English Version
আপডেট : ৭ জুন, ২০২১ ১৩:৩০

জীবানুনাশকের ফেরিওয়ালা আকাশ

অনলাইন ডেস্ক
জীবানুনাশকের ফেরিওয়ালা আকাশ

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকেই শহরের ঘর-বাড়ি, হাসপাতাল, ক্লিনিক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিসে জীবাণুনাশক ছিটিয়ে যাচ্ছেন পান দোকানি অসিত কুমার সরকার আকাশ। সম্পূর্ণ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে তিনি ১৮ লিটারের জীবাণুনাশক যন্ত্র কাঁধে নিয়ে ছুটছেন সকাল-সন্ধ্যা। জীবাণুনাশক ছিটানো তার নেশায় পরিণত হওয়ায় তাকে এখন ‘স্প্রে আকাশ’ নামেই ডাকেন এলাকাবাসী। অনেকেই ডাকে জীবানুনাশকের ফেরিওয়ালা বলে। আকাশ শহরের বঙ্গজ্বলের বাসিন্দা।

মানুষের জীবনকে বিপদমুক্ত ও স্বচ্ছন্দ করার জন্য সচেষ্ট অসিত সরকার আকাশের বয়স ৩৫ বছর। পেশায় পান দোকানদার আকাশের নাটোর রাজবাড়ীতে "রঙিলা পানের দোকান" নামে একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল । কিন্তু করোনাভাইরাসের লকডাউনে ব্যবসা বন্ধ হওয়ার পর থেকে কর্মহীন আকাশ মনোযন্ত্রণার আপন তাগিদে জনসচেতনতার সৃষ্টির জন্য শহরের অফিস আদালত, বাসাবাড়ি, হাট-বাজার, বিপনিবিতানসহ শহরময় জীবানুনাশক স্প্রে ছিটানোর পরিকল্পনা নেন। 

প্রথমে নিজেকে সুরক্ষিত রাখার ভাবনা থেকে গত ১ মার্চ জীবাণুনাশক ছিটানোর যন্ত্র ক্রয় করি। এক বন্ধুর কাছ থেকে ধার নেয়া  ভাঙ্গা সাইকেল,ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম পিপিই,সাউন্ড বক্স এবং স্প্রে মেশিন কিনে ব্যক্তি উদ্যোগে তিনি এই সেবা প্রদান শুরু করেন। পাশাপাশি চলতে থাকে পথচারীদের হাতে হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার স্প্রে করার কাজ। শহরের সচেতনমহল আকাশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। শহরবাসীর কাছে পরিচিতি পায়, জীবানুনাশকের ফেরিওয়ালা বলে। সংকটের সময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো তো সবার কর্তব্য। আমি আমার দায়িত্বটুকু পালন করেছি মাত্র। মানুষের উৎসাহে উদয়াস্ত স্প্রে করা শুরু করেন আকাশ। ফলে ব্যবসার যেটুকু পূঁজি ছিল  সেটাও শেষ হয়ে যায় জীবানুনাশক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিনতে গিয়ে। একই দিন নিজের ঘর ও আশপাশের রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটাই। পরে এলাকার অন্যদের কথা চিন্তা করে শুরু করি স্প্রে কার্যক্রম। সেই থেকে আজ অবধি স্প্রে করে যাচ্ছি।তিনি আরও বলেন,  ‘মানুষের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকেই জীবাণুনাশক ছিটানোর এই উদ্যোগ গ্রহণ করি। চারপাশের পরিবেশ, রাস্তাঘাট, সরকারি-বেসরকারি অফিস, পাড়া-মহল্লা, হাসপাতাল-ক্লিনিক, ধর্মীয়স্থান, রিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেলসহ সব জায়গাই যেন জীবাণুমুক্ত থাকে সেজন্যই আমি এই কাজ করে যাচ্ছি।’

স্বেচ্ছাসেবক আকাশ জানান, করোনার প্রকোপ শুরু হওয়ার সাথে সাথে জীবানুনাশক ক্রয় করে স্প্রে ও সচেতনতামূলক প্রচারণার কাজ শুরু করেন। প্রতিদিন ৮০-১০০ লিটার জীবানুনাশক তিনি শহরের বিভিন্ন স্থানে ছিটিয়ে থাকেন। প্রথম দিকে একজনের কাছ থেকে ধার করা সাইকেলে সাউন্ডবক্স লাগিয়ে পুরো শহরে সেবা দিতেন। কিন্তু বর্তমানে সাইকেল না থাকায় হেঁটেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া স্প্রে করার সময় অনেকে বিরক্ত হয়ে তাকে গালিগালাজও করেছেন। আবার উৎসাহও দিয়েছেন অনেকে। মানুষকে করোনা-১৯ ভাইরাস নিয়ে সচেতন করতে গিয়ে মানুষের তিরস্কার আর কটু কথার মুখোমুখি হতে হয় আকাশকে। 

আকাশ জানান, অনেকেই বিশ্বাস করেন না আমি নিজের পকেটের টাকা দিয়ে এসব করছি । একটা মানুষ এমন কাজ করতে পারে তা বিশ্বাস করে না। ভালো কাজ করলে এমন সমালোচনার ভেতর দিয়ে যেতে হবে। তাই এটার দিকে আমি দৃষ্টি দিই না।