English Version
আপডেট : ২৬ জুলাই, ২০১৬ ১৯:৪৬

শিশু আরাফাতকে হত্যা করল সৎ মা

অনলাইন ডেস্ক
শিশু আরাফাতকে হত্যা করল সৎ মা

আরাফাত হোসেন (৬) নামে এক শিশুকে পরিকল্পিতভাবে নিজ হাতে ঘরের মধ্যে শ্বাসরোধ করে পরে আগুণে পুড়িয়ে হত্যা করেছে সৎ মা সাথী আকতার (২৩)।

রোববার (২৪ জুলাই) দুপুরে উপজেলার গনেশপুর ইউনিয়নের শ্রীরামপুর মধ্যপাড়া গ্রামে এ মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটে।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আটক সৎ মা সাথী আকতার স্কীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছে পারিবারিক কলহের জের ধরে শিশুটিকে পরিকল্পিতভাবে নিজ হাতে ঘরের মধ্যে শ্বাসরোধ করে।

কেউ যেন তাকে কোন অবস্থায় সন্দেহ করতে না পারে সে জন্য হত্যার পর লাশ আগুণে পুড়িয়ে দেয়া হয়। ঘটনায় পুলিশ ঘাতক সাথী আকতারকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে সোমবার জেল হাজতে পাঠিয়েছে।

নিহত শিশুটির লাশ উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতাল মর্গে ময়না তদন্তের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে।

ময়না তদন্তের পর সোমবার বিকেলে সাড়ে ৫টায় লাশ দাফন করা হয়েছে।

মান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোজাফফর হোসেন জানান, পারিবারিক কলহের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে সৎ মা সাথী আকতার নিজ হাতে ঘরের মধ্যে শিশু আরাফাত হোসেনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে। পরে সাথী আকতার শিশুটি আগুণে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে বলে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে এলাকায় প্রচার করে।

যাতে প্রমাণ করার অপচেষ্ঠা করা হয়েছে যে শিশুটি আগুণে পুড়েই মরেছে। তবে রোববার রাতে শিশুটির সৎ মা সাথী আকতারকে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হত্যার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবাব বন্দি দিয়েছে।

এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা নথিভূক্ত করা হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে সাথী আকতারকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে হত্যাকান্ডের শিকার শিশু আরাফাতের দাদী জাহেরা বিবি আপেক্ষ্য করে বলেন, তিনি ঘটনার দিন রোববার সকালে নাতি আরাফাতকে বাড়িতে সৎ মায়ের কাছে রেখে প্রসাদপুর ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যান।

ঔ দিন দুপুরের দিকে উক্ত আত্মীয় বাড়ি থেকেই তিনি তার নাতির মৃত্যুর খবর পান। এ সময় নিহত শিশু আরাফাতের পিতা মকলেছার রহমান স্থানীয় সুতিরহাট বাজারের শাহাবুদ্দিনের ফার্নিচারের দোকানে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পরে প্রতিবেশি এক যুবকের মাধ্যমে তিনি তার ছেলের মৃত্যুর খবর পান। ঘটনার পর খুনি পালিয়ে যাবার চেষ্ঠা করলে স্থানীয়রা তাকে ধরে আটক করে রাখে।

বিকেলে খবর পেয়ে মান্দা থানার উপ-পরিদর্শক তারেকুর রহমানসহ সঙ্গীয় পুলিশ সদস্য নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে সৎ মা সাথী আকতারকে আটক ও শিশুটির লাশ উদ্ধার করে। হত্যাকান্ডের নেপথ্যে: জানা যায়, শিশু আরাফাত হোসেনের আপন মা আঙ্গুরী আকতারকে তার পিতা প্রায় আড়াই বছর পূর্বে তালাক দেন।

এরপর প্রায় বছর খানেক পূর্বে শ্রীরামপুর গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেনের কন্যা সাথী আকতারকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন। সৎ মায়ের সংসারে শিশু আরাফাত নানা বঞ্চনার মাঝে বড় হতে থাকে। সৎ মা কথায় কথায় শিশুটিকে নানা নির্যাতন করত। এ নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারিবারিক নানা দ্বন্দ্ব কলহ লেগেই থাকত। এদিকে সাথী আকতারের গর্ভে নতুন অতিথি’র আগমন ঘটতে চলেছে। তাই নিজের সন্তানের পথ আগে থেকেই পরিষ্কার রাখতে সতিনের ছেলেকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য নানা ফন্দি ও মতলব আঁটতে থাকে।

সেই দিনের অপেক্ষার পালা যেন সাথী আকতারের পূরণ হতে চলেছে। ঘটনার দিন বাড়িতে কেউ না থাকার মোক্ষম সুযোগ পেয়ে সেই পূর্ব পরিকল্পণা অনুযায়ী নিজ হাতে শিশু পুত্র আরাফাত হোসেনকে গলা টিপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এতেই সে থেমে থাকেনি। জিঘাংসার চরম রূপে আর্বিভূূত হতে দেখা যায় তার কর্মকান্ডে। যার ফলে পরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুণ ধরিয়ে গলা ও শরীরের আংশিক পুড়িয়ে দেয় ঘাতক সাথী আকতার।