English Version
আপডেট : ২০ অক্টোবর, ২০২৪ ১১:২৪

মরদেহ তুলতে স্বজনদের ‘আপত্তি’, মামলার তদন্তে বিঘ্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক
মরদেহ তুলতে স্বজনদের ‘আপত্তি’, মামলার তদন্তে বিঘ্ন

ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট সিলেটের গোলাপগঞ্জে গুলিতে ছয়জন প্রাণ হারান। সে সময়ের প্রেক্ষাপটে মরদেহের তদন্ত ছাড়াই এই ছয়জনের মরদেহ দাফন করা হয়। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ওই ঘটনায় মামলা করে নিহতদের পরিবার।

মামলার তদন্তে নেমে পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্তের জন্য নিহতদের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের নির্দেশ দেয় আদালত।

আদালতের এই নির্দেশনা প্রায় দেড় মাসেও তামিল হয়নি। পুলিশের দাবি, মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনে নিহতদের স্বজনরা আগ্রহী নন। তাই আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে এসব মামলার ভবিষ্যৎ নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জানা যায়, গত ৪ ও ৫ সেপ্টেম্বর পৃথকভাবে সিলেটের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আবিদা সুলতানা মামলার তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ছয়জনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের আদেশ দেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগের দিন ৪ আগস্ট গোলাপগঞ্জে গুলিতে নিহত হন উপজেলার নিশ্চিন্ত গ্রামের মৃত তৈয়ব আলীর ছেলে নাজমুল ইসলাম, দক্ষিণ রায়গড় গ্রামের মৃত সুরই মিয়ার ছেলে হাসান আহমদ জয়, শিলঘাট গ্রামের কয়ছর আহমদের ছেলে সানি আহমদ, বারকোট গ্রামের মৃত মকবুল আলীর ছেলে তাজ উদ্দিন, দত্তরাইল বাসাবাড়ি এলাকার আলাই মিয়ার ছেলে মিনহাজ আহমদ ও ঘোষগাঁও ফুলবাড়ি গ্রামের মোবারক আলীর ছেলে গৌছ উদ্দিন।

ওই হত্যার ঘটনায় গোলাপগঞ্জ থানায় পৃথকভাবে ছয়টি ও আদালতে একটি মামলা করা হয়। সবক’টি মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়।

গোলাপগঞ্জ থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তৎকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় নিহত ছয়জনের কারও মরদেহ ময়নাতদন্ত করা হয়নি। পরবর্তী সময়ে মামলা হলে তদন্তকারী কর্মকর্তারা আদালতে মরদেহ ময়নাতদন্তের আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর থেকে মরদেহ তোলার আদেশ দেয় আদালত।

এ ব্যাপারে সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আনোয়ার উজ জামান বলেন, ‘আদালতের আদেশ পাওয়ার পর চলতি মাসের শুরুতে চারটি মরদেহ কবর থেকে তোলার জন্য চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

‘এর মধ্যে নিহত গৌছ উদ্দিনের মরদেহ তোলার দায়িত্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার জনি রায়, নাজমুল ইসলামের মরদেহ উত্তোলনের দায়িত্বে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার জর্জ মিত্র চাকমা, হাসান আহমদের মরদেহ তোলার দায়িত্বে জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম ও সানি আহমদের মরদেহ উত্তোলনের দায়িত্বে রয়েছেন সহকারী কমিশনার মো. মাসুদ রানা।

গোলাপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর মো. আব্দুন নাসের শনিবার বলেন, ‘মরদেহ উত্তোলনের বিষয়ে আদালতের নির্দেশনা আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে উদ্যোগও নেয়া হয়েছিল। তবে নিহতদের স্বজনরা আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন যে তারা কবর থেকে মরদেহ উত্তোলনে আগ্রহী নন। এ ব্যাপারে আদালতে তারা আবেদন করবেন বলেও জানিয়েছেন। তাদের আপত্তির কারণে মরদেহ উত্তোলন কার্যক্রম শুরু করা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘হত্যা মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন খুবই গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ঘটনার সময় ময়না তদন্ত ছাড়াই নিহতদের মরদেহ দাফন করা হয়েছিলো। এখন ময়না তদন্ত করা না গেলে মামলার তদন্তে সমস্যা হবে।’

ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোর একটির বাদী নিহত গৌছ উদ্দিনের ভাই মো. রেজাউল করিম। তিনি বলেন, ‘কবর থেকে লাশ না তুলতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিলেটের জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক আবিদা সুলতানার আদালতে আমি আবেদন করেছি। তবে আদালত এখনও এ ব্যাপারে কোনো আদেশ দেননি।’