কঠোর লকডাউনেও আসছে ভারতীয় গরু

চলছে কঠোর লকডাউন। হাট বাজার থেকে শুরু করে পথ ঘাটে কমে গেছে মানুষের চলাচল। কিন্তু পঞ্চগড়ের সীমান্ত এলাকায় কমেনি চোরাচালান। বিজিবি চোখ ফাঁকি দিয়ে দিব্যি ভারতীয় গরু আনছেন চোরাকারবারিরা। কঠোর লকডাউনের মধ্যেও সীমান্ত এলাকায় সরব চোরকারবারি চক্র। গত কয়েক দিনে পঞ্চগড়ের সীমান্ত এলাকায় দিয়ে অবৈধ পথে আনা ৩৬টি গরু আটক করেছে পুলিশ।
গতকাল রবিবার রাতে তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ভূতিপুকুর সীমান্ত এলাকায় তসলিম উদ্দিন নামে এক চোরাকারবারির বাড়ি থেকে ২৭টি গরু আটক করে তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশ। এ সময় চোরাকারবারিরা পালিয়ে যায়। পরে গরুগুলো তেঁতুলিয়া মডেল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বর্তমানে গরুগুলো পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এ ঘটনায় তসলিমসহ কয়েকজন গরু চোরকারবারিকে আসামি করে থানায় চোরাচালানের অভিযোগে মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি আবু ছায়েম মিয়া।
এদিকে গত ৩ জুলাই পঞ্চগড় সদর উপজেলার অমরখানা সীমান্ত এলাকার মামুন নামে এক চোরকারবারির বাড়ি থেকে ভারত থেকে অবৈধ পথে আনা ৯টি ভারতীয় গরু উদ্ধার করে পুলিশ। ওই ঘটনাতেও পঞ্চগড় সদর থানায় একটি মামলা হয়েছে। তিন দিকে ভারতীয় সীমান্তবেষ্টিত জেলা পঞ্চগড়। জেলার সাথে ভারতের সীমান্ত রয়েছে ২৮৮ কিলোমিটার। এই সীমান্তের বেশ কিছু এলাকায় নেই কাঁটাতাদের বেড়া। আবার বেশির ভাগ সীমান্তেই রয়েছে অভিন্ন নদী। এই স্থানগুলোই চোরকারবারাদির পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
সীমান্তপাড়ের মানুষের সাথে কথা বলে জানা যায়, পঞ্চগড় সদর উপজেলার শিংরোড প্রধানপাড়া, নায়েকপাড়া, ভুজারিপাড়া, দক্ষিণপাড়া, ঘাগড়া, মোমিনপাড়া, জুলিপাড়া, বাঙালপাড়া, বড়দরগা, নালাগঞ্জ, বড়বাড়ি, অমরখানা, টোকাপাড়া, বোদা উপজেলার বড়শশী, পাহাড়িয়া, ধামেরঘাট, সুয়েরপাড়, বালাপাড়া, মালকাডাঙ্গা, সরদারপাড়া, কাজীপাড়া, ডাঙ্গাপাড়া, মহিষবাথান, নাওতারি, তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ভূতিপুকুর ও সরদারপাড়া, দেবনগর ইউনিয়নের শুকানি ও কালিয়ামনি, শালবাহান ইউনিয়নের পেদিয়াগছ, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শারিয়ালজোত, বড়বিল্লাহ, পুরাতন বাজার, সরদারপাড়া, তীরনইহাট ইউনিয়নের ভোকতিডাঙ্গী, ইসলামপুর ও রৌশনপুর, বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের দেবীভিটা, বন্দিভিটা, সরদারপাড়া, নারায়নজোত, চুতরাগছ, উকিতজোত, জাগিরজোত, কাশেমগঞ্জ ও বাংলাবান্ধা, আটোয়ারী উপজেলার ধামোর, তোড়িয়া, সোনাপাতিলা, গিরাগাঁও, বোদগাঁও সীমান্ত স্থানগুলো মাদক ও গরু চোরকারবারিদের রুট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
গোপন সূত্রে জানা যায়, অন্তত ৩০টি চোরকারবারি গ্রুপ সক্রিয় এসব সীমান্ত এলাকায়। ক্ষমতার দাপট দেখাতে তাদের কাছে রয়েছে অবৈধ অস্ত্রও। স্থান কাল আর পরিবেশ ভেদে একেক দিন এক এক স্থান ব্যবহার করা হয়। আর চোরাচালান দেওয়া নেওয়া চলে গভীর রাতে।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে সীমান্তে আমাদের জনবল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া আমরা সীমান্ত এলাকার মানুষদের সচেতন করার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। কিছু সীমান্ত এলাকা রয়েছে যেখানে কাঁটাতারের বেড়া নেই সেখানে চোরাকারবারিরা বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে সীমান্তে যাতায়াত করতে পারে। অনেক সময় গরু ও মাদক নিয়ে আসার সময় আমাদের হাতে আটকও হয়েছে। আমরা করোনা পরিস্থিতিতে সীমান্তে চোরাচালান শুন্যের দিকে নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছি। স্থানীয়দের সহযোগিতা পেলে আমরা শিগগিরই এটা বন্ধ করতে পারব।
পঞ্চগড় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেন, কঠোর লকডাউনের মধ্যেও কিছু গরু চোরাকারবারি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের চোরাকারবারিদের উপর নজরদারি বৃদ্ধি করেছি। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গত কয়েক দিনে ৩৬ টি ভারতীয় গরু উদ্ধার করতে পেরেছি। এছাড়া তারা যেন কোনভাবেই অবৈধ পথে আনা গরু পরিবহন করতে না পারে সেজন্য আমরা বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন করেছি।