নড়াইলে জমিদার জিতেন্দ্রনাথ রায়ের বাড়ির জমি রক্ষার্থে জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সাথে মতবিনিময় সভা

নড়াইল জেলা প্রতিনিধি: নড়াইলে ভূমিদস্যু কর্তৃক জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে নড়াইলের হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ির সরকারী সম্পত্তি গ্রাস প্রচেষ্টার প্রতিবাদে জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামি ৪জুন শনিবার বিকাল ৫টায় রূপগঞ্জ প্রজন্ম চত্বর প্রতিবাদ সমাবেশ, ১২ জুন রবিবার সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে অবস্থান ধর্মঘট আহব্বান করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে নড়াইল ক্লাবে “হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ির জমি রক্ষা কমিটির আহবায়ক অ্যাডভোকেট এসএ মতিনের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এছাড়া দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে জালজালিয়াতির অভিযোগ এনে জনৈক মোস্তব মন্ডলকে গ্রেফতারেরও দাবি করেছে আন্দোলনকারীরা। মতবিনিময় বক্তব্য রাখেন, নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হাফিজুর রহমান, নড়াইল জেলা পরিষদের প্রশাসক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস, সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিদ্দিক আহম্মেদ, অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোহাম্মদ আলী, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, সাবেক সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরীফ হুমায়ূন কবীর, জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শরীফ মনীর হোসেন, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও কমিটির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম, সাবেক আ’লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো: হাসানুজ্জামান, দৈনিক ওশানের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলমগীর সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগ নেতা কাজী ইসমাইল হোসেন লিটন, জেলা বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অশোক কুন্ডু, মলয় কান্তি নন্দী, জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সভাপতি উজ্জ্বল রায় ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যা, সমাজের কাগজের আল-আমিন, রাবেয়া ইউসুফ, আঞ্জুমান আরা, কাজী হাফিজুর রহমান, শাহীনউল্লাহ মোহন প্রমুখ। সকল দলমত নির্বিশেষে হাটবাড়িয়ার জমিদার বাড়ির জমি রক্ষা আন্দোলনে শরিক হওয়া আহবান জানিয়ে নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, বিষয়টি সংসদে তোলা হবে, সরকারী সম্পত্তি বেহাত হতে দেয়া যাবে না। আন্দোলন অব্যহত রাখতে হবে। প্রয়োজনে অর্থ ও জনবল দিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন। নড়াইল জেলা পরিষদের প্রশাসক, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সুবাস চন্দ্র বোস বলেন, এ মামলার বাদি পক্ষের আমি আইনজীবী ছিলাম। আমি একজন আইন পেশার মানুষ হিসেবে উকালতি করেছি মাত্র। এছাড়া আমার অন্য কোন অভিসন্ধি ছিল না। এটা ভুল হলে ভুল হইছে তা অকপটে আপনাদের সামনে আমি স্বীকার করছি। তবে এটাও ঠিক যে, সরকার পক্ষের আইনজীবী তথ্য উপস্থাপনায় যথেষ্ট ত্রুটি ছিল। আমি নিশ্চিত করে বলতে চাই, নড়াইলের হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ির সরকারী সম্পত্তি বেহাত হোক এটা আমি চাই না। আমিও আপনাদের আন্দোলনের সাথে আছি এবং থাকবো। প্রয়োজনে অর্থ লাগে তাও দেবো। এখন সবচেয়ে জরুরী বিষয় হলো লিপ টু আপীল গ্রহণের জন্য সলিসিটরের সাথে যোগাযোগ করা এবং একজন উপযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করা। একবার লিপ টু আপীল গৃহিত হলে আদালতের পূর্বের আদেশ স্থগিত হয়ে যাবে। উল্লেখ্য, প্রায় ৬০ বছরের পূর্বে হাটবাড়িয়ার জমিদার আশুতোষ রায় এবং অজিত রায় পিতা- জিতেন্দ্রনাথ রায় নড়াইল পৌরসভার ৫৬নং ব্রাক্ষ্মণডাঙ্গা মৌজার সেঃ মেঃ দাগে ৩.