কক্সবাজারে ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পদ মাত্র ৬০ কোটি টাকায়

এ সময় বক্তারা, পর্যটনশহর কক্সবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরের প্রাণকেন্দ্রে মোট ১৩০ একর সম্পদ লিজ নেওয়ার ক্ষেত্রে ওই বিশেষ মহলটি সরকারকে ভুল বুঝিয়েছে বলেও অভিযোগ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িতেদর শাস্তির দাবি করে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘পর্যটন মন্ত্রণালয় ও পর্যটন করপোরেশনের কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা যোগসাজস করে সরকারকে ভুল বুঝিয়ে অবৈধ আঁতাত করে নামমাত্র মূল্যে শৈবাল হোটেল ওরিয়ন গ্রুপের হাতে তুলে দিতে পাঁয়তারা করছে। ১৩০ একরের প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকার এই সম্পদ মাত্র ৬০ কোটি টাকায় ৫০ বছরের জন্য লিজ দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। তার চূড়ান্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করারও অপচেষ্টা চলছে।’
‘শৈবাল হোটেল ও সাগরিকা রেস্টুরেন্ট কক্সবাজারের ইতিহাস-ঐতিহ্য। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কক্সবাজার আসলেই এই হোটেলের আতিথেয়তা গ্রহণ করতেন। অন্যদিকে শৈবাল হোটেল সংলগ্ন দীঘি মাঠ এবং খোলা জায়গা নগরবাসীর শ্বাস-প্রশ্বাসের স্থান। এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ হোটেল ইস্ট-ইন্ডিয়ার মতো একটি বিতর্কিত কোম্পানির হাতে তুলে দিলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়বে।’
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা বলেন, ‘কক্সবাজারকে কোনোভাবেই বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। হোটেল শৈবাল রক্ষায় আমরা আজকালের মধ্যেই পর্যটনমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। প্রয়োজন হলে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাব। আমরা জানি, প্রধামন্ত্রী কক্সবাজারের পক্ষে। আমাদের বিশ্বাস, প্রধানমন্ত্রী হোটেল শৈবালকে বিক্রি হতে দেবেন না।’
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান চেয়ারম্যান বলেন, ‘কক্সবাজারের ওপর ভূমিদস্যুদের নজর পড়েছে। আমরা চুপ থাকলে সব নিয়ে যাবে। পর্যটনের সম্পদ আমাদের সম্পদ। এটা কাউকে দেওয়া যাবে না। ঐক্যবদ্ধ থেকে আমাদের তা প্রতিহত করতে হবে।’
কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান নূরুল আবছার বলেন, কক্সবাজারের পর্যটনের অমূল্য সম্পদ শৈবাল হোটেলটি কোনোভাবে বেহাত হতে দেওয়া হবে না। আমরা বেঁচে থাকতে তা হতে দেব না।
জেলা জাসদের সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, ‘শৈবাল হোটেল কক্সবাজারবাসীর শ্বাস-প্রশ্বাস। এই হোটেলটি আমাদের অমূল্য সম্পদ। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বুঝিয়ে এই হোটেলটিকে বিক্রি করে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে কক্সবাজারের কিছু রাঘববোয়ালও জড়িত।
সংবাদ সম্মলনে ২০১০ সালে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে শৈবাল হোটেলের ৫৫ কোটি টাকার যে উন্নয়ন প্রকল্প কেটে চট্টগ্রাম নিয়ে যাওয়া হয় তা ফেরত দেওয়া, লিজের প্রক্রিয়া বাতিল করে শৈবালে নতুনভাবে কনভেনশন সেন্টার, শিশুপার্ক, থ্রি-স্টার মানের হোটেল ও পুরাতন ভবন সংস্কার কারার দাবি জানানো হয়।
বক্তারা এ প্রক্রিয়ায় জড়িত ‘বিতর্কিত’ ওরিয়ন গ্রুপের মালিকপক্ষ, সাবেক পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, তাঁর ভাই আজিজ খান, সাবেক পর্যটন সচিব খোরশেদ আলম, সাবেক পর্যটন করপোরেশনের চেয়ারম্যান অপরূপ দত্ত চৌধুরীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
এ সময় কক্সবাজারের ঐতিহ্যবাহী জেলে পার্ক, বাহার গোলচত্বর মাঠ, কলাতলী গণপূর্ত আবাসিক এলাকার দুটি মাঠসহ শহরের ঐতিহ্যবাহী ও ফাঁকা জায়গাগুলো রক্ষার দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের একাংশের সদস্য প্রিয়তোষ পাল পিন্টু, অ্যাডভোকেট আয়াছুর রহমান, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মুহাম্মদ আলী জিন্নাত প্রমুখ।