স্বামীর ভাগিনাকে বিয়ে, শিক্ষিকার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা
কক্সবাজারের রামুতে বিয়ে কার্যকর থাকার পরও স্বামীর ভাগিনাকে বিয়ে এবং স্ট্যাম্প জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া তালাকনামা সম্পাদনের মামলায় স্কুলশিক্ষিকা শামীমা আক্তারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। শামীমা আক্তার (৩৩) রামুর জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের ঘোনারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা এবং পেকুয়া উপজেলার পূর্ব গোয়াখালী এলাকার জাফর আহমদের মেয়ে।
জানা গেছে, দ্বিতীয় বিয়ে কার্যকর থাকার পরও স্বামীর ভাগিনাকে বিয়ে এবং স্ট্যাম্প জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া তালাকনামা সম্পাদনের অভিযোগে শিক্ষিকা শামীমা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করেন দ্বিতীয় স্বামী চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার দক্ষিণ জলদি গ্রামের বাসিন্দা রশিদ আহমদ। গত ১০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, আমলি আদালত-০২ এ মামলা (নং ১৪৯৫/২০২০) দায়ের করা হয়। আদালতের নির্দেশে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো এর ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন গত ১০ নভেম্বর মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেন। এতে বিয়ে কার্যকর থাকার পরও স্বামীর ভাগিনাকে বিয়ে করা এবং স্ট্যাম্প জালিয়াতির সত্যতা পাওয়ায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হোসেন মোহাম্মদ রেজা গত ২২ ডিসেম্বর শামীমা আক্তারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনবার বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন শামীমা আক্তার। অভিযুক্ত শামীমা আকতার ২০০৯ সালে রাশেদুল ইসলাম নামে যুবককে বিয়ে করেন। ওই সংসারে জমজ কন্যা সন্তান থাকা সত্ত্বেও পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে ২০১২ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি তাদের বিচ্ছেদ হয়। ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর দ্বিতীয়বারের মতো রশিদ আহমদকে বিয়ে করেন তিনি। কর্মস্থল রামুতে হওয়ায় সেখানে ভাড়া বাসা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী বসবাস শুরু করেন। একপর্যায়ে রশিদ আহমদ প্রবাসে চলে যান। প্রবাস থেকে আসা যাওয়ায় তাদের সংসার ঠিকঠাক চলছিল। রশিদ আহমদ তার স্ত্রী শামীমার নামে কক্সবাজারের ঝিলংজায় জমিও ক্রয় করেন। এছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে স্বামীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকাও হাতিয়ে নিতেন। রশিদ আহমদ প্রবাসে থাকাকালে জরুরি প্রয়োজনে শামীমার দেখাশোনা করতেন তার ভাগিনা জাকির হোসেন। দেখাশোনার একপর্যায়ে রশিদের ভাগিনা জাকিরের সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন শামীমা। জাকির হোসেন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার জলদি রঙ্গিয়াঘোনা এলাকার মোস্তাক আহমদের ছেলে।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বিতীয় স্বামী রশিদ আহমদের বিয়ে বৈধ থাকার পরও ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি শামীমা জাকির হোসেনকে বিয়ে করেন। শামীমা এবং তার তৃতীয় স্বামী জাকির উভয়ে তাদের বিয়ে বৈধ করার লক্ষ্যে একটি ভুয়া তালাকনামা সৃজন করে। ওই তালাকমানায় ব্যবহৃত দুটি ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে তালাকের তারিখ উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর। বাদী রশিদ আহমদ বিষয়টি সন্দেহজনক মনে করে চট্টগ্রাম ট্রেজারি অফিসে সন্ধান চেয়ে জানতে পারেন, স্ট্যাম্প দুটি চট্টগ্রাম ট্রেজারি থেকে সরবরাহ করা হয়েছে ২০১৭ সালের ২০ জুন। অর্থাৎ স্ট্যাম্প সৃষ্টি বা বাজারে আসার আগেই তালাকনামা সৃষ্টি করা হয়েছে। যা প্রতারণামূলক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এরই প্রেক্ষিতে আদালত শামীমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
এছাড়াও তদন্ত প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে- শামীমা আক্তার দ্বিতীয় স্বামী রশিদ আহমদের কাছ থেকে কৌশলে নগদ ও বিকাশের মাধ্যমে বিপুল টাকা গ্রহণ করতেন। যা এরআগে দায়েরকৃত সিআর মামলার (নং ৯৭/২০১৯) প্রেক্ষিতে সিআইডি’র দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে। মামলার বাদী রশিদ আহমদ জানিয়েছেন, শামীমা আক্তারের ফাঁদে পড়ে অনেক পুরুষ নিঃস্ব হয়েছেন। বিয়ের নামে তিনি তার কাছ থেকে জমি, বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। সর্বশেষ তার আপন ভাগিনাকে বিয়ে করায় তিনি সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হচ্ছেন।