English Version
আপডেট : ২৬ জুন, ২০২১ ১২:৩১

কঠোর লকডাউন: ভিড় বাড়ছে শিমুলিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে

অনলাইন ডেস্ক
কঠোর লকডাউন: ভিড় বাড়ছে শিমুলিয়া-পাটুরিয়া ঘাটে

সারাদেশে কঠোর লকডাউন ঘোষণার পর পরই ঢাকা ছাড়তে শুরু করা মানুষের ভিড় বেড়েছে মুন্সীগঞ্জের শিমুলিয়া ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে। সম্প্রতি সোমবার (২৬ জুন) থেকে আবারও সারা দেশে কঠোর লকডাউন জারি করেছে সরকার। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চলমান লগডাউন চলবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে সোমবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারাদেশে কঠোর লকডাউন জারি থাকবে- এমন নির্দেশনা আসার পর রাজধানী ছেড়ে যাচ্ছেন নানা পেশার মানুষ।

শনিবার (২৬ জুন) ভোর থেকেই দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের উদ্দেশ্যে যাত্রা করা মানুষের আনাগোনা বাড়ছে পদ্মার দুই ঘাটে। স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা না করে তারা গাদাগাদি করে ফেরিতে পাড়ি দিচ্ছেন পদ্মা নদী। শিমুলিয়া ঘাটে শনিবার ভোর থেকে যাত্রী, ব্যক্তিগত ও পণ্যবাহী গাড়ির চাপ বেড়েছে। সকাল ৮টার দিকে ফেরিতে উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে।

বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের টার্মিনাল সুপারিটেনডেন্ট মেহেদী হাসান জানান, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার নৌ রুটের ১৫টির মধ্যে ১৪টি ফেরিই চলাচল করছে।

তিনি বলেন, ‘লকডাউনের নিয়ম অনুযায়ী ফেরিতে শুধু রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স এবং জরুরি পণ্য পরিবহনের গাড়ি ছাড়া সব কিছু পারাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও ঘাটে ভিড় জমাচ্ছেন যাত্রীরা।’

শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থেকে ঢাকামুখী যাত্রী ব্যবসায়ী রাহাত আলম বলেন, ‘আমার বুকে ও ঘাড়ে ভীষণ ব্যথা। তাই বাধ্য হয়ে লকডাউনের মধ্যেও ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছি। গোসাইরহাট থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসতে আগে ১৫০ টাকা খরচ হতো। আর এখন সেখানে ৫০০ টাকা খরচ হয়ে গেছে। ঢাকায় যেতে আরও অন্তত ৩০০ টাকা লাগবে।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার জিল্লুর রহমান জানান, শনিবার সকাল ৯টার পর মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে শুরু করে। তিনি বলেন, ‘পদ্মায় ১৪টি ফেরি চলছে।ব্যক্তিগত যানবাহন ও পণ্যবাহী ট্রাকই শুধুমাত্র পারাপার করতে দেওয়া হচ্ছে। ঘাট এলাকায় এখনও কোনো যাত্রীবাহী বাস আমাদের নজরে আসেনি।তবে ঘাট এলাকায় প্রচুর সিএনজি অটোরিকশা রয়েছে।’

পাটুরিয়া ঘাটে বেশ ক’জন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লকডাউনের কারণে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাটে আসতে তাদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সিএনজি অটোরিকশায় গাবতলী বা সাভার থেকে আসতে তাদের ৪০০-৫০০ টাকা গুণতে হচ্ছে।

এদিকে উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকার প্রবেশপথ গাজীপুরে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (ট্রাফিক) উপ কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, জরুরি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ও জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন ছাড়া অন্য কোনো যানবাহনকে গাজীপুরের ভেতরে বা বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কে পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেটকার, অটোরিকশা চলাচল করছে।

সাভারের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর আব্দুস সালাম জানান, ঢাকা- আরিচা মহাসড়কে গ্রামমুখী মানুষের ঢল নেমেছে। মানিকগঞ্জ ও পাটুরিয়া থেকে যাত্রীবাহী মিনিবাস চলতে দেখা গেছে মহাসড়কে। তবে সেই বাসগুলোকে আমিনবাজারে থামিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমিনবাজার এলাকায় যানজট তৈরি হয় বলেও জানান তিনি। আব্দুস সালাম জানান, সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ, বিরুলিয়া, আশুলিয়া ব্রিজ ও জিরাবো বাজার এলাকাতেও গ্রামমুখী মানুষের ভিড় রয়েছে। পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে কঠোর নজরদারি রাখছে।

এছাড়া ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে গত দুই দিনের তুলনায় নাগরিকদের চলাচল বেড়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে ‍পুলিশ সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন।

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন জানিয়েছেন, আপাতত এক সপ্তাহের জন্য কঠোর লকডাউন কার্যকর করা হচ্ছে। পরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এটা বাড়ানো হতে পারে।এ সময় জরুরি পরিসেবা ছাড়া সব সরকারি-বেসরকারি অফিস, দোকানপাট ও শপিংমল বন্ধ থাকবে। জরুরি পণ্যবাহী যান ব্যতীত সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে শুধু যানবাহন চলাচল করতে পারবে। লকডাউনের সময় জরুরি কারণ ছাড়া বাড়ির বাইরে কেউ বের হতে পারবেন না। তবে গণমাধ্যম লকডাউনের আওতা বহির্ভূত থাকবে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে ‘বৈশ্বিক মহামারি’ হিসেবে ঘোষণা করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের বিস্তারের মুখে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে সীমান্তবর্তী জেলাগুলো সহ ৪০টি জেলা। বিভিন্ন জেলায় এলাকাভিত্তিক লক ডাউন রয়েছে। রাজধানী ঢাকাকে বিচ্ছিন্ন করতে চারপাশের জেলাগুলোতেও লক ডাউন দেয়া হয়েছে। এখন জাতীয় পরামর্শক কমিটির সম্পূর্ণ শাট ডাউন দেয়ার সুপারিশের ভিত্তিতে সারাদেশে আবার সবকিছু বন্ধ করে দেয়ার কথা বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। কিন্তু লক ডাউন বা কঠোর লক ডাউন-এমন বিভিন্ন শব্দের ব্যবহার করেও সিদ্ধান্ত যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় মানুষকে ঘরে রাখা যায়নি বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।