২৯ একর, ২৫ দাগে ০.৫৯ একর, ২৬ দাগে ৩.৭৭ একর, ২৭ দাগে ১৫.৬৪ একর, ৪৬ দাগে .০৪৭ একরসহ মোট ২৩.৭৬ একর জমির পূর্ববর্তী মালিক ছিলেন। নড়াইল হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ির ঘটনার প্রকৃত অবস্থা এই যে, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর জমিদার আশুতোষ রায় এবং অজিত রায় উভয় মালিকগণ কাহারো নিকট জমি রেজিস্ট্রি দলিলমুলে হস্তান্তর না করেই সপরিবারে তৎকালিন পূর্বপাকিস্তান ত্যাগ করে ভারতে চলে যান এবং সেখানে স্থায়ী নাগরিক প্রাপ্ত হয়ে বসবাস করেন। জমিদারদের পরিত্যক্ত সম্পত্তি অরক্ষিত থাকায় সরকার দখল গ্রহণ ও নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৫০ সনে জমিদারী উচ্ছেদ ও প্রজাস্বত্ব আইন জারীর পর প্রজাস্বত্ব আইনের বিশেষ বিধান অনুযায়ি অত্র সম্পত্তি Non-retainable Khash Land হিসেবে পরিগণিত হওয়ায় সম্পত্তিতে সরকারের স্বত্ব ও দখল অর্জিত হয়। এছাড়াও এস,এ জরিপে সরকারের ১নং খতিয়ানের খাস জমি হিসেবে রেকর্ড না হয়ে ভুলবশতঃ ২৩.৭৬ একর জমি সাবেক মালিকদ্বয়ের নামে এস,এ ৫৬ খতিয়ানে রেকর্ডভুক্ত হয় এবং বর্তমান আর,এস রেকর্ডে সরকারের ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ জনৈক মোস্তাব মন্ডল তাঁর ভারতের ২৪পরগনা জেলার বনগাঁ থানাধীন দক্ষিন সুদ্দরপুর মৌজার ১১.১০ একর জমির সাথে চড়বিৎ ড়ভ অঃঃড়ৎহবু মূলে ১৯৭৫ সালে বিনিময় করেন এবং পরবর্তীতে যশোর জেলার জেলা প্রশাসক এর দপ্তরে ২১/০৩/১৯৭৫ সালে বর্ণিত বিনিময় ২৩/৭৪-৭৫ নং মিস মামলার বৈধতা করে বর্ণিত ১১.৮৮ একর ভুমির স্বত্ত্বাধিকারী হয়েছেন বলে দাবি করেন যা সম্পূর্ণ মিথ্যা, মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং সাজানো ঘটনা বলে আন্দোলনকারী মনে করেন। স্মারকলিপিতে আরো বলা হয়েছে, নড়াইলের বিজ্ঞ যুগ্ম দায়রা জজ জনাব এ, কে, এম এনামুল করিম (১ম আদালত) মহোদয় গত ২৩/০১/২০১৪ তারিখ নালিশী ১১.৮৮ একর সম্পত্তি বাদি মোস্তব মন্ডল পক্ষে রায় প্রদান করে বিবাদী সরকার পক্ষকে পরবর্তী ৩০দিনের মধ্যে আপোষে বুঝে দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। ইতিমধ্যে সরকার পক্ষ নড়াইলের জেলা প্রশাসক নড়াইলের যুগ্ম জেলা জজ আদালতের ৩৯/০৫ নং আপীল মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সিভিল রিভিশন দায়েরও করেন। এদিকে মোস্তব মন্ডলের সরেজমিনে দখল, জরিপ, রেকর্ড, ভুমিকর পরিশোধের দাখিলা না থাকার বিষয়টি বিজ্ঞ আদালত রায় প্রদানকালে আমলে না এনে এবং বিনিময় দলিলের বৈধতা সম্পর্কে পূর্বের আদালত কর্তৃক দেওয়া রায়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ না করে প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে মোস্তব মন্ডলের পক্ষ দ্বারা অন্যায়ভাবে প্রভাবিত ও প্ররোচিত হয়ে পক্ষপাতমূলক রায় প্রদান করেছেন তা ন্যায় বিচারের পরিপন্থী। মোস্তাব মন্ডল ইতিপূর্বে এ মামলা বিভিন্ন আদালতে প্রমাণে ব্যর্থ হন বিধায় বিজ্ঞ বিচারক সহকারী জজ জনাব মোঃ আব্দুস সালাম খান তাঁর রায়ে আলোচনা, পর্যবেক্ষণ ও মতামতের অংশে বিনিময়কারী মোস্তাব মন্ডলের তথাকথিত এবং দাবীকৃত বিনিময় দলিল জাল-জালিয়াতির কথা বলেছেন। এ মামলার সরকার পক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট অচিন কুমার চক্রবর্তী (জিপি)।