ভোগান্তি বাড়ছে দৌলতদিয়ায়, ফেরি পারের অপেক্ষায় ৬শতাধিক যান

পদ্মায় পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতে ফেরি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া সড়কে পারাপারের অপেক্ষায় ৬ শতাধিক যানবাহন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে ঈদে ঘরমুখো হাজার হাজার মানুষ।
ঈদের অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার যাতায়াতে ব্যবহৃত এই নৌরুট এখন ভোগান্তির অপর নাম। আজ শনিবার সকাল সোয়া ৯টার দিকেও ঘাটে প্রায় ৬ শতাধিক যানবাহন নদী পারের সিরিয়ালে আটকে রয়েছে।
এ নৌপথে প্রয়োজন অনুযায়ী ফেরি বাড়ানো হলেও নদীর তীব্র স্রোত ও কোরবানির পশুবাহী গাড়ি প্রবেশ করায় দৌলতদিয়াঘাটে গাড়ির লম্বা লাইন তৈরি হচ্ছে।পশুবাহী গাড়ি ও যাত্রীবাহী পরিবহন অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার করায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোকে।
ফেরি কর্তৃপক্ষের দাবি, ঈদ সামনে রেখে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, নাব্য সংকট এবং নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে যানজট বেড়েছে।
জানা গেছে, এই নৌ-রুটে চলাচলকারী প্রায় সবগুলো ফেরি অনেক পুরাতন। ফলে স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ফেরিগুলো চলতে পারে না। এছাড়া মাঝে মধ্যেই বিকল হয়ে যাচ্ছে ফেরিগুলো এবং মেরামত শেষে আবার চালছে।
যাত্রীরা জানান, সারাবছরই এ রুটে যাত্রী ভোগান্তি হয়। বর্ষা মৌসুম আর ঈদে ভেগান্তি হবে এটা এখন তারা মেনে নিয়েই আসা-যাওয়া করেন। তবে বর্ষা শুরু আর ঈদের কয়েকদিন আগে কর্তৃপক্ষ তাদের দুর্ভোগ লাঘবে তোড়জোড় শুরু করেন। এ সমস্যা সমাধানে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করা উচিত।
গরু ও পণ্যবাহী ট্রাকের চালকরা জানান, গরুবাহী ট্রাকগুলোর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিরিয়াল দিলেও আগের ট্রাকগুলো না পারাপার হওয়া পর্যন্ত সিরিয়ালে তো থাকতেই হয়। এ সময় গরমে অনেক গরু অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর অসুস্থ হওয়া গরুর ভালো দাম পাওয়া যায় না। এতে করে ব্যবসায়ীদের অনেক লোকসান গুনতে হয়।
এদিকে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা সিরিয়ালে আটকে থাকে। অনেক পণ্য গরমে পচে যায় এবং নির্দিষ্ট সময় গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। ফলে বাড়তি টাকা গুনতে হয় তাদের।
বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত গাড়ির চাপে নদী পারের অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে। প্রাকৃতিক কোনো দূর্যোগ না হলে এবং সবগুলো ফেরি সচল থাকলে আসন্ন ঈদে ঘরমুখো মানুষ ও পশুবোঝাই যানবাহন পারাপারে কোনো সমস্যা হবে না।
অপরদিকে ঈদে যাত্রী ভোগান্তি ও ঘাট এলাকাসহ মহাসড়কের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএসহ বিভিন্ন দফতর একাধিকবার সভা করেছে। নদীতে নিরাপত্তার জন্য নৌ-পুলিশ, ঘাট এলাকা ও সড়কে র্যাব, পুলিশ, ডিবি পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, সাদা পোশাকে পুলিশ, আনসার ও ফায়ার সার্ভিস থাকবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থা (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয় জানায়, তিন দিন ধরে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলে ২১টি ফেরি চলাচল করেছে। কিন্তু এই নৌপথ থেকে ‘ক্যামেলিয়া’ নামের একটি ফেরিকে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌপথে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দুটি ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকল হয়ে ঘাটে পড়ে আছে। বর্তমানে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। ফেরির সংখ্যা যথেষ্ট হলেও নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে পারাপারে সময় লাগছে দ্বিগুণের বেশি। কয়েক দিন ধরে কোরবানির পশুবাহী গাড়িগুলো রাজধানীসহ অন্যান্য অঞ্চলে ছুটতে শুরু করায় এই চাপ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত অসংখ্য পশুবাহী গাড়ি দৌলতদিয়া থেকে পাটুরিয়া ঘাটে ভেড়ে। এসব গাড়ি পার হচ্ছে ‘ভিআইপি’ মর্যাদায়।
একটি পরিবহনের ঘাট তত্ত্বাবধায়ক মনির হোসেন বলেন, ‘ভাই, এখন মানুষের চেয়ে পশুর দাম অনেক বেশি। আগে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, পচনশীল কাঁচা পণ্যের গাড়ি এবং যাত্রীবাহী বাস অগ্রাধিকার পেত। ঈদ উপলক্ষে এখন অগ্রাধিকার পাচ্ছে পশুবাহী গাড়ি।’
তিনি জানান, এসব গাড়ি চার লেন সড়কের ডান পাশ দিয়ে সরাসরি ফেরিতে উঠছে। এরপর পার হচ্ছে অ্যাম্বুলেন্স, পচনশীল পণ্যের গাড়ি ও যাত্রীবাহী বাস। সবার শেষে সুযোগ বুঝে সাধারণ পণ্যবাহী গাড়ি পার হচ্ছে।