একটি সেতু বদলে দিতে পারে লাখো মানুষের জীবন

নড়াইল: একটি সেতুর অভাবে নড়াইলের পাঁচটি ইউনিয়নের গ্রামবাসীর দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। জেলা শহরের সাথে উত্তর লোহাগড়াবাসীর সরাসরি যোগাযোগের প্রধান অন্তরায় এখন ব্রাহ্মণডাঙ্গা পয়েন্টে নবগঙ্গা নদী। দীর্ঘদিন ধরে ব্রিজ একটি নির্মাণের দাবিতে জানিয়ে আসছেন স্থানীয়রা।কিন্তু তাতে কোন প্রতিকার হচ্ছে না। প্রতিদিনই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাধারণ মানুষকে পার হতে হচ্ছে নদী।
নড়াইল-লাহুড়িয়া ভায়া চালিতাতলা-ব্রাহ্মণডাঙ্গা সড়কে সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র প্রতিবন্ধকতা নবগঙ্গা নদী। ব্রাহ্মণডাঙ্গা পয়েন্টে স্বাধীনতার পর থেকে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।
জনপ্রতিনিধিরা বার বার আশ্বাস দিলেও তা বাস্তবে রূপলাভ করেনি। উত্তর লোহাগড়ার লাহুড়িয়া, শালনগর, নোয়াগ্রাম, জয়পুর ও নলদী ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামবাসীর জেলা শহরে সংক্ষিপ্ত সময়ে যাতায়াতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির একমাত্র প্রতিবন্ধকতা শুধুমাত্র একটি সেতু।
নড়াইল সদর উপজেলার সাথে লোহাগড়া উপজেলার উত্তরাঞ্চলবাসীর দূরত্ব শুধুমাত্র এই সেতুটির কারণে। কৃষি পণ্যসহ অন্যান্য জিনিসপত্র পারাপার এবং মানুষের পারাপারে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হতে হয় এখানে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ব্রাহ্মণডাঙ্গা বাজারের কোল ঘেসে বয়ে চলছে এই নদীটি। নদীর দুপাড়ে পারাপারের জন্য অপেক্ষা করছে প্রায় শতাধিক মানুষ। ঘাটে অপেক্ষা করা দুজনের মাথায় রয়েছে চাউলের বস্তা, কয়েক জনের হাতে রয়েছে বাজারের থলে, স্কুল পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থী স্কুল ব্যাগ ঘাড়ে করে দাঁড়িয়ে আছে, মটরসাইকেলর উপর বসে আছে চালকরা, আর অনেকেই আছে খালি হাতে। নৌকা তীরে ভিড়তে দেরি দেখে দাঁড়িয়ে না থেকে অনেকে ঘাটে বসে একটু বিশ্রামও নিয়ে নিচ্ছে এই ফাঁকে। সবার চোখ নৌকার দিকে। নদীর দু’পাড়ে রয়েছে ২টি ও মাঝখানে একটি নৌকা। তিনটি নৌকাই ছোট। একটি নৌকায় ১০ থেকে ১২ জনের বেশি মানুষ পার হতে পারবেনা। মোট মিলে তিনটি ছোট নৌকায় প্রতিদিন পার হয় হাজার হাজার মানুষ।
ব্রাহ্মণডাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ী মুক্ত শেখ বলেন, নদীর পানি থেকে পাড় প্রায় ৪০ ফুট উঁচু। বছরের বার মাস ঘাটের অবস্থা খুব খারাপ থাকে, নৌকা থেকে বিভিন্ন মালামাল উঠানামা করাতে খুব ঝামেলা হয়। বৃষ্টির সময় ঘাট খুব পিচ্ছিল হওয়ায় ৩ মাস এই ঘাট দিয়ে কোন মটরসাইকেল পার করা যায় না। এখনও প্রতিনিয়ত এই ঘাটে মটরসাইকেল নৌকায় উঠানো নামানোর সময় পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেক সময় মটরসাইকেল পড়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সরকারি চাকরিজীবী বলেন, তিনি প্রতিদিন এই ঘাট পার হয়ে নড়াইল শহরে অফিস করতে যান। আর সেই জন্য তাকে প্রতিদিন বাড়ি থেকে কমপক্ষে এক ঘন্টা আগে বের হতে হয়। আবার অফিস থেকে বাড়ি ফিরতে মাঝে মধ্যে রাত হলে পড়তে হয় মারাত্মক ঝামেলায়। তখন নদীতে নৌকা পাওয়া যায় না। মাঝে মধ্যে তিনি নৌকার মাঝিকে বাড়ি থেকে ডেকে এনে নদী পার হন।
ভুক্তভোগীরা জানান, নদীর এক পাড়ে(পশ্চিম পাড়ে) নড়াইল সদর উপজেলা অপর পাড়ে (পূর্ব পাড়ে) লোহাগড়া উপজেলার সীমানা। একটি নদীই যেন দুটি উপজেলার বাসিন্দাদের আলাদা করে রেখেছে। ঘাটটি পার হলেই ব্রাহ্মণডাঙ্গা বাজার। এই বাজারকে কেন্দ্র করে এলাকার শত শত মানুষের কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে ব্রিজ না থাকায় কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পন্য সময় মত বাজারে আনতে না পারায় সঠিক দাম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ঘাটের এক কিলোমিটার অদূরে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ নগর। সেখানে রয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখ গ্রন্থাগার, স্মৃতি জাদুঘর, বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ। স্বাধীনতা যুদ্ধে মহান এই বীরের স্মৃতি বিজড়ীত বিভিন্ন জিনিস দেখতে প্রায় প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অনেক দর্শনার্থীরা এখানে আসেন। তবে ইচ্ছা থাকলেও চরম দুর্ভোগ নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে করে এখানে আসেন না অনেক দর্শনার্থী।
এই নদী পার হয়ে প্রতিদিন শত শত শিক্ষার্থী পাশ্ববর্তী বিদ্যালয়সহ জেলা শহরে কলেজে যাতায়াত করে। ঝড়, বৃষ্টি, খেয়াডুবিতে এমনকি কচুড়িপানা নদী পারাপারে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। যাতে নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থী মূল্যবান সময়।
এবিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি’র) নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোতালেব বিশ্বাস জানান, নবগঙ্গা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা খুবই জরুরী। ইতিপূর্বে প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও এটি নির্মাণ হয়নি। আগামীতে যাতে ব্রিজটি নির্মাণ করা যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা চলছে। নবগঙ্গা নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হলে শতাধিক গ্রামবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হবে।