English Version
আপডেট : ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১১:২৬

এবার নওফেল ও নাছির অনুসারীদের 'ভোটযুদ্ধ'

অনলাইন ডেস্ক
এবার নওফেল ও নাছির অনুসারীদের 'ভোটযুদ্ধ'

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্যানেল মেয়র নির্বাচনের পালা এবার। মেয়র ও কাউন্সিলররা দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম সাধারণ সভায় তিন সদস্যের এই প্যানেল নির্বাচিত হবে।

এই পদ পেতে সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ৫৪ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ডজনখানেক এর মধ্যেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারীরা প্যানেলে জায়গা করে নিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে নামতে যাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

নাছির উদ্দীন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। আর একই কমিটির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হলেন নওফেল। তিনি দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

দলীয় নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানায়, এবার প্যানেল মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে। আগে এই তিনটি পদে হাতে গোনা কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলেও এবার সবচেয়ে বেশি হবে এই পদপ্রত্যাশী।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, সাধারণ ওয়ার্ড থেকে দুজনের বেশি এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ড থেকে একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বী থাকলে গোপন ব্যালটে তিনজনকে নির্বাচিত করা হবে। ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন ৪০টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত ৫৪ জন কাউন্সিলর।

৩১ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদপ্রার্থী তারেক সোলেমান সেলিমের মৃত্যুর কারণে এ ওয়ার্ডে স্থগিত হওয়া ভোটগ্রহণ হবে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি।

আগামী ১১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১১টায় নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে। নবনির্বাচিত মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীকে ভার্চুয়ালি গণভবন থেকে শপথবাক্য পাঠ করাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের শপথবাক্য পাঠ করাবেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

জানা যায়, ১১ ফেব্রুয়ারি শপথগ্রহণের পর মেয়র ও কাউন্সিলররা প্রথমে ধানমণ্ডিতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করবেন। পরদিন ১২ ফেব্রুয়ারি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য যাবেন। সেখান থেকে চট্টগ্রাম ফিরে ১৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে করপোরেশনের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তাঁরা।

জানতে চাইলে মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী গতকাল শনিবার দুপুরে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর যথাযথ নিয়ম ও প্রক্রিয়ায় নবনির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে তিন সদস্যবিশিষ্ট প্যানেল মেয়র গঠন করা হবে।’

গত ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ষষ্ঠ নির্বাচনে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রেজাউল। আর ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের মধ্যে ৪০টির নির্বাচনে সব কটিতেও দলটির সমর্থন পাওয়া ও ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী। এর মধ্যে আটজনই ‘বিদ্রোহী’। ১৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মধ্যে একজন বিদ্রোহী প্রার্থী ছাড়া বাকি ১৩ জনই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগ নেতা ও নির্বাচিত কাউন্সিলরদের মধ্যে কয়েকজন জানান, এবার নির্বাচিত কাউন্সিলরের মধ্যে বেশির ভাগ সাবেক মেয়র প্রয়াত এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর বড় ছেলে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। আর ডজনখানেক কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন, যাঁরা নাছির উদ্দীনের অনুসারী সাবেক কাউন্সিলর। এবার দল সমর্থিত বেশির ভাগ কাউন্সিলর পদপ্রার্থীও ছিলেন নওফেলের অনুসারী। ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিজয়ী কাউন্সিলরদের বেশির ভাগ ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র নাছির উদ্দীনের অনুসারী।

পঞ্চম ওই পরিষদে প্যানেল মেয়র নির্বাচনে নাছিরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত দেওয়ান বাজার ওয়ার্ডের কাউন্সিলর চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনি, উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ডের নিছার উদ্দিন আহমেদ ও ২ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জোবাইরা নার্গিস খান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এই তিনজন এবারও কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

এবারের প্যানেল মেয়র নির্বাচনেও ওই তিনজনের পাশাপাশি নওফেল ও নাছিরের অনুসারী আরো অনেকের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে আছেন আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের চারবারের কাউন্সিলর নগর আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক জহরলাল হাজারী; উত্তর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে টানা দুইবারের কাউন্সিলর ও দলের নগর কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ জাবেদ; রামপুর ওয়ার্ডের দুইবারের কাউন্সিলর দলের ওয়ার্ড শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সবুর লিটন; বাগমনিরাম ওয়ার্ডে পাঁচবারের কাউন্সিলর দলের ওয়ার্ড সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন; চকবাজার ওয়ার্ড থেকে ছয়বারের কাউন্সিলর সাইয়েদ গোলাম হায়দার মিন্টু; জামালখান ওয়ার্ডের দুইবারের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন; ২০, ৩০ ও ৩১ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের দুইবারের কাউন্সিলর ও নগর মহিলা লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নীলু নাগ; ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গি বাজার ওয়ার্ডের দুইবারের কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা হাসান মুরাদ বিপ্লব; ২৭, ৩৭ ও ৩৮ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের একাধিকবার নির্বাচিত আফরোজা জহুর (আফরোজা কালাম)।

এ ছাড়া আরো কয়েকজন স্বতন্ত্রভাবে প্যানেল মেয়র পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা এরই মধ্যে কাউন্সিলরদের কাছে ভোট চাইতে শুরু করেছেন।

জহরলাল হাজারী, নিছার উদ্দিন আহমেদ, আবদুস সবুর লিটন, মোহাম্মদ জাবেদ, শৈবাল দাশ সুমন ও জোবাইরা নার্গিস খান কালের কণ্ঠকে বলেছেন, তাঁরা প্যানেল মেয়র পদে নির্বাচন করবেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীরা নির্বাচিত কাউন্সিলরদের বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন। ব্যক্তিগতভাবে ও কয়েকজন মিলে বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠক করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের বিভিন্ন পদে থাকা অন্তত ১২ জন দফায় দফায় রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পাশাপাশি সংগঠনের স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মাধ্যমে লবিং শুরু করেছেন।