সীমান্তের জেলায় করোনায় ৯ দিনে ৩৬ জনের মৃত্যু: ঝুঁকিতে বগুড়া জেলা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণে বগুড়ায় দিনদিন পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। মৃত্যু ও আক্রান্ত সংখ্যা বেড়েই চলেছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সংখ্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সীমান্ত জেলার রোগী বগুড়ায় চিকিৎসা নেওয়ার কারণে পরিস্থিতির অবনতি হয়ে আরও ঝুঁকি বেড়েছে। সরকারি হিসেব বলছে, গত ৯ দিনে ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়ায়।
জানা যায়, উত্তরের জেলার মধ্যে বগুড়া অন্যতম জেলা হওয়ার কারণে চিকিৎসায় সেবা ও সুযোগ পাওয়া যায় বেশি বলে সীমান্ত এলাকার জয়পুরহাট, নওগাঁ, রাজশাহী ও নাটোর জেলার বেশ কিছু রোগী আসছে বগুড়ায় চিকিৎসা নিতে। রোগী আসতে থাকায় বগুড়ায় মৃত্যু ও আক্রান্ত সংখ্যা বেড়েই চলেছে। করোনা রোগী বেড়ে যাওয়ায় বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল ও বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান হাসপাতালে রোগীর চাপে বেডও সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
বগুড়ায় রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম আসছে ইচ্ছে মত। দিনাজপুরের লিচু আসছে। ঠাকুরগাঁও থেকে আসছে আম। জয়পুরহাট সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করছে পিঁয়াজ। আসছে ট্রাক সঙ্গে মানুষও। তাদের করোনা টেস্ট করা হচ্ছে না। জেলা পর্যায়ের ট্রাক, মালবাহী পরিবহন চলাচল করছে দেদারছে। যদিও বগুড়ায় অ্যান্টিজেন (আধা ঘণ্টায় করোনার ফলাফল প্রদান করা যায়) পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। সেটিও ব্যবহার করা যেতে পারে। বগুড়া সীমানায় উপসর্গ আছে এমন ব্যক্তিদের অ্যান্টিজেন পরীক্ষা শুরু হলে স্বাস্থ্যবিধির নিশ্চয়তা বাড়বে। বগুড়া সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে বগুড়ায় অ্যান্টিজেন থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল (শজিমেক) সূত্রে জানা গেছে, করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে দেশের সীমান্ত জেলা নওগাঁ, নাটোর, রাজশাহী ও জয়পুরহাটের বাসিন্দা ভর্তি হচ্ছে। ১৩ জুন টিএমএসএস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নওগাঁর জেলার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান। ১১ জুন জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক (৭৫)। ১০ জুন বগুড়া সদরের সেলিনা সুলতানা (৫৩), নাটোর সদরের আব্দুল খালেক (৬০) এবং জয়পুরহাট জেলার কালাই এলাকার সায়েদ আলী (৩৮)। ৮ জুন রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার হামিদুর রহমান (৬০) বগুড়ায় মারা যান। এছাড়া গত ৯ দিনে ৩৬ জনের মধ্যে বগুড়ার ১৪জন, নওগাঁর ৭ জন, জয়পুরহাটের ১৩ জন এবং গাইবান্ধা ও নাটোর জেলার একজন করে মারা গেছেন।
বগুড়ার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ১৫ জুন বগুড়ায় ৪ জন মারা যান। এর মধ্যে একজন সাতক্ষীরা জেলার বাসিন্দা ও দুইজন জয়পুরহাট জেলার বাসিন্দা। এরপর সর্বশেষ গত ২৪ ঘণ্টায় (২৩ জুন) মারা গেছেন ৮ জন। মৃতরা হলেন- বগুড়া সদরের সেতারা বেগম (৭৮) ও আবুল কালাম আজাদ (৭৪), জয়পুরহাটের হাসনা বেগম (৬৫), লুৎফর রহমান (৬৫) মামুন সরদার (৪৫) আহাদ আলী (৭৫) ও নূর জাহান (৩০) এবং নওগাঁর রিয়াজ উদ্দীন (৬০)। আর একই দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৯৮ জন। এ পর্যন্ত জেলায় মোট করোনায় আক্রান্ত হলেন ১৩ হাজার ১৫২ জন এবং সুস্থতার সংখ্যা ১২ হাজার ২৯৮ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া নতুন করে ৮ জনের মৃত্যু নিয়ে জেলায় মোট মৃত্যু হলো ৩৬৫ জনের।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, হাসপাতালে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। যতটা সম্ভব চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু এভাবে বাড়তে থাকলে চিকিৎসা সেবা প্রদান ব্যাহত হতে পারে। সীমান্ত জেলার রোগী এখন বেশি পাওয়া যাচ্ছে। আগে সীমান্ত এলাকার রোগী খুবই কম আসতো। কিন্তু এখন আসছে তিনগুণ।
বগুড়া সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সামির হোসেন মিশু জানান, সীমান্ত জেলার কিছু রোগী বগুড়ায় চিকিৎসা নিচ্ছে। রোগীর স্বজনদেরও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোগী চিকিৎসা নিতে আসলে বগুড়ার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য-কর্মীরা সেবা প্রদান করে যাবে।