English Version
আপডেট : ১২ জানুয়ারি, ২০২১ ১২:১৭

আপন বলতে কেউ নেই, হাসপাতালই ঠিকানা বৃদ্ধা পারভীনের!

অনলাইন ডেস্ক
আপন বলতে কেউ নেই, হাসপাতালই ঠিকানা বৃদ্ধা পারভীনের!

হাসপাতালের মেঝেতে কম্বল গায়ে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছেন। অন্য আরেকদিন এসে কথা বলবো কি-না এ নিয়ে সঙ্গে থাকা সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করতেই নড়েচড়ে উঠলেন। কেমন আছেন জানতে চাইতেই বৃদ্ধার চোখে পানি। হাউমাউ করে কী যেন বলতে চাইলেন। একটু কাছে গিয়ে কথা শুনে নিশ্চিত হওয়া গেল হাসপাতালই তার ঠিকানা।

বৃদ্ধার নাম পারভীন আক্তার। বয়স সত্তরের উপরে হবে বলে ধারণা পাওয়া যায়। আপন বলতে এই পৃথিবীতে কেউ নেই। অনেক বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর তিনি একা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলায় নারীদের ওয়ার্ডের মেঝেতে ঠাঁয় হয়েছে পারভীন আক্তারের। বয়সের ভারে যেসব সমস্যা থাকে সেগুলোর লক্ষণ আছে শরীরে। তবে তিনি রোগী নন। তবুও হাসপাতালে ঠাঁই নিয়েছেন শুধু থাকা আর ভাতের নিশ্চয়তায়।

সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই বৃদ্ধা মাস তিনেকের মতো হাসপাতালে থেকে গেছেন। তবে এক সময় হাসপাতাল ছাড়তে হয়। গত ৬ জানুয়ারি আবার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। রোগীর চাপ থাকায় মেঝেতে রাখা হয়েছে বৃদ্ধা পারভীন আক্তারকে। তবে অন্যান্য রোগীদের মতোই তিন বেলা নিয়মিত খাবার দেয়া হচ্ছে তাকে।

অস্পষ্ট ভাষায় পারভীন আক্তার জানান, সহায় সম্পদ কিংবা স্বজন কেউ নেই। আখাউড়ার খড়মপুর এলাকায় থাকতেন। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে সুযোগ মতো কাজ করতেন। এখন আর পারেন না। শক্তিতে কুলায় না। তাই কয়েক মাস আগে হাসপাতালে চলে আসেন। কিছুদিনের জন্য বাইরে গিয়ে আবার এসেছেন। এখানে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে বলে থেকে যেতে চান।

হাসপাতালে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স রিজিয়া আক্তার বলেন, 'ওই নারী কোমরে ব্যথার জন্য দুইটা ওষুধ খায়। তবে ওনার তেমন কোনো সমস্যা নেই। থাকা আর খাওয়ার নিশ্চয়তার জন্য তিনি এর আগেও হাসপাতালে কয়েক মাস থেকে গেছেন।'

আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার শ্যামল কুমার ভৌমিক বলেন, 'ওই নারীর তেমন কোনো সমস্যা নেই। তিনি মূলত থাকা খাওয়ার জন্যই আগে কয়েক মাস টানা হাসপাতালে ছিলেন'। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, উদ্বাস্তু হিসেবে কাউকে হাসপাতালে রাখার নিয়ম নেই। তবে ওই নারী রোগী হিসেবেই ভর্তি আছেন।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাশেদুর রহমান বলেন, 'রেলওয়ে জংশন হওয়ায় ও মাজার শরীফ থাকায় এখানে মাঝে মাঝে এ ধরণের লোক আসে যাদের পরিচয় পাওয়া যায় না। ওই নারীরও পরিচয় পাওয়া যায়নি। তবে তিনি তেমন অসুস্থ নন। মূলত থাকা খাওয়া নিশ্চিত করতেই তিনি এখানে আছেন। আমাদের পক্ষ থেকে ওই নারীকে সব ধরণের সেবা দেয়া হচ্ছে।'