English Version
আপডেট : ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ১৯:৪০

সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ নিধনে চলছে মহোৎসব

অনলাইন ডেস্ক
সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ নিধনে চলছে মহোৎসব

বাগেরহাটে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগে বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণী হত্যার পাশাপাশি মহোৎসব চলছে খালে বিষ দিয়ে মাছসহ জলজপ্রাণী নিধনে। গত ৬ মাসে সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণ কালে ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে বন বিভাগ। পালিয়ে গেছে ২৮ জন।

এসময় জব্দ করা হয়েছে ২৫ বোতল বিষ, বিভিন্ন প্রকারের ৭টি জাল, ২টি খালপাটা ও ১০টি নৌকাসহ বিষ দিয়ে আহরিত প্রায় ৭৭ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়িসহ সাদা মাছ। বন বিভাগের দেয়া এসব তথ্য সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জের মধ্যে শুধুমাত্র চাঁদপাই রেঞ্জের।

সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জের মধ্যে চাঁদপাই রেঞ্জে মাত্র ৬ মাসে বিষ দিয়ে মাছ আহরণের ভয়াবহ চিত্রই বলে দিচ্ছে ম্যানগ্রোভ এই বনের মাছসহ জলজ প্রাণীকূলের বর্তমান অবস্থা  খালে বিষ দিয়ে মাছ আহরণের ফলে সুন্দরবনের মৎস্য ভাণ্ডার মাছশূন্য হয়ে পড়ার পাশাপশি খালে পানির বিষ বনের যেসব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে সেসব বন এলাকার জীববৈচিত্র্যের ওপরও মারাত্বক প্রভাব পড়ছে। ছোট-বড় সব প্রজাতির মাছ মারা যাওয়ার পাশাপাশি মারা পড়ছে রফতানি পণ্য বিশ্বখ্যাত শিলা কাঁকড়াসহ অন্যসব জলজ প্রাণী।

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪.১ বর্গ কিলোমিটার। যা সমগ্র সুন্দরবনের ৩১.১৫ ভাগ। সুন্দরবন ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইডের পাশাপাশি বিশ্বের বৃহৎ জলাভূমিও। ১৯৯২ সালে সমগ্র সুন্দরবনের এই জলভাগকে রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘ।

এছাড়া সুন্দরবনের সমুদ্র এলাকার পরিমাণ ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ২ বর্গ কিলোমিটার। এই জল ভাগে ছোট বড় ৪৫০টি ছোট-বড় নদী ও খালে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৪ প্রজাতির চিংড়ি, ১৪ প্রজাতির কাঁকড়া, ৪৩ প্রজাতির মলাস্কা ও ১ প্রজাতির লবস্টার।

সুন্দরবনের এই বিশাল জলভাগের মধ্যে ৩টি ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড ছাড়াও ৩টি ডলফিনের অভয়ারণ্য ও ১৮টি খাল মৎস্য ও মৎস্য প্রজাতির অবাধ প্রজনন এবং সংরক্ষণের জন্য মাছসহ জলজপ্রাণী শিকার নিষিদ্ধ। এখন এসব নিষিদ্ধ এলাকা থেকেও মাছ আহরণের খবর মিলছে।

সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারপাসন ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, সুন্দরবনের শুধু চাঁদপাই রেঞ্জেই নয়, অন্য ৩টি রেঞ্জেও অবাধে খালে বিষ দিয়ে মাছ অহরণ করা হচ্ছে। গত এক বছর ধরে দিনকে দিন সুন্দরবনে বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণী হত্যার পাশাপাশি চলছে খালে বিষ দিয়ে মাছসহ জলজপ্রাণী নিধনের মহোৎসব। দুর্বল বন ব্যবস্থাপনাসহ বন আইনে এসব অপরাধ জামিনযোগ্য হওয়ার পাশাপাশি এক শ্রেণির অসাধু বন কর্মকর্তা অতি লোভের কারণে সুন্দরবন এখন সংকটে পড়েছে। 

ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড এই ম্যানগ্রোভ বনসহ রামসার এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি বিশ্বের বৃহৎ জলাভূমির জীববৈচিত্র্য রক্ষায় এখন সময় এসেছে বন ব্যবস্থাপনা ঢেলে সাজানো। বাড়াতে হবে কর্মকর্তা-বনরক্ষীর সংখ্যা। বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণী হত্যার পাশাপাশি মাছসহ জলজপ্রাণী নিধনে বিষ সন্ত্রাসসহ পরিকল্পিতভাবে বনে আগুন লাগানো দস্যুদের রুখতে জামিন অযোগ্য কঠোর বন আইন করে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন মুঠোফোনে বলেন, প্রতি বছর সুন্দরবনের এই বিশাল জলভাগ থেকে আহরিত হয় ৪ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। বন বিভাগের দুর্বল নজরদারীর ফলে এক শ্রেণির জেলে বৈধ-অবৈধ পথে সুন্দরবনে ঢুকে অধিক লাভের আশায় ম্যানগ্রোভ এই বনের খালে বিষ দিয়ে মাছ আহরণ করে আসছে।

১২ জুলাই থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত শুধুমাত্র বাগেরহাটে পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের বাক্সের খাল, ইসাকের খাল, অফিস খাল, হুলার খাল, খালেকের খাল, মৃগামারী খাল, নলবুনিয়া খাল, চাড়াখালী খাল, শেলা সাইট খাল ও ঝাপসী খাল থেকে বিষ দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণকালে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময়ে পালিয়ে গেছে ২৮ জন। এছাড়া ২৫ বোতল বিষ, বিভিন্ন প্রকারের ৭টি জাল, ২টি খালপাটা ও ১০টি নৌকাসহ বিষ দিয়ে আহরিত প্রায় ৭৭ কেজি বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়িসহ সাদা মাছ জব্দ করা হয়েছে। সুন্দরবনে ‘বিষ সন্ত্রাস’ রুখতে বন বিভাগ তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।