English Version
আপডেট : ১১ জানুয়ারি, ২০১৭ ১২:৪৪

চলে গেলেন রহস্য পুরুষ বল্লভ

নিজস্ব প্রতিবেদক
চলে গেলেন রহস্য পুরুষ বল্লভ

নোয়াখালী : নোয়াখালী জেলার চাটখিল উপজেলার শাহাপুর ইউনিয়নের বল্লভ মারা গেছেন। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে তিনি ৭০ বছর বয়সে মারা যান। স্থানীয়দের কাছে তিনি বল্লভ নামে সু-পরিচিত ছিলেন। 

এই পরিচয়ের পেছনে একটি রহস্য সব সময়েই লোক মুখে আলোচিত ছিলো তিনি দাওয়াতে গেল কলাপাতার সানকীতে খেতেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বী হলেও তিনি গরুর মাংস খেতেন, সেই সঙ্গে মুসলিম পরিবারগুলোর সঙ্গেই বেশি সময় কাটাতেন।বল্লভ শাহাপুর ইউনিয়নের বাংলাবাজার-ঠাকুরদিঘীর পাড়ের চা দোকানে কাজ করে নিজের খরচ চালাতেন।

জানা গেছে, শিবরামপুর শূদ্রবাড়ি তথা ইন্দ্রপন্ডিতের বাড়িতে ১৯৪৭ সালে বল্লভের জন্ম। ইন্দ্রপন্ডিতই তার বাবা। তৎকালীন ম্যাট্রিক ও আই,এ পাশ করে বাবার কর্মস্থল ভারতে গমন করেন তিনি। তবে সেখানে বেশি দিন স্থায়ী ছিলেন না। দেশে ফিরলে অজ্ঞাত কারণে তিনি নিজের স্মৃতি হারিয়ে মানসিক রোগী হয়ে পড়েন। তৎকালীন এলাকার একজন উচ্চ শিক্ষিত লোক হয়েও তিনি সব সময় থাকতেন চুপচাপ। কথিত আছে, তার সম্পদের লোভে স্থানীয় প্রভাবশালীরা তাকে বিষাক্ত এমন কিছু খাইয়ে দিয়েছে যাতে তার সমস্ত স্মৃতি শক্তি নষ্ট হয়ে গেছে। 

ব্যক্তিগত জীবনে বল্লভ অবিবাহিত ছিলেন। মুসলমানদের বাড়িতে থাকা-খাওয়া এবং কাজ করেই তার এক পেট চলতো। জীবনের শেষ ক'টা বছর দিঘীরপাড়ের মুলির দোকানে আর মরশিদের বিল্ডিংয়ের পরিত্যক্ত রুমই ছিলো তার ঠিকানা।

স্থানীয়রা আরো জানান, গত সোমবার রাতে বল্লভ মুসলিম হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, "আমি মুসলমান হতে চাই"। এখবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে ঠাকুর দিঘীরপাড়ে উৎসুক জনতার ভিড় জমে। কেউ কেউ তাৎক্ষণিক পাঞ্জাবি টুপি এনে রাখে। উৎসুক একজন সকালে কালেমা পড়ালে সে পবিত্র কালেমা বানী উচ্চারণ করে। জনতার উৎসাহ আরো বেড়ে যায়। পাশের বাড়ি থেকে গরম পানি আর সাবান এনে তাকে গোসল করানো হয়। হুজুর আনা হয় পুনরায় কালেমা ও তওবা পাঠের জন্য প্রস্তুতি নিলে তিনি আরো অসুস্থ্য হয়ে পড়েন।

চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া কাজল বলেন, তিনি স্বেচ্ছায় মুসলমান হতে চাইলে জেলা নোটারি পাবলিক থেকে নাম পরিবর্তন সাথে সাথে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিত্সা দেওয়া হবে। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেন, চাটখিল উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কচুয়া নামক স্থানে সিএনজিতেই বল্লভ মারা যান।

পরে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের মধ্যস্ততায় বল্লভের স্বজনদের সঙ্গে আলোচনা করে লাশ সৎকার চিতাতেই হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এনিয়ে এলাকায় মিশ্র পতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তবে এনিয়ে কোনো প্রকার সম্প্রাদায়িক দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়নি। সবাই বল্লভের পরকালীন শান্তি কামনা করেন।