ব্লগার রাজীব হত্যা মামলায় দুইজনের ফাঁসি, ৬ জনের কারাদন্ড

গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার হত্যা মামলার রায়ে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র রেদোয়ানুল আজাদ রানা ও ফয়সাল বিন নাঈম দীপের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। এটি দেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্লগার ও লেখক-প্রকাশকসহ মুক্তমনা মানুষের ওপর হামলা-হত্যার ঘটনায় প্রথম রায়।মাকসুদুল হাসান অনিক নামের একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, এহসান রেজা রুম্মান, নাইম শিকদার ও নাফিজ ইমতিয়াজকে ১০ বছর করে এবং সাদমান ইয়ানির মাহমুদকে তিন বছর এবং আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসীম উদ্দিন রাহমানীকে পাঁচ বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার ঢাকার ৩ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক সাঈদ আহম্মেদ তিন বছর আগের এ মামলায় রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, নিহত রাজীব হায়দায়কে ব্লগার হিসেবে উল্লেখ করা হলেও তিনি কী ধরনের লেখালেখি করতেন, মামলার তদন্তে তা উঠে আসেনি। কোন উদ্দেশ্যে আসামিরা রাজীব হায়দায়কে হত্যা করেছেন, তদন্তে তা-ও উঠে আসেনি। এ ধরনের ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকা সত্ত্বেও রাষ্ট্রপক্ষ ৩৫ জন সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করে। সাক্ষীদের জবানবন্দি পর্যালোচনা করে আসামিদের বিরুদ্ধে রাজীব হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয় প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। সাক্ষ্য পর্যালোচনায় ফয়সাল বিন নাইম ও পলাতক আসামি রেদোয়ানুল আজাদকে হত্যা ও হত্যার পরিকল্পনার অভিযোগে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মৃতুদণ্ড দেওয়া হয়।
রায়ে জানানো হয়, আসামি জসীম উদ্দিন রাহমানী সম্পর্কে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানা গেছে, তিনি নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান। কিন্তু মামলার কোথাও বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। হত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হলো। এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে ব্লগে লেখালেখির কারণে ব্লগার রাজীবকে হত্যার পরিকল্পনা করার বিষয় এবং কীভাবে তা বাস্তবায়ন করা হয়েছে, তা প্রকাশ করেছেন। বিচারক আরও বলেন, এ মামলার নথিপত্র পর্যালোচনায় উঠে এসেছে, এই মামলার মূল পরিকল্পনাকারী রেদোয়ানুল আজাদ রানা। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী, আসামিরা দুটি দলে ভাগ হয়ে এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছেন। একটি দল ব্লগার রাজীবকে রেকি করে কোথায় যেতেন, কী করতেন—এ-সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করেছে। অপর একটি দল সরাসরি রাজীবকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে। এঁদের মধ্যে ফয়সাল বিন নাইম চাপাতি দিয়ে রাজীবের ঘাড়ে কোপ দেন। তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন আরেক আসামি মাকসুদুল হাসান।
২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবীতে চলমান গনজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সময় রাতে রাজধানীর পল্লবী থানার কালশীর পলাশনগরে নিজ বাড়ির সামনে ব্লগার রাজীব হায়দারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর তাঁর বাবা নাজিম উদ্দীন পল্লবী থানায় হত্যা মামলা করেন। গত বছরের ২৯ জানুয়ারি এ মামলায় জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। এ মামলায় মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ সাত আসামি কারাগারে আটক আছেন। ২৮ ডিসেম্বর যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক সাঈদ আহমেদ আজ এ রায় ঘোষণা করেছেন।
ব্লগারদের উদ্দেশে বিচারক বলেন, ‘শুনেছি, ব্লগারদের অনেকেই এমন লেখা প্রকাশ করেন, যা কেউ পড়লে তাঁদের খুন করতে উৎসাহিত হয়। এ ধরনের লেখা থেকে অবশ্যই ব্লগারদের বিরত থাকতে হবে। আবার সামান্য কারণে মানুষ খুন করার মতো ঘটনাও আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। এখনকার কিছু কিছু যুবক বিপথগামী হচ্ছে, এটিও ভাবনার বিষয়।’