পুড়ে ছাই হলো ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিচিহ্ন

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদ্রাসা ছাত্রদের সাথে ব্যাবসায়ী-পুলিশের সংঘর্ষের জেরে পুড়ে ছাই হলো প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিচিহ্ন। সোমবারের সংঘর্ষে এক মাদ্রাসা ছাত্রের মৃত্যুর প্রতিবাদে পরদিন মঙ্গলবার তার সহপাঠীরা তান্ডব চালায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে। তাদের তান্ডবে রেলস্টেশন, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানসহ সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ জাদুঘর এবং সংগীতাঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি হয় । পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর ব্যবহৃত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রসহ দুর্লভ জিনিসপত্র। শান্ত শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মঙ্গলবার যে সহিংসতা হয়েছে স্থানীয়রা তার জন্য একবাক্যে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছেন। তবে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন দাবি করেছে, তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। কারও পক্ষে অবস্থান নেয়নি। যদিও ইতিমধ্যে মাদ্রাসা ছাত্র ও শিক্ষকদের দাবী অনুযায়ী সহকারী পুলিশ সুপার (সদর) ও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

পুলিশের গুলিতে মাদ্রাসার ছাত্রের মৃত্যুর গুজবে শুরু হয় তাণ্ডব । জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া মাদ্রাসার পক্ষ থেকে দাবী করা হয়, পুলিশ মাদ্রাসায় ঢুকে নিহত মাসুদকে গুলি ও মারধর করে তিনতলা থেকে ফেলে দিয়েছে। কিন্তু ময়নাতদন্তে নিহত মাসুদের শরীরে কোন গুলির কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। তার দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তাই এই রহস্যজনক মৃত্যু নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
অমর সুরস্রষ্টা সাধক ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে । “সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গন” -এর পুরো ভবনটি যেন এক ধ্বংসস্তূপ। ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় “সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ জাদুঘর”। ধ্বংসের চিহ্ন সেখানেও। খ্যাতনামা সুরসাধকের ব্যবহৃত বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র, তাঁর লেখা চিঠি ও দুর্লভ কিছু ছবি সবই গেছে মাদ্রাসা ছাত্রদের দেয়া আগুনের গ্রাসে। প্রতিষ্ঠানের দাপ্তরিক কার্যালয়সহ কক্ষগুলি আগুনে পুড়ে কালো হয়ে গেছে। জানা যায়, ১৯৫৬ সালে আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতের বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতিসহ বিভিন্ন জিনিস নিয়ে বাংলাদেশে আসেন।

শহরের সাংস্কৃতিক স্থাপনাগুলির উপর কেন এই হামলা সেটা বুঝে উঠে পারছে না কেউই। অন্নদা সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফরিদা নাজনীন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময়েও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গনে হামলা চালায়নি। ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবী করছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আপামর জনতা।
মাদ্রাসার ছাত্ররা আলাউদ্দিন খাঁ সংগীতাঙ্গন ছাড়াও শহরের পুরাতন কাচারি পুকুর-সংলগ্ন শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ভাষা চত্বরে থাকা সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয়, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্মৃতি পাঠাগার, তিতাস সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শিশু নাট্যম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমি, তিতাস ললিতকলা একাডেমি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুলে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট করে। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল, হালদারপাড়া এলাকায় সৌখিন পর্দা বিতান, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল, প্রশিকা মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্রসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এবং পুলিশের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। সহিংসতার ঘটনায় মোট আটটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৬ হাজার ৯৪ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।
ছবি : দৈনিক প্রথম আলো