English Version
আপডেট : ২৬ মে, ২০১৬ ২০:০৭

পিসিআর অভাবে হুমকির মুখে চিংড়ি সম্পদ

ইমদাদুল
পিসিআর অভাবে হুমকির মুখে চিংড়ি সম্পদ

উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছায় ভাইরাস নির্ণয়ের কোন ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে চিংড়ি চাষীরা। পাশাপাশি পরীক্ষা-নিরিক্ষার নেই কোন পর্যাপ্ত উপকরণ। ফলে ভাইরাস সহ রোগ-বালাই নির্ণয় ও প্রতিষেধক ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খাচ্ছে চাষী ও মৎস্য অধিদপ্তরে নিয়োজিত কর্মকর্তারা।

এতে একদিকে ব্যাহত হচ্ছে চিংড়ি উৎপাদন, অপরদিকে দুর্বল প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক ব্যবস্থার কারণে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে চিংড়ি মারা যাওয়ায় কোটি কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে চাষীদের। এ অবস্থায় হুমকির মুখে পড়া দক্ষিণ অঞ্চলের চিংড়ি সম্পদ রক্ষায় ভাইরাস পরীক্ষার একমাত্র পলিমার চেইন রিয়্যাকশন (পিসিআর) মেশিন সহ পরীক্ষা-নিরিক্ষার অন্যান্য উপকরণ সরকারী ভাবে সরবরাহের দাবী জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট চিংড়ি চাষীরা।

সূত্রমতে ৮০’র দশকে এ অঞ্চলে শুরু হয় লবণ পানির চিংড়ি চাষ। শুরুর দিকে চিংড়ি চাষ অধিক লাভ জনক হওয়ায় গোটা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে চিংড়ি চাষ ব্যবস্থা। এক সময়ের কৃষি অধ্যুষিত এলাকা পরিনত হয় চিংড়ি অধ্যুষিত এলাকায়। মৎস্য অধিদপ্তরের হিসাব মতে পাইকগাছা উপজেলায় বর্তমানে ছোট, বড় মিলিয়েই ৪ হাজারের মত চিংড়ি ঘের রয়েছে। প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে হচ্ছে চিংড়ি চাষ। যা থেকে বছরে উৎপাদন হচ্ছে ৫ হাজার মেট্রিক টন চিংড়ি।

এ খাতে প্রত্যক্ষ এবং পরক্ষ ভাবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে এলাকার হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু পরিতাপের বিষয় শুরুর দিকে চিংড়িতে তেমন কোন রোগ বালাই দেখা না দিলেও ৯০’র দশকের পর হতে চিংড়িতে দেখা দেয় ভাইরাস সহ বিভিন্ন রোগ বালাই। যা গত কয়েক বছরে প্রকট আকার ধারণ করেছে। একদিকে ভাইরাস সহ রোগ বালাইয়ের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায়, অপরদিকে চাষ ব্যবস্থাপনা সনাতন পদ্ধতির মধ্যে সিমাবদ্ধ থাকায় বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে চিংড়ি চাষ। প্রতিবছর চিংড়ি রপ্তানি করে এ অঞ্চল থেকে কোটি কোটি টাকা সরকারি রাজস্ব আয় হলেও এখনো পর্যন্ত এ অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়নি ভাইরাস পরীক্ষার একমাত্র পলিমার চেইন রিয়্যাকশন (পিসিআর) মেশিন। এ ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে নেই কোন পি.এইচ, সয়েল পি.এইচ, ডি.ও এবং রিফ্যাক্টোমিটারের মত গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা-নিরিক্ষার যন্ত্রপাতি। ফলে ভাইরাস সহ অন্যান্য রোগ বালাই নির্ণয় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে মৎস্য বিভাগ ও চিংড়ি চাষীদের।

ভাইরাস পরীক্ষার একমাত্র মেশিনটি এ অঞ্চলের মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদপ্তরে রয়েছে। তাও আবার পরীক্ষা করতে গিয়ে গুনতে হয় ১ হাজারেরও অধিক টাকা। ফলে সাধারণ চাষীদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে ভাইরাস পরীক্ষা। যার কারণে অন্যকোন রোগ বালাইয়ের কারণে চিংড়ি মারা গেলেও সাধারণত চাষীরা ধারণা করে থাকেন ভাইরাসের কারণেই মারা গেছে চিংড়ি। চিংড়ি চাষী গোলাম কিবরিয়া রিপন জানান, অথচ এ অঞ্চলে যদি ভাইরাস পরীক্ষার মেশিন থাকতো তাহলে একদিকে পোনা মজুদ করার আগেই পোনা গুলো ভাইরাস মুক্ত কি না সেটা জানা সম্ভব হতো এবং পোনা মজুদ পরবর্তী চিংড়ির ভাইরাস পরীক্ষা সম্ভব হতো।

এ ব্যাপারে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা এএসএম রাসেল জানান, ভাইরাস সহ অন্যান্য বিভিন্ন রোগ বালাইয়ের কারণে চিংড়ি মারা যেতে পারে। অথচ এ অঞ্চলে ভাইরাস পরীক্ষার পিসিআর মেশিন না থাকায় যে কোন কারণে চিংড়ি মারা গেলে চাষীরা ধারণা করে থাকেন ভাইরাসের কারণেই চিংড়ি মারা গেছে। এ ক্ষেত্রে অনেক সময় পরীক্ষা-নিরিক্ষার অভাবে মৎস্য বিভাগে আমরা যারা কর্মরত রয়েছি আমাদেরকেও অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। প্রতিবছর এ অঞ্চল থেকে প্রচুর পরিমাণে চিংড়ি উৎপাদন হয়ে থাকে।

এ জন্য চিংড়ি অধ্যুষিত এ এলাকায় ভাইরাস পরীক্ষার পিসিআর মেশিন সরবরাহ করা হলে ভাইরাস সহ অন্যান্য রোগ বালাই নির্ণয় সহজ হবে এবং রোগ নির্ণয় করে  খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে। আর এটা সম্ভব হলে এ অঞ্চলে রোগ বালাইয়ের প্রকোপ কমে যাওয়া সহ চিংড়ির উৎপাদন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব আয় বৃদ্ধি সহ লাভবান হবে চিংড়ি চাষীরা। দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি সম্পদ রক্ষায় এ অঞ্চলে ভাইরাস পরীক্ষার পিসিআর মেশিন সহ অন্যান্য উপকরণ সরকারি ভাবে সরবরাহের দাবী জানিয়ে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ চন্দ্রের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের চিংড়ি চাষীরা।