চাঁদপুরের পাঁচ উপজেলায় সাড়ে ১১ হাজার লোক আশ্রয় কেন্দ্রে

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ভয় কেটে গেছে। এটি দুর্বল হয়ে ভারতের দিকে চলে গেছে। চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস ঢাকা আবহাওয়া অফিসের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় গতকাল শনিবার রাত থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। যদিও এ দুর্যোগের কারণে কয়েকশ' লঞ্চ যাত্রী চাঁদপুর লঞ্চঘাটে আটকা পড়েছিলো। এদিকে ঘূর্ণিঝড়ের কবল থেকে রক্ষা পেতে চাঁদপুরের নদী তীরবর্তী পাঁচ উপজেলায় ১১ হাজার ৬শ' লোক বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। সবচেয়ে বেশি আশ্রয় নিয়েছে হাইমচর এবং চাঁদপুর সদরের রাজরাজেশ্বর ও ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের মানুষ। এছাড়া চাঁদপুর-শরীয়তপুর নৌ রূটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকায় হরিণা ফেরি ঘাটে বেশ কিছু বাসযাত্রীও আটকা পড়েছেন। এসব আশ্রিত এবং আটকা পড়া মানুষের জন্যে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন শাখা থেকে নগদ ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা এবং ২০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এসব তথ্য জানান।
ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় 'রোয়ানু' শুক্রবার গভীর রাতে বাংলাদেশে আঘাত হানে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর, কক্সবাজার ও উপকূলীয় অঞ্চলে রোয়ানু আঘাত হানে। তবে আগাম সতর্কতা ও ব্যাপক প্রস্তুতি থাকায় অনেক প্রাণহানি বা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তারপরও গতকাল রাতে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রাম উপকূলীয় জেলাগুলোতে মোট ২২জন মারা গেছে এবং সহস্রাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এদিকে শুক্রবার উপকূলীয় অঞ্চলে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত থাকায় চাঁদপুরও পার্শ্ববর্তী জেলা হওয়ায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় ছিলো। শুক্রবার সারাদিন চাঁদপুরে বৃষ্টি হয়েছে। এদিন বিকেল থেকে নদীপথে লঞ্চসহ সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডবিস্নউটিএ। ফলে চট্টগ্রাম, সিলেট ও বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা কয়েকশ' লঞ্চযাত্রী চাঁদপুর লঞ্চঘাটে আটকা পড়ে। গতকাল শনিবার সারাদিনও লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিলো। শনিবার ভোর থেকে চাঁদপুরে প্রবল বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাস বইতে থাকে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয় এবং কিছুক্ষণ পর পর ঝড়ো বাতাস ছিলো। দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে উন্নতি হতে থাকে। বিকেলের দিকে অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায় পরিস্থিতি। সন্ধ্যায় চাঁদপুর আবহাওয়া অফিসে যোগাযোগ করা হলে এ অফিসের পর্যবেক্ষক আজহারুল ইসলাম জানান, ঢাকা আবহাওয়া অফিস থেকে জানানো হয়েছে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে এটি এখন ভারতের দিকে চলে যাচ্ছে। তাই ভয়ের আশঙ্কা কেটে গেছে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত (গত রাত সাড়ে ৭টা) গত ২৪ ঘণ্টায় চাঁদপুরে ১৩৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বাতাসের গতিবেগ সম্পর্কে তিনি জানান, চাঁদপুরে বাতাসের গতিবেগ ছিলো ঘণ্টায় ২০ নটিকেল মাইল।
গতকাল রাত ৮টায় চাঁদপুর বন্দর কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ায় নৌযান চলাচলের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হয়েছে। তাই রাত ৯টা ৪০ মিনিট (গতরাত) থেকে লঞ্চ চলাচল শুরু হবে। প্রায় একই সময় যোগাযোগ করা হয় জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার সাথে। তিনি জানান, পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে, বিপদ বলা যায় কেটে গেছে। তিনি জানান, প্রাকৃতিক এ দুর্যোগের আশঙ্কায় আগাম সতর্কতা হিসেবে হাইমচর, চাঁদপুর সদর, মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ ও ফরিদগঞ্জ উপজেলায় ১১ হাজার ৬শ' লোক বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে এবং স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি আশ্রয় নিয়েছে হাইমচরে। এরপর ছিলো সদর উপজেলার সংখ্যা। এ উপজেলার চরাঞ্চল তথা রাজরাজেশ্বর ও ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের অনেক মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র এবং বিভিন্ন স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে। তিনি জানান, এসব আশ্রিত মানুষ এবং লঞ্চঘাট ও হারিণা ফেরিঘাটে আটকা পড়া যাত্রীদের জন্যে সরকারের ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া ২০ মেট্রিক টন চাল এবং নগদ ১ লাখ ৫৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। তিনি আরো জানান, পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে গেলে এবং চরাঞ্চলের মানুষগুলোর ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলে আশ্রয় কেন্দ্রের মানুষগুলো যার যার বাড়িঘরে ফিরে যাবেন। সর্বোপরি প্রাকৃতিক এ দুর্যোগে চাঁদপুর জেলার কোথাও তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় জেলাবাসী মহান আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করেছে এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। একই সাথে তারা জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার আগাম ব্যাপক প্রস্তুতিতে সন্তোষ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।