দিনাজপুরে জমে উঠতে শুরু করেছে কোরবানীর পশুর হাট

আসন্ন ঈদ-উল-আযাহাকে সামনে রেখে দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলার পশুর হাটগুলো মোটামুটি জমে উঠেছে। তবে ক্রেতা সমাগম কম হওয়ায় কোরবানীর পশু বেচাকেনা পুরোপুরি জমে উঠেনি।
একাধিক কোরবানীর গরু ক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোরবানী ঈদের আরও প্রায় এক সপ্তাহ সময় হাতে থাকায় এখনই তারা গরু ক্রয় করছেন না। কারণ হিসেবে জানা যায়, বর্তমানে গরুর দাম একটু চড়া এছাড়া আগে গরু কিনে রাখলে লালন পালন করা অনেকেই ঝামেলা মনে করেন। ফলে ঈদের ২/৩ তিন আগে গরু কিনতে আগ্রহী ক্রেতারা। বাজারে বিদেশি গরুর চেয়ে দেশি গরুর কদর বেশি থাকলেও ভারতীয় গরুও চোখে পড়ার মতো।
দিনাজপুর সদর উপজেলার রেল বাজার, গোপালগঞ্জ, রানীগঞ্জ, খসালডাঙ্গী, পাচবাড়ী, গোয়াল হাট, ফাসিলাডাঙ্গা, কমলপুর, খানপুর ও সাহেবডাঙ্গাসহ বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারগুলো ঘুরে দেখা যায়, খামারীরা কোরবানী ঈদে বিক্রির জন্য তাদের পালিত গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া হাটে নিয়ে আসছেন।
কাহারোল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের খামারী আব্দুল হালিম জানান, কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে তিনি ২৫টি গরু বিক্রয়ের জন্য প্রস্তুত করেছেন। গরুগুলো আগামী শনিবার কাহারোল হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে আসবেন।
তিনি আরও বলেন, ২৫টি গরুর আনুমানিক মূল্য ১৫ লাখ টাকা। ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারলে সব খরচ বাদ দিয়ে ৩ লক্ষাধিক টাকা লাভ হবে।
শহরের দপ্তরীপাড়ার গরু খামারী মো. তৈমুর আলী জানান, তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে মোট ৯টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে ২টি ষাঁড় গরু এই ঈদে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেছেন। তিনি জানান, গত তিন বছর লালন-পালন করে প্রতিটি গরুর ৭০/৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করার আশা পোষণ করছেন। গরু দুটি ও দামে বিক্রি হলে খরচ বাদে ৬০ হাজার টাকার ওপরে লাভ হবে।
সরেজমিনে কাহারোল উপজেলার কয়েকটি কোরবানীর পশুর হাটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওই উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ মিলে ১৪ হাজার ৮শ ৩৮টি কোরবানীর পশু প্রস্তুত করেছেন খামারীরা। যা ওই উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী করা সম্ভব হবে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এবার এই উপজেলায় ৭ হাজার ৪০৩টি পশু কোরবানীর লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রস্তুত হয়েছে ৭ হাজার ৪৩৫টি পশু। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর কোরবানী কিছুটা বেশি হবে বলে ধারণা তাদের।
জানা যায়, উপজেলার কাহারোল হাট ও ১৩ মাইল গড়েয়া হাট, জয়নন্দ হাটে কোরবানীর পশু বিক্রির ব্যবস্থা করেছেন উপজেলা প্রশাসন। উপজেলায় ছোট বড় মিলে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়ার ৬৫টি খামার রয়েছে। ষাড় গরু রয়েছে ৬ হাজার ৬৭৪টি, বলদ ৮৩০টি, গাভী রয়েছে ১৩শ ২৯টি ও ছাগল ৫ হাজার ৮১৫টি, ভেড়া ১৯০টি।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুস সালাম জানান, উপজেলায় ৩শ ৪৫টি স্থানে এবার কোরবানীর পশু জবাই করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগে থেকেই কাহারোল হাট-বাজারটি সপ্তাহে প্রতি শনিবার সর্ববৃহৎ বাজার হিসেবে পরিচিত। ফলে সপ্তাহে প্রতি শনিবার এই হাটে প্রচুর পরিমাণে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রি হয়। এটি জেলার সর্ববৃহৎ বাজার হওয়ায় এখানে ঢাকা, সিলেট, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, নোয়াখালী, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু ব্যবসায়ীরা এই হাটে আসেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সালাম জানান, প্রাণিসম্পদ বিভাগ কর্তৃক প্রতিটি হাট-বাজারের জন্য মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিম গরু, ছাগল কোন রোগে আক্রান্ত হয়েছে কি না তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। স্বাস্থ্য সম্মত গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ক্রয়ের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধির পরামর্শ দিচ্ছেন।