English Version
আপডেট : ২৯ জুলাই, ২০১৭ ১৮:১৪

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি অর্ধেকে নেমেছে

হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি অর্ধেকে নেমেছে

 

 

 

ভারতে নতুন গুডস অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্যাক্স (জিএসটি) প্রথা চালুর প্রভাবজনিত রফতানি জটিলতার কারণে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পাথরের আমদানি আগের তুলনায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। স্বভাবতই দেশের বাজারেও পাথরের সরবরাহ অনেকটা কমেছে। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাথরের দাম বেড়েছে টনপ্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। এদিকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত পাথর ব্যবহার করা হচ্ছিল দেশের বিভিন্ন অবকাঠামো প্রকল্পে। কিন্তু আমদানি কমে যাওয়ায় এসব কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে।

 

হিলি স্থলবন্দর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুেকন্দ্রসহ অন্যান্য উন্নয়নমূলক প্রকল্পে ভারতীয় পাথরের চাহিদা রয়েছে। এ চাহিদা মেটানোর জন্য হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে পাথর আমদানি শুরু হয়। গত ১ জুলাই নতুন ও অভিন্ন করব্যবস্থা জিএসটি চালু করে ভারত সরকার। এর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় ভারত থেকে পণ্য রফতানিতে তৈরি হয় জটিলতা। এরই প্রভাবে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি কমেছে।

 

আগে বন্দর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ ট্রাক পাথর আমদানি হতো। আর বর্তমানে আমদানি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ ট্রাক পাথর। চলতি মাসের প্রথমার্ধে ১৫ কার্যদিবসে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মোট ৭৫৮টি ট্রাকে ৩৫ হাজার ৬৬৯ টন পাথর আমদানি হয়েছে। অথচ গত মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল ৬৩ হাজার ৫৪৭ টন।

আগের মাসগুলোয় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পাথর আমদানি হয়েছে আরো বেশি। মে মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল ৯৩ হাজার ৭৫৮ টন, এপ্রিলে ১ লাখ ৩৪ হাজার ১৩৪ টন, মার্চে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭২১ টন, ফেব্রুয়ারিতে ১ লাখ ১২ হাজার ৫৭৪ টন ও জানুয়ারিতে ৮৮ হাজার ৭৪০ টন।

 

এদিকে আমদানি কমে যাওয়ায় দুই সপ্তাহের ব্যবধানে পাথরের দাম আকারভেদে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেড়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ভারত থেকে আমদানিকৃত ৫/৮ সাইজের পাথর বিক্রি হচ্ছে টনপ্রতি ৩ হাজার ১৫০ টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা দরে।

 

আগে একই পাথরের প্রতি টন বিক্রি হয়েছে ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০ টাকায়। ৩/৪ সাইজের পাথরের টনপ্রতি দর ৩ হাজার ১০০ টাকা থেকে ৩ হাজার ১৫০ টাকা, যা আগে ২ হাজার ৯০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৯৫০ টাকা ছিল।

এছাড়া হাফ ইঞ্চি সাইজের পাথর বিক্রি হচ্ছে টনপ্রতি ২ হাজার ৫৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫৬০ টাকার মধ্যে। আগে এ ধরনের পাথরের প্রতি টন বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪৫০ টাকা দরে।

 

হিলি স্থলবন্দরের পাথর আমদানিকারক হারুন উর রশীদ ও রাজিব দত্ত বলেন, চাহিদা থাকায় আগে এখান দিয়ে প্রচুর পরিমাণ পাথর ভারত থেকে আমদানি করা হতো। কিন্তু গত ১ জুলাই ভারতে হঠাত্ করে জিএসটি চালুর ফলে পাথর রফতানিতে সেদেশে কাগজপত্র ও ট্যাক্সজনিত জটিলতা তৈরি হয়েছে। আমরা ভারতীয় রফতানিকারকদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, ভারতে সাধারণত একটি পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ে মেমো বা চালান দেয়া হয়। তবে পাথরের ক্ষেত্রে সেদেশের ব্যবসায়ীরা কোনো ধরনের মেমো বা চালান না দেয়ায় জিএসটির হার নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

 

এ কারণে ভারতের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ আপাতত পাথর রফতানিতে পণ্য ছাড়করণ বন্ধ রেখেছে। ফলে রফতানিকারকরা চাহিদা মোতাবেক পাথর রফতানি করতে পারছেন না।

 

ভারতীয় রফতানিকারকরা বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের জানিয়েছেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে একটি নির্দেশনা পাওয়া যাবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই ভারত থেকে চাহিদা মোতাবেক পাথর রফতানি করা সম্ভব হবে।

 

হিলি স্থলবন্দর পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান পানামা হিলি পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ-বিষয়ক কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, পাথর আমদানি কমে যাওয়ায় বন্দর কর্তৃপক্ষ একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি সরকারও উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রাজস্ব আহরণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।