English Version
আপডেট : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ১২:৩৮
সূত্র:

আখাউড়ায় তিতাস নদী খননে অনিয়ম

আখাউড়ায় তিতাস নদী খননে অনিয়ম

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় তিতাস নদী খনন কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বস্তুত নদী খননের নামে সরকারি কোটি কোটি টাকা লুটপাটের মহোৎসব চলছে। যেনতেন ভাবে ও ব্যাপক কারচুপির মধ্য দিয়ে তিতাস নদীর খনন কাজ হওয়ায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ অনিয়মের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠছে স্থানীয় জনতা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খাঁন বলেন, তিতাস নদী খনন কাজের অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের নির্দেশনা অনুযায়ী ৯০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য তিতাস নদী এবং এর শাখা নদী সাড়ে ৯ কিলোমিটার পাগলা নদী এবং সোয়া ৩ কিলোমিটার কুরুলিয়া খালসহ ১শ’৩ কিলোমিটার নদী খননে ব্যয় ধরা হয়েছে ১শ’ ১৯ কোটি টাকা। তিতাস নদী খননের কাজটি বাস্তবায়ন করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। খনন কাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী নারায়ণগঞ্জ বন্দর ডকইয়ার্ড এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়াকর্স লিমিটেড।

জানা গেছে, তিতাসের উৎপত্তিস্থল সরাইল উপজেলার আজবপুর থেকে নাসিরনগরের কুন্ডা, সরাইলের শাহবাজপুর এবং সদর উপজেলার উজানিসার ঘুরে গোকর্নঘাট হয়ে তিতাস নদীর বিভিন্ন স্থানে ৯০ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার খনন কাজের মধ্যে সম্প্রতি আখাউড়া পৌরশহরের বড় বাজার ঘাট এলাকার অংশে খনন কাজ চলছে। কিন্তু আখাউড়া অংশে খনন কাজের শুরুতে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও তিতাস নদী খনন কাজের বাস্তবায়নে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।

আখাউড়া বড় বাজার তিতাস নদীর পাড়ে জুট কর্পোরেশনের ক্রয়কৃত সম্পত্তির মালিক আলহাজ্ব মো. শামসুল আলম জানান, নদী খননে তিতাস নদীর বালু ও পলি মাটি নদীর পাড়ের ১শ থেকে ৩শ ফিট দূরে ফেলার কথা থাকলেও সেখানে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট বিপুল অর্থের বিনিময়ে তিতাস নদীর বালু ও পলি মাটি দিয়ে নদীর দু’ধারে বিশাল অংশ ভরাট করে দিচ্ছেন। আবার নদীর পাড় ঘেষা মানুষের স্থাপনা ভরাট করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। নদী থেকে উত্তোলন করা প্রতি ফুট বালু আড়াই টাকা থেকে তিন টাকায় বিক্রয় করে দিচ্ছেন। তিতাস নদীর ভূ-সম্পত্তি যারা জবরদখল করে স্থাপনা নির্মাণ করছে তাদের হিংস্র থাবার কড়ালগ্রাস থেকে নদী দখলমুক্ত করার কথা থাকলেও অবৈধ লেনদেন করে নদীর অংশে বালু ভরাট করে স্থায়ীভাবে বসবাস কিংবা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের ব্যবস্থা করে দেয়া হচ্ছে। আর এ অপকর্মের মূল হোতা ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহিনুজ্জামান এবং নদী খনন কাজের প্রকল্প কর্মকর্তা বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর (অব.) লেফটেন্যান্ট মো. মুখলেছুর রহমান। তাদের পত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদ ও যোগসাজশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ক্যাসেল কনষ্ট্রাকশন ও মেসার্স ইসলাম ট্রেডিং কনশন কনষ্ট্রাকশন লি. স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ে তিতাস নদী খনন কাজের নামে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির মহোৎসবে মেতে উঠেছে। এ চক্রটি নদী খনন কাজের নামে কোটি কোটি টাকা লুটে নিচ্ছে। যেন দেখার কেউ নাই।

অবশ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহীনুজ্জামান এবং নদী খনন কাজের প্রকল্প কর্মকর্তা বাংলাদেশ নৌ-বাহিনীর (অব.) লেফটেন্যান্ট মো. মুখলেছুর রহমান তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ উভয়জনই অস্বীকার করেছেন। 

তারা বলেন, নদী খনন কাজের কোন অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে তারা জড়িত নয়। যদি কোন অনিয়ম করে থাকে তা স্থানীয় প্রভাবশালীদের নিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ক্যাসেল কনষ্ট্রাকশন ও ইসলাম ট্রেডিং কনশন কনষ্ট্রাকশন করে থাকতে পারে। তারা আমাদের কথা শুনছে না। তাদের মনগড়াভাবে খনন করে যাচ্ছে। নদী খনন কাজে এ ধরনের কোন গাফিলতি বা অনিয়ম সহ্য করার নয় বলেও লেফটেন্যান্ট মো. মুখলেছুর রহমান মন্তব্য করেছেন।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দরপত্রে যেখানে তিতাস নদীর এ অংশে ১৬০ থেকে ১৮০ ফিট খনন কাজ করার কথা সেখানে ওই এলাকায় ৮০ ফিট বা তার কম খনন করা হচ্ছে। পৌরশহরের বড় বাজারের ব্রিজের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশের তিতাস নদীর বিশাল এলাকাজুড়ে বাঁধ দিয়ে ড্রেজারে বালু ও পলি মাটি ফেলে তিতাস নদীর বাঁধ দেয়া অংশ ভরাট করা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ড্রেজার চালক মো. মুছা মিঞা বলেন, বিপুল অবৈধ অর্থের বিনিময়ে ওই জায়গা ভরাট করে সদর উপজেলার বরিশল গ্রামের মোতাহার, হেবজু, এমরান, মুজিবুর ভূঁইয়া, আলী নেয়াজ ও শাহনেয়াজ ভূঁইয়াকে বুঝিয়ে দেয়া হবে।

আখাউড়া সচেতন নাগরিক ফোরামের সহ সভাপতি আলহাজ্ব মুসলেম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, তিতাস নদী খনন করতে এসে বিপুল অর্থ বাণিজ্য করে নদীর বুকে অবৈধ স্থাপনা গড়ার দখল দিয়ে যাচ্ছে অসৎ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ আপত্তির বিষয়টা দ্রুত সমাধান করা না হলে সরকারের এতগুলো টাকা জলে যাবে। তিতাস নদী খনন কাজে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে খোদ এলাকাবাসী প্রতিবাদে ফুঁসে উঠছে। 

এলাকাবাসীর দাবি, ‘তিতাস নদীকে বাঁচিয়ে রাখা, নদীটি বাঁচলে আমরা বাঁচবো’।