English Version
আপডেট : ১৩ মে, ২০১৬ ২৩:৩২

নৌকার প্রচারণায় বাধা

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল প্রতিনিধি:
নৌকার প্রচারণায় বাধা

নড়াইলে নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সংসদ সদস্যের আস্তাভাজন সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। এনিয়ে প্রতিপক্ষের প্রচারণায় গুলি বর্ষণ করার অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর ও তার সমর্থকরা। তবে একে পটকাবাজি বলে উড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ।

গতকাল বুধবার (১৩) সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্থানীয় চাঁচুড়ি-পুরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছে এই ঘটনা ঘটে। 

ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বর্তমান চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান ও তার ভাই বহু অপকর্মের হোতা মশিয়ার রহমান এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। দুর্বৃত্তরা ১২নং চাঁচুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য ওবায়দুর রহমান মোল্যাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তিন রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে। কিন্তু দুর্বৃত্তদের ছোঁড়া গুলি অল্পে লক্ষভ্রষ্ট হওয়ার কারণে এবং সৌভাগ্যক্রমে ওবায়দুর মোল্যার শরীরে গুলি লাগেনি এবং হতাহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি। 

স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, ১২নং চাঁচুড়ি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মননীত প্রার্থী মো. হীরক মোল্যার পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণারকালে একই এলাকা ইউপি সদস্য পদপ্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এবং আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. লুৎফর রহমান তার ভাই মশিয়ারসহ অর্ধ শতাধিক লোকজন নিয়ে ওবায়দুর মোল্যাকে আক্রমণ করে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে প্রাণের ভয়ে ওবায়দুর মোল্যা দৌঁড় দিলে মশিয়ার তার অবৈধ সাটারগান থেকে ওবায়দুর মোল্যাকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি বর্ষণ ছোড়ে। কিন্তু গুলিগুলো লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে এযাত্রায় প্রাণে বেচে যান ওবায়েদ মোল্লা।

এনিয়ে হট্টগোল এবং গুলির শব্দ শুনে এলাকাবাসী এগিয়ে এলে চেয়ারম্যান লুৎফর ও তার দলবল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর থেকেই এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয় জনতা চেয়ারম্যান লুৎফর ও তার ভাই মশিয়ারের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না। পূর্বে অনেকবার মশিয়ার ও তার বাহিনীর বিরুদ্ধে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলেও প্রশাসন তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গস্খহণ নেয়নি। তাছাড়া সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তির সম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে একটি ক্লাব নির্মাণ করেছে। এর ফলে সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এবং এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে যাচ্ছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি ঢাকা পোস্টকে জানান, চেয়ারম্যান লুৎফর স্থানীয় সংসদ সদস্যের শক্তিকে পুঁজি করে এবং তার ভাই মশিয়ারের সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের হুমকি দিয়ে আসছে। আর তাদের এ অপকর্মে সহায়তা করছে কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গণি মিয়া ও এসআই আতিক। পুলিশকে সাথে নিয়েই তারা নিরীহ মানুষকে হয়রানি করছে বলেও অনেকে অভিযোগ করেছে। তাছাড়া চেয়ারম্যান ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে থানায় কোন অভিযোগ দায়ের করতে গেলে ওসি মো. গণি মিয়া ও এসআই আতিক টালবাহানা করছে। এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার নামে পুলিশের এরূপ আচরণ জনগণের নিকট প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। 

এ ব্যাপারে কালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গণি মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঘটনার সময় কে বা কারা পটাকা ফুঁটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গোলাগুলির কোন আলামত পাওয়া যায়নি। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে পুলিশকে অনেক পদক্ষেপ নিতে হয়। অনেক সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জও করতে হয়। কিছুদিন পূর্বে সংঘঠিত এরকমই একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নৌকার সমর্থকেরা পুলিশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনেছে। তিনি আরো বলেন, পুলিশ কারো পক্ষপাতিত্ব করে না। তাছাড়া এসআই আতিক আমার নির্দেশেই কাজ করে। সুতরাং তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। 

এসপি (সার্কেল সদর) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার খবর পেয়ে আমি সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। সেখানে গোলাগুলির কোন ঘটনা ঘটেনি। নাশকতাকারীরা আতশবাজি বা পটকাজাতীয় কিছু ফুুঁটিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল।

ভুক্তভোগীর পক্ষ থেকে দেওয়া লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, স্থানীয় সংসদ সদস্যের মদদে চেয়ারম্যান লুৎফর ও তার ভাই মশিয়ার এলাকায় ত্রাশ সৃষ্টি করে রেখেছে। তারা প্রকাশ্যে অবৈধ অস্ত্র ঠেকিয়ে মানুষকে হুমকি দিয়ে থাকে। তাছাড়া এলাকায় জুয়ার আড্ডা, মাদকের ব্যবসা, চুরি, ডাকাতি সংঘটনের পেছনে মশিয়ার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকে। বর্তমানে মশিয়ারের বিরুদ্ধে দুইটি হত্যা মামলাসহ একাধিক ধর্ষণ, চুরি, ডাকাতি, লুটপাটের মামলা রয়েছে। কিন্তু প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সে থেকে যাচ্ছে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে এবং প্রকাশ্যেই সকল অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে। 

লিখিত অভিযোগ থেকে আরও জানা যায়, আসন্ন ইউপি নির্বাচনে বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ লুৎফর রহমান (আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী) কে বিজয়ী করার লক্ষ্যে তারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনসহ এলাকার নিরীহ মানুষকে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে। কিন্তু প্রাণের ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস দেখায় না। স্থানীয় ভোটাররা শান্তিতে নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন কী না এ ব্যাপারে অনেকে সন্দিহান প্রকাশ করেছেন। ভোট ডাকাতির ভয়েও রয়েছেন অনেকেই। 

এ ব্যাপারে পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলাম জানান, উক্ত ঘটনায় থানায় কোন মামলা হয়ে থাকলে পুলিশ সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনবে। বর্তমানে এলাকাকে শান্তিপূর্ণ রাখার লক্ষ্যে এবং আসন্ন ইউপি নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য এলাকাবাসী প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছে। সন্ত্রাসী মশিয়ারকে আইনের আওতায় নিয়ে এলাকাকে নিরাপদ রাখার জন্যও এলাকাবাসী জোর দাবি জানিয়েছেন।