English Version
আপডেট : ১৩ জুলাই, ২০২১ ১৩:৪৭

৪৯ বছরেও জেলা হয়নি লাকসাম

অনলাইন ডেস্ক
৪৯ বছরেও জেলা হয়নি লাকসাম

স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট জেলা বাস্তবায়নের দাবিতে স্মারকলিপি প্রদানের ৪৯ বছরেও জেলা হয়নি লাকসাম। ঐতিহ্যমণ্ডিত লাকসামকে দ্রুত জেলা বাস্তবায়নের দাবি বৃহত্তর লাকসামের দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের। 

সূত্র মতে- ‘কত লাকসাম কত বাতি’র শহর হিসেবে পরিচিত লাকসাম একসময় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা ছিল। বিভিন্ন সময়ে এ উপজেলাকে বিভক্ত করে নতুন আরো ৪টি উপজেলা গঠন করা হয়। উপজেলাগুলো হচ্ছে- নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, সদর দক্ষিণ ও লালমাই। বৃহত্তর লাকসামের ৫টি উপজেলা নিয়ে তিনটি সংসদীয় থাকলেও ২০০৮ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি আসন কমিয়ে দুইটি আসনে পুনর্বিন্যাস করে। এ দুইটি আসনে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৯ লাখ।  

নবাব ফয়জুন্নেছা চৌধুরাণীর স্মৃতি বিজড়িত লাকসাম একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ডাকাতিয়ার নদী এখানকার ঐতিহ্য। কুমিল্লার দক্ষিণাঞ্চলে উচ্চ শিক্ষার আলো ছড়াচ্ছে লাকসাম নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজ। লাকসাম রেলওয়ে জংশন দেশের গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশনগুলির অন্যতম। বৃটিশ শাসনামল থেকে লাকসামের দৌলতগঞ্জ একটি প্রসিদ্ধ ব্যবসায়িক কেন্দ্র। সময়ের বিবর্তনে এখানে গড়ে উঠছে অসংখ্য শিল্প কারখানা। লাকসামের বেলতলি বধ্যভূমি স্বাধীনতা সংগ্রামের উজ্জ্বল জনপদ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরতার শিকার অসংখ্য নিরপরাধ বাঙালি এখানে শায়িত আছেন। লাকসাম পৌরসভা ১ম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে উন্নয়নে সাফল্য মোড়ানো। লাকসাম জগন্নাথ মন্দির হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গুরুত্বপূর্ণ উপসনালয়। একুশে পদকপ্রাপ্ত দশম সংঘপাল জ্যোতিপাল মহাথেরোর পূণ্য স্থান লাকসামের বরইগাঁও গ্রামে। সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২ সালে সর্বপ্রথম লাকসামকে জেলা বাস্তবায়নের দাবি জানান তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য আবদুল আউয়াল ও আলহাজ্ব জালাল আহমেদ। তারা লাকসামকে জেলা বাস্তবায়নের দাবিতে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন। পরবর্তীতে লাকসাম পৌরসভার নবনির্মিত ভবন উদ্বোধন করতে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি (তৎকালীন স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী) জিল্লুর রহমান লাকসামে আসলে তৎকালীন পৌর চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল খান লাকসামকে জেলা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে তাঁকে স্মারকলিপি দিয়েছিলেন। বক্তব্যে জিল্লুর রহমান ভবিষ্যত যে কোন সময়ে লাকসামকে জেলা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন। 

১৯৯১ সালে নির্বাচনী জনসভায় লাকসামে এসেছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্থানীয়রা লাকসামকে জেলা বাস্তবায়নের জোর দাবি জানালে বক্তব্যে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাকসামকে জেলা বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েছিলেন। 

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বর্তমান স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এমপি এ পর্যন্ত একাধিকবার লাকসামকে জেলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বক্তব্য রাখেন। লাকসামকে জেলা বাস্তবায়নের দাবিতে বিভিন্ন সময়ে মানববন্ধন, সাংবাদিক সম্মেলনসহ রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সরকার মন্ত্রী এবং বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেছেন ‘লাকসাম জিলা বাস্তবায়ন পরিষদ’ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি লেখক, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক শিব্বীর আহমেদ। একই দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে লাকসাম জেলা বাস্তবায়ন সংগ্রাম কমিটি, বর্তমান প্রজন্ম ফোরাম, বৃহত্তর লাকসাম ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠন। লাকসামকে জেলা বাস্তবায়নের যৌক্তিকতা তুলে ধরে সম্প্রতি লাকসামের বিশিষ্ট নাগরিক শহীদুল্লাহ ভূঁইয়া প্রধানমন্ত্রী বরাবরে খোলা চিঠি লিখেছেন, যা বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। 

লাকসাম জেলা বাস্তবায়ন পরিষদের আহ্বায়ক শিব্বীর আহমেদ বলেন- লাকসামকে জেলা বাস্তবায়ন এখানকার সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রাণের দাবি। বর্তমান উন্নয়নবান্ধব সরকারের সুযোগ্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা লাকসামকে জেলা বাস্তবায়ন করে বৃহত্তর লাকসামবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির অবসান ঘটাবেন বলে আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি। 

লাকসাম উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউনুছ ভূঁইয়া বলেন, বৃটিশ আমল থেকেই লাকসাম ঐতিহ্য মণ্ডিত একটি স্থান। ভোগলিক অবস্থান, উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়নের দিক থেকে লাকসাম অনেক জেলা থেকেও এগিয়ে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা মোতাবেক কুমিল্লাকে বিভাগ করতে হলে আরও একটি জেলা বাস্তবায়ন জরুরি। লাকসাম জেলা বাস্তবায়নের মাধ্যমে কুমিল্লাকে বিভাগ ঘোষণা করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট বৃহত্তর লাকসামবাসীর পক্ষে দাবি জানাচ্ছি।