বজ্রপাতে ৯ জেলায় ১৯ জন নিহত

ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে দেশের ৯ জেলায় গতকাল রবিবার বজ্রপাতে ১৯ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১৪ জন। সিরাজগঞ্জে পিতা-পুত্রসহ পাঁচজন, মাগুরায় চারজন, নওগাঁয় দুইজন, সুনামগঞ্জে একজন, গাজীপুরে দুইজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন, গোপালগঞ্জে একজন, নোয়াখালীতে দুইজন ও রাঙ্গামাটিতে একজন নিহত হয়েছে। আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর:
সিরাজগঞ্জ: কাজিপুরের তেকানী চরে গতকাল সকালে পিতা সামছুল হক (৫০) ও পুত্র আরফান (১৪) বাদাম ক্ষেতে কাজ করতে যায়। সাড়ে নয়টার দিকে হঠাৎ প্রচন্ড ঝড় ওঠে। এসময় বজ্রপাতে পিতা ও পুত্র ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। শাহজাদপুর উপজেলায় বৃষ্টির সময় নাবিল খান (১৭) ও পলিং (১৭) নামে দুই যুবক উপজেলা ভূমি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় বজ্রপাতে তাদের শরীর ঝলসে যায়। স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে উপজেলার বাজার অঞ্চলে বজ্রপাতে রিয়াজ হোসেন ও সাব্বির নামে দু’জন আহত হয়েছে। কামারখন্দের জামতৈল ইউনিয়নের পুস্কুরিকুড়া গ্রামে গতকাল সকালে জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে আবদুল কাদের (৩৭) নামে এক কৃষক নিহত হয়। তিনি ওই গ্রামের আহের মন্ডলের ছেলে।
মাগুরা : মাগুরা সদর উপজেলার রায়গ্রামে মাঠে ধান কাটার সময় বজ্রপাতে মো. আলম (৩৫) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি মাগুরা সদর উপজেলার বলুগ্রামের রশিদ মোল্লার ছেলে। এদিকে, দুপুরে বৃষ্টির মধ্যে মাগুরা থেকে শ্রীপুরে যাওয়ার সময় সদর উপজেলার অক্কুরপাড়া নামকস্থানে বজ্রপাতে ভ্যানচালক শামীম (৩০) নিহত হয়েছে। তার বাড়ি শ্রীপুরের জোকা গ্রামে । এদিকে, শালিখা উপজেলার বুনাগাতী এলাকায় মোবাইল ফোন টাওয়ারে কাজ করার সময় বজ্রপাতের শিকার হয়ে নিহত হয় মেহেদী। জয়পুরহাটের মনপুরা এলাকার আলম মিয়ার ছেলে মেহেদী। একই উপজেলার বাকলবাড়িয়া গ্রামের শক্তিপদ বিশ্বাসের ছেলে প্রল্লাদ বিশ্বাসও বজ্রপাতে নিহত হয়েছে। স্থানীয় বুনাগাতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বখতিয়ার হোসেন জানান, প্রল্লাদ বিশ্বাস মাঠে ধান ক্ষেতে কাজ করার সময় বজ্রপাতের শিকার হয়।
নওগাঁ: গতকাল সকালের দিকে সাপাহার উপজেলার শিমলডাঙ্গা রামাশ্রম গ্রামের গৃহবধু সোনভান বাড়িতে রান্নার কাজ করছিলেন। প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হলে প্রতিবেশী সালেহা বিবি ও শিশু রাজু তাদের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এসময় বজ্রপাতে সোনাভান ঘটনাস্থলেই মারা যান। সোনভানের স্বামী রুবেল হোসেন, সালেহা বিবি ও শিশু রাজু বজ্রপাতে আহত হয়েছে। পোরশায় বজ্রপাতে মুক্তার হোসেন (১৩) নামে এক ছাত্র নিহত হয়েছে। ঝড়ের সময় মাঠে বাঁধা ছাগল বাড়ি নিয়ে আসার সময় বজ্রপাতে তার মৃত্যু হয়। সে উপজেলার গাঙ্গুরীয়া ইউনিয়ন পরিষদের বালিয়াচান্দা গ্রামের বদরুজ্জামানের ছেলে। বালিয়াচান্দা উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত সে। ।
সুনামগঞ্জ: সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে গতকাল সকালে বজ্রপাতে কৃষক লিটন মিয়া (৩০) নিহত হয়েছে। নিহত লিটন মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান মিয়ার ছেলে। পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক লিটনকে মৃত ঘোষণা করেন। নোয়াখালী: বজ্রপাতে ইকবাল হাসানাত পিয়াল (১২) নামে নোয়াখালী জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেনির এক ছাত্র নিহত হয়েছে। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার লক্ষ্মীনারায়ণপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সে ওই গ্রামের সোহেল রানা জুগুর বড় ছেলে। পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, পিয়াল ও তার কয়েকজন সহপাঠী মিলে তাদের বাড়ির পাশে মাঠে ক্রিকেট খেলছিল। বজ্রপাতে সে গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
রাঙ্গামাটি: রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি মুসলিম ব্লকে গতকাল বজ্রপাতে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মনসুরা বেগম। দুপুরে হঠাত্ ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে মনসুরা বেগম ঘরের বাইরে থেকে গরু ছাগল আনতে বের হয়। এসময় তিনি হঠাতৎ বজ্রপাতের শিকার হয়।
গাজীপুর: কালিয়াকৈর উপজেলার মাটিকাটায় বজ্রপাতে গতকাল সকালে এক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত চারজন। নিহত জাফিরুল ইসলাম গাইবান্ধার গোবিন্ধগঞ্জ উপজেলার হরিনাথপুর এলাকার আব্বাস আলীর ছেলে। কালিয়াকৈর থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে শ্রমিকরা মাটিকাটা এলাকার একটি তৈরি পোশাক কারখানায় প্রবেশের সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এ সময় ওই কারখানার পাঁচজন শ্রমিক আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। শেখ ফজিলাতুন নেছা বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাফিরুলের মৃত্যু হয়। শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ি ইউনিয়নের ধলাদিয়া গ্রামের কালু কবিরাজের স্ত্রী বিলকিস বেগম (৪৩) বজ্রপাতে নিহত হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঝড়ে উপড়ে পড়া গাছের ডালপালা কাটার কাজ করছিল সে। হঠাৎ বজ্রপাতে বিলকিস বেগম ঘটনাস্থলেই নিহত এবং সঙ্গে থাকা ছেলে জহিরুল আহত হয়। জহিরুলকে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া: আখাউড়া উপজেলায় বজ্রপাতে আব্দুর রহিম (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে দুইজন। গতকাল সকাল ৯টার দিকে উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামে এ দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত রহিমের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলায়। আহতদের নাম জানা যায়নি। গোপালগঞ্জ: কোটালীপাড়ায় বৃষ্টির সময় অশোক পান্ডে নামে এক যুবক গ্রামের রাস্তার পাশে দাঁড়িয়েছিল। এ সময় হঠাত্ সে বজ্রপাতের শিকার হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কোটালীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।