English Version
আপডেট : ৫ আগস্ট, ২০১৭ ১৭:৫০

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়-ঝাঁপ

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়-ঝাঁপ

 

পটুয়াখালী- ৪ (রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলা) আসন। একদিকে এ আসনটি স্বাধীনতার আগ থেকেই আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত। অন্যদিকে পায়রা সমুদ্র বন্দর, কুয়াকাটা পর্যটন নগরী, একাধিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ চলমান বিভিন্ন মেগা প্রকল্পের কারণে অর্থনৈতিক বিবেচনায় দক্ষিণ অঞ্চলে বর্তমানে সব চেয়ে দামি আসন পটুয়াখালী-৪। তাই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ছিনিয়ে আনতে দেশের রাজনৈতিক প্রধান বিরোধী দল বিএনপির স্থানীয় নেতাদের পাশপাশি কেন্দ্রীয় নেতারাও দলের মনোনয়নের জন্য ইতোমধ্যেই দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন। 

 

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সভা সমাবেশসহ দলের বিভিন্ন দিবসকে উছিলা করে নির্বাচনী এলাকা মাতিয়ে রাখছেন বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের নেতারাই এখন মাঠে সক্রিয়। দলীয় মনোনয়ন পেতে বিভিন্নভাবে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছেন তারা। চারদিক ছেয়ে গেছে- পোষ্টার, লিফলেট, ফেষ্টুন আর ব্যানারে।

 

সরেজমিনে দেখা গেছে, পটুয়াখালী-৪ (রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলা) আসনে বিএনপির অনেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও তিনজনের নাম জোর আলোচনায়। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক মো: মনিরুজ্জামান মনির, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো: মোস্তাফিজুর রহমান- এই তিনজন এলাকায় দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছেন। নেতাকর্মীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে নিজ দলের মনোনয়ন পেতে জনমত তৈরির চেষ্টা করছেন তারা।

 

এ আসন স্বাধীনতার আগ থেকেই আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবেই পরিচিত। এই আসন থেকে বরাবরই আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জয়ী হয়ে আসছে। শুধুমাত্র ১৯৭৯ সালে তথা জিয়াউর রহমানের আমলে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচিত হয়। তৎকালীন অভ্যন্তরীণ বিরোধের কারণে আওয়ামী লীগ এই আসন হারায়। এছাড়া পরবর্তী ৩টি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ আসনে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হন। বিএনপি বার বার এ আসনটি দখলে নেয়ার চেষ্টা করলেও কখনো সফল হয়নি।

 

আলহাজ্ব মো: মোয়াজ্জেম হোসেন ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জেলা উন্নয়ন সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পান। এছাড়া সব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়লাভ করেন। এ আসনে বিএনপি বার বার হারার কারণ ব্যাখ্যায় রাজনৈতিকরা বলেন, বিএনপির হাই কমান্ড এ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে যথেষ্ঠ তৎপর নয়। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল। এমন নজিরও রয়েছে যে, দলীয় প্রার্থীর চেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী বেশী ভোট পেয়েছে। বিএনপির এই বিভক্তির কারণে এমন অবস্থা হয়েছে। প্রার্থী যে-ই হোক এই এলাকার মানুষ ভোট দেয় নৌকায়।

 

স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে, এ আসনে বিএনপিকে জয় ছিনিয়ে নিতে হলে ভোট যুদ্ধে লড়াইয়ের শক্তি হাতে নিতে হবে। সেক্ষেত্রে তিনজনের মধ্যে জনপ্রিয়তার দিক থেকে এগিয়ে স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো: মনিরুজ্জামান মনির। সবকিছু বিবেচনায় মনিরুজ্জামান এই আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার আগাম দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা এমনকি আওয়ামী লীগ সমর্থকেরা।

  রাঙ্গাবালী ও কলাপাড়া উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা বলেন,  এ জনপদের নেতা কর্মীরা চায় নতুন কোন আভিভাবক যার নেতৃত্বে আন্দোলন সংগ্রামে রাজ পথে শক্ত ভূমিকা পালন করে আওয়ামী লীগ সরকারকে পতন করতে দেশনেত্রী খলেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করবে।

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রাজনৈতিক নেতা বলেন, মনির মিয়াকে দল দেখে নয় আমরা ব্যক্তি ও তার সততা, আদর্শের জন্য ভোট দেবো। তার বাবা আলহাজ্ব মোয়াজ্জেম হোসেন যখন এই আসনের এমপি ছিলেন তখন যতটা পেরেছেন সাধারণ মানুষের উপকার করেছেন। তার থেকে মানুষ কখনো খালি হাতে ফেরেনি। এই আসনে আগামী নির্বাচনে মনিরুজ্জামান মনির মনোনয়ন পেলে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সাথে শক্ত লড়াই হবে। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম দল মত বিবেচনা না করেই মনিরুজ্জামানের দিকে বেশি ঝুঁকছেন।

 

জানতে চাইলে মনিরুজ্জামন মনির বলেন, আমার বাবা ১৯৭৯ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে এ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার মানুষের ভাগ্য-উন্নয়নে কাজ করেছে। এ অঞ্চলের মানুষ কোন দিনও তাকে ভুলতে পারবেনা, তার সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এ অঞ্চলের মানুষ আমাকে ভালোবাসে বলেই আমি রাজনীতিতে এসেছি। রাজনীতিতে আসার পরথেকেই মানুষের পাশে দাড়িয়েছি, দলের কর্মীদের দুঃখ ভাগ করে নিয়েছি। দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেয়া হলে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো। 

 

বিএনপির মনোনয়ন বিষয়ে আলোচনার টেবিলে আরেক নাম এবিএম মোশাররফ হোসেন। তিনি ছাত্রদলের সাবেক ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় শাখা সভাপতি ও বর্তমানে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক। তিনি গত নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে নির্বাচন করলেও জিততে পারেননি। এলাকায় তার জনপ্রিয়তাও আছে ব্যাপক। তবে তার ব্যাপারে নেতা কর্মীদের খোঁজ খবর না নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। 

 

তিনিও মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। নিজে সব সময় নেতাদের পাশে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি থাকা কালীনও রাঙ্গাবালী-কলাপাড়া জনপদের মানুষের পাশে দাড়িয়েছি। দাড়িয়েছি দলীয় নেতা-কর্মীদের পাশে। ছাত্র রাজনীতি শেষ করে আমি কলাপাড়া বিএনপির রাজনীতির হাল ধরেছি। দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদি। দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো।  

এছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন বিষয়ে আলোচনায় রয়েছে মো: মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ও সাবেক কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান। তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে দুইবার নির্বচন করেন এবং একবার বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বচান করেন। মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপরে বেশ আগ্রহী থাকলেও দলের উপর ভরসা করছেন তিনি। তিনি জানান, দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে প্রস্তুত। দল থেকে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো।