English Version
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৩:২২

মাশরাফির স্মৃতি জড়িত ‘কুড়িরডোব’ মাঠ বেদখল

উজ্জ্বল রায়,
নিজস্ব প্রতিবেদক
মাশরাফির স্মৃতি জড়িত ‘কুড়িরডোব’ মাঠ বেদখল

নড়াইল: প্রশাসন ও রাজনীতিকদের উদাসীনতার কারণে শিল্পী এস এম সুলতান ও মাশরাফির স্মৃতি বিজড়িত ‘কুড়িরডোব’মাঠ স্থানীয় ওয়েলিংটন মাঠ বেদখল হয়ে পড়েছে। জমিদার বাড়ির পাশের এই মাঠটি জেলার অন্যতম প্রধান বিনোদন ও খেলাধুলার মূল কেন্দ্র হলেও এখন তা দেখে চেনার উপায় নেই।

স্থানীয় ভাবে খেলাধুলার সুযোগ নষ্ট হওয়ায় দীর্ঘশ্বাস ছাড়েন মাশরাফির বাবা গোলাম মুর্তজা। তিনি বলেন, তিনি এই মাঠে খেলাধুলা করেছেন। মাশরাফিও করেছেন। শুধু খেলাধুলা নয়, স্বাস্থ্যবান্ধব পরিবেশের জন্য মাঠটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু প্রশাসন ও রাজনীতিকদের উদাসীনতার কারণে মাঠটি আজ বেহালদশা।   মাঠটি ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট বিদ্যালয় ও নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের নামে হলেও তা সবার জন্য উন্মুক্ত। মাঠ দখলও হয়েছে খোলামেলাভাবে। মাঠে ঢুকতেই চোখে পড়ল মাঝ বরাবর রাস্তা। সাইকেল থেকে শুরু করে ট্রাক সব ধরনের যানবাহন অবাধে চলছে রাস্তাটি দিয়ে। একটু ভেতরে গিয়ে দেখা গেল অনেক ছোট ছোট ঘর, কোনোটার টিনের চাল, কোনোটার খড়ের ছাউনি। ওই সব ঘরে ৭৫টি পরিবার বসবাস করছেন। তাদের হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল মাঠে বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরছে। তাদের রান্নার জ্বালানি শুকানো হচ্ছে মাঠে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে, কাপড়ও শুকানো হচ্ছে। চারপাশে ময়লা-আবর্জনা। মাঠেই তৈরি করা হয়েছে দোকান।

দোকান মালিক আকবর হোসেন জানালেন কলেজের কাছ থেকে ৫০০ টাকায় ভাড়া নিয়েছেন। 

স্থানীয় দু’জন নারী জানান, কলেজের নৈশপ্রহরী কাওসা ও লিটু শেখ মাঠে ঘর বানিয়ে ভাড়াও দিয়েছেন। তবে লিটু বলেন, ‘মাঠে আমার ছোট ভাইয়ের ঘর আছে। আমি ঘর বানাইনি, ভাড়াও দেইনি। কিন্তু নাম হয় আমার।’ 

কাওসার শেখ বলেন, ‘আমি কাউকে ওখানে বসাইনি। ওরা যদি কোনো ঝামেলায় পড়ে, মুরব্বি হিসেবে আমারে ডাকে। কিন্তু সবকিছুতেই শুধু শুধু আমার নাম হয়।’ তিনি দাবি করেন, দখলদারদের কলেজের পক্ষ থেকে তিনিই নোটিশ দেন। 

স্বামী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে মাঠে বাস করেন বর্ণালী মালি জানান, ‘২০-২২ বছর আগে প্রথমে তিনটি পরিবার এই মাঠে বসতি গড়ি। এরপর এখন এতগুলো বসতি হয়েছে বসতি।’

কলেজ ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৮৫৭ সালে রানি ভিক্টোরিয়ার নামে ওই বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন নড়াইলের জমিদার রতন রায়। মাঠে পানি নিষ্কাশনের প্রাকৃতিক ব্যবস্থা ছিল। 

জেলা প্রশাসন ১৯৮৬ সালে আট একরের মাঠটি বিদ্যালয় ও কলেজকে ব্যবহার করতে দেয়। তখন থেকে পশ্চিম অংশ বিদ্যালয় ও পূর্বের অংশ কলেজের আয়ত্তে যায়। 

১৯৯৬ সালে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাদের অংশ থেকে ৬৪ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেয় আট ব্যক্তির কাছে। ২০০৫ সালে একই পাশে আরও ৩১ শতাংশ জমি হোমিওপ্যাথিক কলেজকে ছেড়ে দেওয়া হয়। নির্মল ভদ্র নামের এক ব্যক্তি জমিদারদের ওয়ারিশ দাবি করে মামলা করেন। 

দাবি করা অংশ দখলে রেখে তিনি ঘরবাড়ি করেছেন। ওই মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিমাই চন্দ্র পাল গত শনিবার তাঁর কার্যালয়ে বলেন, দখলদারদের উচ্ছেদ করার মতো শক্তি তাঁদের নেই। তাহলে মাথা থাকবে না। আর বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও নড়াইল পৌরসভার মেয়র জাহাঙ্গীর বিশ্বাস বলেন, জাল দলিল নিয়ে অনেকে মাঠের জমির মালিকানা দাবি করছেন। বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবিলা করা হবে। 

স্থানীয়রা বলেন, বর্তমানে মাঠের আয়তন সাড়ে চার একরও নেই। তবে এসব বিষয়ে কোনো তথ্য নেই বিদ্যালয় ও কলেজের কাছে। 

বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপ-মহাসচিব, বাংলাদেশ ভলিবল ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও নড়াইল জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক আশিকুর রহমান বলেন, মাঠটি সংরক্ষণের জন্য সেখানে একটি আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয় রাজনীতিকদের নানা মতের কারণে সেটা সম্ভব হয়নি। 

জেলা প্রশাসক হেলাল মাহমুদ শরীফ বলেন, শুরুতে স্থাপনা নির্মাণে বাধা দেওয়া উচিত ছিল। এখন আশ্রয়ণ প্রকল্পে সেখানকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন করে একটি ইনডোরসহ দুটি স্টেডিয়াম নির্মাণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।