English Version
আপডেট : ১৭ মে, ২০১৬ ১৮:৩৫

আতঙ্কে দিন কাটাছে সংখ্যালঘুরা

অনলাইন ডেস্ক
আতঙ্কে দিন কাটাছে সংখ্যালঘুরা

আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা হুমকি ও জীবন নাশের আতঙ্কে দিন কাটছে নড়াইলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। অনেকে ভয়ে ভারতে পাড়ি জমাচ্ছে।

নড়াইলের ৫নং সালামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কে কেন্দ্র করে প্রায় দুই শতাধিক হিন্দু পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। দলীয় প্রতিপক্ষদের অব্যাহত হুমকিতে অসহায় হয়ে পড়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক পরিবারগুলো। অপরাধ একটাই, তা হলো নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের চেয়ারম্যান প্রার্থীর পক্ষে কাজ করা। হিন্দু পরিবারগুলোর পাশাপাশি ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান ২৮ মে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এস,এম নাজমুল হক প্রিন্সও প্রতিপক্ষদের নানা ধরনের হুমকিতে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে শেষ মেষ প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন।

ভূক্তভোগীরা জানা গেছে, কালিয়া উপজেলার ৫নং সালামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এস,এম নাজমুল হক প্রিন্স (মোটরসাইকেল প্রতিক)কে সমর্থন করায় দেবীপুর গ্রামের দুই শতাধিক হিন্দু পরিবারকে ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের দলীয় প্রার্থী (নৌকা প্রতিক) শামীম আহম্মেদের সমর্থকরা জীবননাশের হুমকি দিয়েছে।

এ ঘটনায় ভূক্তভোগীরা কালিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন। 

সোমবার (১৬ মে) বিকালে সরেজমিনে গেলে, দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা  ৪নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি নিখিল চন্দ্র দাস অভিযোগ করেন, ১১ মে দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম আহম্মেদের সমর্থক ৪নং ওয়ার্ডের মেম্বার প্রার্থী নন্দ কুমার দাস এবং তার ভাই অসিম কুমার দাস অখিল, দিপক কুমার দাস সহ ১০/১২ জনে দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে আমার চাচাত ভাই গোবিন্দ দাস ও নিরাপদ দাস সহ আমার বাড়িতে  চড়াও হয়ে সবাইকেই গালিগালাজ করে এবং জীবণনাশের হুমকি দেয়।

তারা প্রকাশ্যে হুমকি দেয় যে, নৌকা প্রতিকে ভোট না দিলে তোদের গ্রামছাড়া করা হবে। তোদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হবে। দেবীপুর গ্রামের গোবিন্দ দাস, অনিতা দাস, হরসিদ কুমার দাস অভিযোগ করে বলেন, আমরা আওয়ামী লীগ করি।

আজ আমাদের বাড়িতে সন্ত্রাসীরা রামদা, লাঠি, ছুরি নিয়ে এসে আমাদের  হত্যার হুমকি দিচ্ছে। আমাদের অপরাধ, আমরা পছন্দের প্রার্থীকে সমর্থন করেছি। নিখিল দাসের স্ত্রী সাবিত্রি দাস ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বলেন, আমার স্বামী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি অথচ নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর লোকজন বাড়ির পর এসে হত্যাসহ নানা হুমকি দিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর লোক, আজ বঙ্গবন্ধুর কণ্যা হিন্দুদের নিরাপত্তা দেবেন অথচ আমরা নৌকা মার্কার লোকজনের হুমকিতে গ্রামে বসবাস করতে পারছি না। এখন জীবন মৃত্যুর মুখোমুখি।

গোবিন্দ দাসের স্ত্রী হারতি রাণী বলেন, আওয়ামী লীগ করেই বিপদে পড়িছি। রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। ভয় করছে কখন,কত রাত্রে নৌকার লোকজন বাড়িঘর আগুনে জ্বালিয়ে দিয়ে আমাগে হত্যা করে।

অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষ মেম্বার প্রার্থী নন্দ কুমার দাস ও তার ভাই অখিল কুমার দাস নিজেরা নিজেদের খড়েরপালায় আগুন দিয়ে এখন আমাদের হয়রানি করছে।

দেবীপুর গ্রামের বাসিন্দা গনপদি দাস ও রিপন দাস বলেন, নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেব। কিন্তু আজ হুমকি দেয়া হচ্ছে। এই এলাকার হিন্দু পরিবারগুলো শেষমেষ ভোট কেন্দ্রে পৌঁছে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

অখিল কুমার দাস পাল্টা অভিযোগ করেন প্রতিপক্ষ নিখিল চন্দ্র দাসরাই আমাদের খড়েরপালায় আগুন দিয়েছে। হুমকি দেয়ার ঘটনায় নিখিল চন্দ্র দাস ১২ মে কালিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন। যার নং-৩৮২।

এদিকে, সালামাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এস,এম নাজমুল হক প্রিন্স কে কয়েকদফায় নির্বাচন বর্জন ও হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। নাজমুল হক প্রিন্স জানান, নির্বাচনে টাকা জমা দেবার পর থেকে আমাকে নানাভাবে হুমকি দেয়া হচ্ছে। গত ১১ মে বেলা সাড়ে ১১টার পর ০১৭১৯৩৭৭৫৫৭ নাম্বার থেকে আমার ফোনে ফোন করে আমাকে আসন্ন নির্বাচন থেকে সরে যেতে হুমকি দেয়া হয়েছে। অন্যথায় হত্যা করা হবে বলে জানিয়েছে। এ ঘটনায় আমি কালিয়া থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। যার নং- ৩৫২।

অপরদিকে, ধুশাহাটি গ্রামের আঃ সালাম শেখের ছেলে আঃ সোবহান শেখ অভিযোগ করে গত ১২মে বিকালে নৌকা প্রতিকের প্রার্থী শামীম আহম্মেদ তাকে ফোনে হুমকি দিয়েছে যে, হয় আমার কাজ করবি, না হয় পঙ্গু করে দেবো। হুমকির দেবার কথা অস্বীকার করে শামীম আহম্মেদ বলেন, সোবহান হিন্দুদের নৌকার বিপক্ষে ভোট দেবার জন্য প্রচারনা চালাচ্ছে, হুমকি দিচ্ছে। অথচ তারাতো নৌকার সমর্থক। বিষয়টি প্রশাসনকে জানিয়েছি। কালিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শেখ গণি মিয়া বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হক প্রিন্স কে হুমকি দেবার ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তদন্তকার্যক্রম চলছে। দেবীপুর গ্রামে খড়েরপালায় আগুন দেবার বিষয়টি পরিকল্পিত একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা । নিজেরাই আগুন দিয়ে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করছে। কোন ঘটনার খবর পাওয়ার সাথে সাথে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পুলিশ তড়িৎ ব্যবস্থা নিচ্ছে।