English Version
আপডেট : ২৩ আগস্ট, ২০১৭ ১৩:৫৬

কুষ্টিয়ায় গো-খামারিদের দিন কাটছে আতঙ্কে

কুষ্টিয়ায় গো-খামারিদের দিন কাটছে আতঙ্কে

 

কুষ্টিয়ায় গো-খামারীদের দিন কাটছে চরম আতঙ্কে। কোরবানিকে সামনে রেখে কুষ্টিয়া অঞ্চলে বিভিন্ন এলাকার পশু ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বেড়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকার হাটে এমনকি বাড়িতে ঘুরে ঘুরে ব্যবসায়ীরা গরু ও ছাগল কিনে ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া শুরু করেছে। দেশের বাজারেও প্রায় ২লাখ পশু পাঠাতে প্রস্তুত কুষ্টিয়ার খামারীরা। 

 

এদিকে ভারত থেকে গরু আসার সংবাদে খামারিদের মাঝে এক অজানা আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে এবার ২লাখেরও বেশি কোরবানির পশু রয়েছে যা স্থানীয়দের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকার চাহিদা পূরণ করবে। 

 

গতবছর কুষ্টিয়ার গো-খামার ও কৃষকেরা গরুর ভাল মুল্য পাওয়ায় এবারো গুরুত্ব দিয়ে পশুর যন্ত নিতে শুরু করেছে। আশায় বুক বেধে আছে। এলাকার গ্রামেগঞ্জে এমন কোন বাড়ি নেই যেখানে ২/৪টি কোরবানির গরু পাওয়া যাবে না। শুধু কি তাই কোরবানিকে কেন্দ্র করেই জেলার বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার গো-খামার গড়ে উঠেছে। 

 

বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এই কোরবানির গরু লালন পালন এবং ক্রয় বিক্রয়ের কারণে এখানকার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আমুল পরিবর্তন এসেছে। তারপরেও ধারাবাহিকভাবে ভারতীয় গরু অনুপ্রবেশের কারণে এখানকার খামারি ও ব্যবসায়ীরা মারাত্বক ক্ষতির মধ্যে পড়েছিল, তারপরেও তারা হাল ছাড়েনি। 

 

গতবছর ভাল লাভবান হওয়ায় এবার আরও উজ্জীবিত হয়ে সকলেই কোরবানির পশুর জন্য নিবিড়ভাবে সময় ব্যয় করছেন। 

 

কুষ্টিয়া জেলা পশু সম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ৬ টি উপজেলায় ২০হাজার ৫শ ৮৬ টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৯৩ হাজার, ছাগল ৬৬ হাজার এবং ভেড়া ৩ হাজারের মত। সবেচেয়ে বেশি খামার এবং পশু কুষ্টিয়া সদর উপজেলায়। সদর উপজেলায় সরকারি মতে ৪শ ৫১টি খামার, গরুর পরিমাণ ১৬ হাজার ৪৬টি। দৌলতপুর উপজেলায় ৪হাজার ৩শ ৫৪টি খামার, গরু রয়েছে ১৪ হাজার ১৭৮।

কুমারখালী উপজেলায় ৪১৯৮ টি খামার, গরুর সংখ্যা ১৩ হাজার ২৫০টি। খোকসা উপজেলায় ৩হাজার ১০৬টি খামার, গরু রয়েছে ৮হাজার ১৬টি। মিরপুর উপজেলায় ২হাজার ৭৩৯টি খামার, গরু রয়েছে ১৩ হাজার ৭৩৯টি এবং ভেড়ামারা উপজেলায় ১হাজার ৭৬৮টি খামার, যার গরুর পরিমাণ ৮হাজার ৮৭৯টি। 

 

তবে সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার খামারি এবং কোরবানির পশুর সংখ্যা অনেক বেশি। জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিশালাকার গরু পালনের খবরটি সকলের জানা রয়েছে। 

 

এলাকায় ঘুরে দেখা গেল সকলের মাঝেই বিক্রির প্রস্তুতি চলছে। এলাকার গরুর হাটগুলোতে প্রতিদিনই ভিড় বাড়ছে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের। রোজার পর থেকেই দেশের বড় বড় ব্যাপারীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে কুষ্টিয়ায়। 

 

সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ীর হারুরিয়া গ্রামের গ্রামীণ গো-খামারের স্বত্বাধিকারী ইলিয়াস হোসেন জানান, আমার খামারে ১৫৪টি গরু ইতিমধ্যে ঢাকার এক ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রি করেছি। আরো কয়েকটি গরু, মহিষ এবং ভেড়া কোরবানির জন্য রেখেছি। 

 

খোদ্দ আইলচারার ‘মন্ডল’ খামারের স্বত্বাধিকারী ছলিম মন্ডল জানান, তার খামারে ৯৮ টি গরু রয়েছে। এরমধ্যে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীর নিকট ২০টি গরু বিক্রি করেছেন। 

 

তিনি আরও জানান প্রতিদিনই গরুর হাটে প্রচুর গরু বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারত থেকে গরু আসার কথা শুনে খামারিদের মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ব্যাপারীরা বাড়িতে বাড়িতে যেয়ে বড় এবং বিভিন্ন আকারের পছন্দমত গরু কিনছে। 

 

কুষ্টিয়া জেলা পশু সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ আশাদুল হক জানান, এবারো জেলায় প্রচুর কোরবানির পশু রয়েছে। কৃষক এবং খামারিরা যত্ম নিয়ে পশু তৈরী করেছে। প্রতি উপজেলায় কোরবানির পশুর জন্য আমাদের কর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে। পশুর রোগ প্রতিশেধক ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত রয়েছে। খামারী এবং কৃষকদের মাঝে চাহিদামত তা ব্যবহার করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে চাষীদের উদ্বুদ্ধকরণে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। 

 

তিনি আরও জানান, আমরা বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়েছি কোথাও এখন পর্যন্ত গরু মোটাজাতাকরণের জন্য ট্যাবলেট সেবনের অভিযোগ পাইনি। এলাকাবাসীর মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন প্রচার প্রচারণা ও লিফলেট বিলি করা হয়েছে। প্রকৃত কৃষক ও খামারীরা এই ধরনের কোন কাজে যুক্ত নন বরং এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী কোরবানির আগ মুহুর্তে এ ধরনের কাজ করে থাকে। তবে তাদের ব্যাপারেও আমরা সজাগ রয়েছি।