নড়াইলে প্রভাবশালীদের হাতে জিম্মি এক পরিবার

নড়াইলে ইউপি নির্বাচনোত্তর সহিংসতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের একটি পরিবারকে জিম্মি করে রেখেছে একটি প্রভাবশালী মহল। ভয়ে ও আতংকে থানায় মামলা করতে সাহস পাচ্ছে না পরিবারটি। কোন উপায়ান্তর না দেখে অবশেষে বুধবার (২২ জুন) সকালে নড়াইল জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সাথে মতবিনিময় করেন ভুক্তভোগী পরিবার।
জানা যায়, কয়েকদিন পূর্বে জেলার সদর উপজেলাধীন বাহিরগ্রামে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক যুবককে পিটিয়ে আহত করে দুর্বত্তরা। আহত যুবকের নাম বিশ্বজিৎ রায় (১৯)। সে নিরালী গ্রামের বাসিন্দা অজিত রায়ের ছেলে।
ভুক্তভোগী জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিশ্বজিৎ রায় স্থানীয় একটি ব্রীজের উপর বসেছিল। কিছুক্ষণ পর বিশ্বজিৎকে চার জন জোর করে নির্জন স্থানে তুলে নিয়ে যায়। এই চারজন হলেন- বাহির গ্রামের শফিক ফকির (১৭), একই গ্রামের মাহফুজ মোল্যা (১৮), মামুন (১৭) এবং সবুজ বিশ্বাস (১৮)। তারপর তারা চারজন মিলে হকিস্টিক দিয়ে বিশ্বজিৎকে বেধড়ক পেটাতে থাকে ।
বিশ্বজিতের চিৎকারে স্থানীয় জনতা এগিয়ে এলে তারা চারজনে সটকে পড়ে। পরবর্তীতে এলাকাবাসী আহত বিশ্বজিৎকে উদ্ধার করে প্রথমে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে নড়াইল সদর হাসপাতালে প্রেরণ করে। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি, বহু অপকর্মের হোতা শফিকের চাচা তাকে উন্নত চিকিৎসা প্রদানের আশ্বাস দিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে নিয়ে আসে।
এছাড়াও গ্রাম্য শালিসের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করবে বলে তাদের থানায় মামলা দায়ের করতে দেয়নি। কিন্তু তাকে উন্নত চিকিৎসা করানোর বদলে শওকত ফকিরের হুকুমে তাকে (বিশ্বজিৎ) গৃহবন্দী করে রাখে সংঘবদ্ধ একটি দুর্বৃত্তের দল। পরে সুযোগ পেয়ে বিশ্বজিতের বাবা তাকে পুনরায় সদর হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলে পথিমধ্যে শওকত ফকির ও তার দলবল তাদের রাস্তা থেকে বাড়িতে ফিরিয়ে দেয়।
বর্তমানে চিকিৎসার অভাবে আহত বিশ্বজিৎ যন্ত্রণায় বিছানায় শুয়ে কাতরাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বিশ্বজিতের বাবা অজিত রায় বলেন, বিগত ০৭ মে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে আমরা আশীষ বিশ্বাসকে সমর্থন করে তার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চালায়। এতে করে আমাদের বিরোধী পক্ষ আব্বাস উদ্দিনের সমর্থকেরা আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়। এবং এক পর্যায়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। আর সেই বিরোধের জের ধরে আব্বাস উদ্দিনের সমর্থক অর্থাৎ শফিক, মাহহফুজ, মামুন ও সবুজ আমার ছেলে হত্যার উদ্দেশ্যে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেছে।
থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে কী না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অজিত রায় বলেন, আমরা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ। তারপরও কিছুটা সাহস সঞ্চার করে মামলা করতে থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তি ও অভিযুক্ত শফিকের চাচা শওকত ফকির আমাদেরকে মামলা করতে নিষেধ করেন। এবং তিনি আমাদেরকে সুষ্ঠু বিচার পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। পরদিন এলাকাবাসীর সহায়তায় শালিসের ব্যবস্থা করা হলেও শওকত ফকির সে শালিসী সভায় উপস্থিত না হওয়ার কারণে শালিসী কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমানে শওকত ফকির তার ভাতিজা শফিককে বাঁচানোর লক্ষ্যে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, শওকত ফকির বর্তমান ৮নং কলোড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্বাস উদ্দিনের সাথে সখ্যতা করে এলাকায় বিভিন্ন অপকর্ম করে বেড়ায়। সে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত রয়েছে।
এ ব্যাপারে জানার জন্য কয়েকবার শওকত ফকিরের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায় ও সাধারণ সম্পাদক মো. হিমেল মোল্যা বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা পাথরের তৈরি মূর্তি নয়। অপরাধীর অপকর্ম জনসম্মুখে তুলে ধরাই তাঁদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমরা অসহায় ও হুমকির শিকার পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে চাই।
এছাড়াও আমাদের মিডিয়া ক্লাব ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে পরিবারটির নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করে তারা।