নড়াইলে বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা ৯

নড়াইলে পৃথক পৃথক ঘটনায় বিষপানে স্কুল-কলেজ ছাত্রছাত্রী গৃহবধূসহ ৯ জন আত্মহত্যার চেষ্ঠা করে ব্যর্থ হয়েছে।
সোমবার (১ আগস্ট) বিকেল ৫টার সময় প্রসাদপুর ইউনিয়নের চকখোপা গ্রামের লোকমান আলীর মেয়ে ও গোটগাড়ী শহীদ মামুন হাইস্কুল ও কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্রী নাসরিন আকতার (১৮) কলেজ থেকে নিজ বাড়ি ফিরে পারিবারিক কলহে বিষপান করে। টের পেয়ে উদ্ধার করে স্থানীয় মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
অপর ঘটনায় উপজেলার মালশিরা গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে রুস্তম আলী (৩৫) পারিবারিক কলহে বেলা সাড়ে ১২টায় বিষপান করে। টের পেয়ে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
উপজেলার কাশোপাড়া ইউনিয়নের তুলশীরামপুর গ্রামের আফসার আলীর স্ত্রী বিলকিস বেগম (৪২) ছেলের বউ লাবণীর সাথে বিবাদ করে। পরে লাবণীর কথায় আফসার আলীর ছেলে তার মাকে জবাই করতে চাইলে রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে অপমানে মা বিলকিস বেলা সাড়ে ৯টায় ধানে দেয়া তরল বিষপান করে।
গত রোববার দুপুরে মহাদেবপুর উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের জাকারিয়ার স্ত্রী বিথি বেগম স্বামীর উপর অভিমান করে বিষপান করে। টের পেয়ে উদ্ধার করে উভয়কে স্থানীয় মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
শনিবার স্বামীর দ্বিতীয় বিয়ে করা স্ত্রীর কথা জানতে পেরে আঞ্জুয়ারা বেগম (৩৫) স্বামী সাইফুদ্দিনের সাথে নতুন সতিনকে ঘরে উঠানো নিয়ে বিবাদে দুপুর ১টায় বিষপান করে। চিকিসাধীন আঞ্জুয়ারা বেগম জানান,তাদের ২০ বছরের সংসার জীবনে ২ সন্তান রয়েছে। তারপরও তার স্বামী গোপনে আরেকটি বিয়ে করেছে। ঘটনাটি জানার পর এ নিয়ে পারিবারিক কলহে তিনি বিষপান করেন।
একই দিন বেলা দেড় টার দিকে স্বামী আবদুর রাজ্জাকের সাথে অভিমান করে স্ত্রী ইতি বেগম (৩০) বিষপান করে।
রাত পৌনে ৯টার দিকে উপজেলার পাটাকাটা গ্রামের মিলনের ছেলে ও পাটাকাটা উচ্চ বিদ্যলয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্র রুবেল হোসেন (১৮) এর সাথে উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের কাঞ্চন গ্রামের আবদুল আলীমের মেয়ে ও কাঞ্চন উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী আছিয়া খাতুন (১২) এর রং নম্বরের সূত্র ধরে প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। পরে প্রেমের কথা জানাজানি হলে এ নিয়ে উভয় পরিবারের পিতা-মাতা তা মেনে না নিলে অভিমান করে প্রথমে রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রেমিক রুবেল বিষপান করে। পরে প্রেমিকা আছিয়া রাত ১০টার সময় বিষপান করে। অপর ঘটনায় দেলুয়াবাড়ী এলাকার অলিপ চন্দ্রের স্ত্রী গৃহবধূ মিনতী রাণী (২৫) পারিবারিক কলহে বিষপান করে।
বর্তমানে উক্ত ৯ জন স্থানীয় মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর আগে গত ২৪ জুলাই দুপুরে প্রেমের কারণে বিষপানে বড়পই গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের ছেলে স্কুল ছাত্র রুবেল হোসেন (১৮) এবং উপজেলার কশব গ্রামের রেজাউল ইসলামের স্ত্রী নববধূ শান্তনা আকতার (১৮) সন্ধাায় পারিবারিক কলহে বিষপান করে । রামেক হাসপাতালে স্থানান্তরের পর চিকিসাধীন অবস্থায় ঐ রাতেই উভয়ের মৃত্যু হয়।
একই দিন দুপুর ১ টায় পারিবারিক কলহে জহির উদ্দিন (৬৫) নামে এক বৃদ্ধ বিষপান করে । অপর ঘটনায় উপজেলার প্রসাদপুর ইউনিয়নের এলাঙ্গা গ্রামের আবেদ আলী মন্ডলের ছেলে জুয়েল হোসেন (১৮) ও উপজেলার মান্দা সদর ইউনিয়নের দোসতি গ্রামের আবদুস সামাদ মন্ডলের মেয়ে ও মান্দা এসসি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী শামীমা আকতার মিতু (১৮) প্রেমের কারণে বিষপান করে। টের পেয়ে উদ্ধার করে তাদেরকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। গত এক সপ্তাহে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২ জনের মৃত্যুসহ প্রায় ১৫জন আত্মহত্যার চেষ্ঠা করেছে ।
তবে এ হিসাবের বাহিরে আরো অনেক নাম রয়েছে। আত্মহত্যার প্রবণতা যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাফফর হোসেন জানান, জুলাই-আগস্ট মাসে আত্মহত্যার প্রবণতা বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। পারিবারিক কলহ,প্রেম-ভালোবাসার আবেগ, সতিনের কারণে,বউয়ের কারণে মা-বাবা ও বাবা-মায়ের কারণে ছেলে-মেয়েরা অভিমান করে বিষপানে আত্মহত্যা এবং আত্মহত্যা চেষ্ঠা করে।