আটক ৭ ডিবি পুলিশ কারাগারে

কক্সবাজারের টেকনাফে সেনাবাহিনীর হাতে আটক গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) ৭ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। একই সাথে এসব পুলিশ সদস্যকে চাকরি থেকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার আটক পুলিশ সদস্যরেদরকে কক্সবাজার আদালতে সোর্পদ করা হলে আদালত তাদেরকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
কক্সবাজার গোয়েন্দা শাখার পুলিশ সদস্যরা মঙ্গলবার টেকনাফের আব্দুল গফুর নামে এক ব্যবসায়ীকে অপহরণের পরে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। কিন্তু দর-কষাকষির পর ওই ব্যবসায়ীর পরিবার ডিবি পুলিশকে ১৭ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় এবং টাকাও দেন। টাকা পাওয়ার পর তাকে বুধবার ভোররাতে কক্সবাজারের টেকনাফের মেরিনড্রাইভ এলাকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
এরপর ওই ব্যবসায়ীর পরিবার বিষয়টি সেনা বাহিনীকে জানালে টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ এলাকার লম্বরী সেনা বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে ডিবি পুলিশ বহনকারী মাইক্রেবাসটি থামানো হয়। ডিবি পুলিশের দলটি কক্সবাজার শহর অভিমুখে আসছিল। এসময় গাড়িতে থাকা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) ইয়াসিন আরফাত, এসআই আবুল কালাম আজাদ, এএসআই মোঃ ফিরোজ, এএস আই মোস্তাফা কামাল, এএসআই আলাউদ্দীন, কনেস্টবল মোস্তাফা আজম ও গাড়ী চালক কনেস্টেবল মোঃ আল আমিন।
এসময় এসআই মনিরুউজ্জামান পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। মুক্তিপণ হিসেবে আদায় করা ১৭ লাখ টাকা এই গাড়ি হতে উদ্ধার করে সেনা বাহিনী। পরে আটক ডিবি পুলিশ সদস্যদের সেনাবাহিনীর অস্থায়ী ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। আটকের পরে নানা প্রক্রিয়া শেষে উদ্ধার ১৭ লাখ টাকা ব্যবসায়ীকে ফেরত দেওযা হয়। আর আটক ৭ জনকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপারকে হস্তান্তর করা হয়। এদেরকে তাৎক্ষনিকভাবে চাকরি হতে বরখাস্ত করা হয়।
টেকনাফ থানার ওসি মাঈন উদ্দিন খান জানান, কক্সবাজার গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশের ৭ কর্মকর্তা মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকাসহ আটক হওয়ার ঘটনায় ৮ জনের বিরুদ্ধে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অপহৃত ব্যবসায়ি আব্দুল গফুর বাদী হয়ে বুধবার রাতে টেকনাফ থানায় ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। টেকনাফ থানার মামলা নং- ৩৮, জিআর ৭৮৯/১৭, তারিখ-২৫-১০-১৭ ইং, ধারা-৩৬৫/৩৮৫/৩৮৬/৩৪ দ: বি:। ওই মামলায় ৭ পুলিশ সদস্যকে পুলিশ গ্রেফতার দেখিয়ে বৃহস্পতিবার কক্সবাজার আদালতে সোর্পদ করা হয়। আদালত পুলিশ সদস্যদের কারাগারে পাঠান। মামলার আসামি এসআই মনিরুউজ্জামান পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে।
কক্সবাজার জেলায় সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ইস্যুসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধ ও নিরাপত্তা প্রদানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সফলতার সাথে কাজ করে ইতিমধ্যেই প্রশংসার দাবি রেখেছে। আর এমনই সময় খোদ কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) পুলিশের কিছু অসাধু সদস্য নিরীহ লোকজনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় পরবর্তী মুক্তিপণের ১৭ লাখ টাকাসহ সেনা বাহিনীর হাতে আটকের ঘটনাটি টক অব দ্য টাউনে কক্সবাজারে পরিণত হয়েছে। যার ফলে শুধু প্রশাসনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছেনা পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে সাধারণ লোকজন। তারা বলছে, যাদের মাধ্যমে অপহরণকারীর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার কথা তারাই যদি অপহরণ করে মুক্তিপন আদায় করে এর চেয়ে দুঃখ জনক আর কিছুই হতে পারেনা।
এব্যাপারে এডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর জানান, এই ঘটনাটি এক কথায় দুঃখজনক। যে রক্ষক সেই যদি ভক্ষক হয় তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়? আজ সেনাবাহিনীর সক্ষম বলে তারা এগিয়েছে। অন্য কেউ’ত এই ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পাবেনা। আর এই ঘটনা যে আজকে একদিনে তা নয়, নিশ্চয় অনেক আগে থেকে হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ প্রশাসন থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে। আর বিপদগ্রস্ত হবে। তাই দ্রুত সময়ে যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাতজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। এই সাতজনের মধ্যে দুইজন উপ-পরিদর্শক (এসআই), তিনজন সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) আর দুইজন কনস্টেবল। তিনি আরো জনান, বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যার ফলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভাবমুর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে।