোহাম্মদের সাভারের বাড়িতে জেএমবি সদস্যরা প্রায়ই সভা করত বলে পুলিশ জানতে পেরেছে।

গত বছরের ২৪ অক্টোবর রাতে আশুরায় শিয়াদের তাজিয়া মিছিলের প্রস্তুতির সময় হোসাইনী দালানের ইমামবাড়ায় বোমা হামলা হয়। এতে একজন ঘটনাস্থলেই নিহত হন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরেকজন। ইসলামিক স্টেট (আইএস) এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করে বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে সংবাদ এলেও এতে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠীটির জড়িত থাকার খবর নাকচ করে আসছে বাংলাদেশ পুলিশ।

বাংলাদেশের গোয়েন্দারা বলছেন, স্থানীয় জঙ্গিরাই এই ধরনের হামলা চালিয়ে ইন্টারনেটে আইএসের নাম ভাঁড়াচ্ছে। হোসাইনী দালানে বোমাহামলায় ‘জড়িত’ আলবানী ওরফে হোজ্জা ওরফে মাহফুজ গত বছরের শেষ দিকে ঢাকার দারুস সালাম এলাকায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। পুলিশের দাবি অনুযায়ী, মাহফুজ ছিলেন নিষিদ্ধ সংগঠন জেএমবির সামরিক শাখার কমান্ডার।

বুধবার হাজারীবাগে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতদের একজন কামাল ওরফে হিরন আগে নিহত মাহফুজের দলের ‘সেকেন্ড ইন কমান্ড’ বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুলের দাবি। ঢাকার গাবতলীতে তল্লাশি চৌকিতে ছুরিকাঘাতে এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা হত্যাকাণ্ডেও হিরন জড়িত ছিলেন বলে অভিযানের সময় গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার ছানোয়ার হোসেন জানিয়েছিলেন। হিরন হোসাইনী দালানে বোমাহামলায়ও জড়িত ছিলেন বলে জানান মনিরুল।

গত বছরের ২২ অক্টোবর রাজধানীর গাবতলীতে তল্লাশি চৌকিতে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয় এএসআই ইব্রাহিমকে। তখন একজনকে আটক করা হলেও তার সঙ্গী পালিয়ে যান বলে পুলিশ জানিয়েছিল। ইব্রাহিম হত্যাকাণ্ডের ১৩ দিনের মধ্যে ঢাকার আশুলিয়ায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলা চালিয়ে একইভাবে খুন করা হয় এক কনস্টেবলকে। হিরনের সঙ্গে নিহত অন্যজন আব্দুল্লাহ আল নোমান ওরফে আব্দুল্লাহ জেএমবির ঢাকা উত্তরের সামরিক কমান্ডার বলে দাবি করেছেন মনিরুল।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছানোয়ার বলেছিলেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে কামরাঙ্গীরচর থেকে তিন জঙ্গিকে ধরার পর তাদের নিয়ে অভিযানে নেমেছিলেন তারা। তখন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন নোমান ও হিরন। তিনি বলেন, তিন জঙ্গিকে নিয়ে ডিবির দুটি টিম অভিযান চালাচ্ছিল। রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি কালো মোটরসাইকেলে দুজনকে দেখে সন্দেহ হওয়ায় তারা ধাওয়া করে। এসময় তারা শিকদার মেডিকেলের কাছে মেডি ডেন্টাল কেয়ারের ৩ নম্বর রোডে ঢুকে পড়ে। সেখানে মোটরসাইকেল রেখে পাশের মাঠে গিয়ে গুলি চালালে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়।

মনিরুল বলেন, নোমান ও হিরন পুলিশের উপর বোমা ও ‘লোকাল গ্রেনেড’ও ছুড়েছিল। তাদের কাছ থেকে গুলিভরতি দুটি বন্দুক, একটি চাকু ও একটি মোটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়। আশুলিয়ার বারৈপাড়ায় পুলিশের তল্লাশি চৌকিতে হামলায় এই মোটর সাইকেলটি ব্যবহার হয়েছিল বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ওই হামলার তিন আসামির মধ্যে এপর্যন্ত দুজন নিহত হয়েছেন বলেও  দাবি করছে পুলিশ।