English Version
আপডেট : ৯ মে, ২০১৬ ২০:০২

অগ্রগতি নেই কালনা সেতুর

উজ্জ্বল রায়
অগ্রগতি নেই কালনা সেতুর

নড়াইল-গোপালগঞ্জ সীমান্তবর্তী চারলেন বিশিষ্ট কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর হওয়ার পরও কোন অগ্রগতি নেই। এতে করে হতাশায় রযেছেন উভয় জেলার নানা পেশার জনগন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ জানুয়ারি (২০১৫) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নড়াইল-গোপালগঞ্জ সীমান্তবর্তী কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরআগে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় মধুমতি নদীর ওপর কালনা সেতু প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। 

প্রকল্পের সারসংক্ষেপ থেকে জানা যায়, কালনা সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬শ’ ৮০ মিটার, প্রস্থ ১৮.২০ মিটার এবং ১০টি পিসি গার্ডার ও তিনটি বক্স গার্ডার। এছাড়া ৩.৫০ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ ও ১২.৬৪ হেক্টর ভূমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন কাজ রয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়ে ২০১৭ সালের জুনে নির্মাণ শেষ করা হবে বলে কালনা সেতু প্রকল্পে উল্লেখ করা হয়।

যদিও এর এক বছর পরে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর  স্থাপন করা হয়। আর জাপান ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন অ্যাজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে প্রায় তিনশ’ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মিত হওয়ায় কথা রয়েছে।

এদিকে, গত ৯ জানুয়ারি (২০১৫) কালনা সেতুর স্থান পরিদর্শনে এসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, এ বছর এপ্রিলেই কালনা সেতুর কাজ শুরু হবে। এছাড়া কালনা সেতুর সাথে রেল সেতু সংযোজনের চিন্তাও রয়েছে।

তবে, এখনো পর্যন্ত কালনা সেতুর নকশা (ডিজাইন) হয়নি বলে সড়ক ও জনপথ এবং সেতু বাস্তবায়নকারী প্রকল্প ‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট বাংলাদেশ’ সূত্রে জানা গেছে।

সেতুটি নির্মিত হলে বেনাপোল-যশোর-নড়াইল-কালনা-ভাটিয়াপাড়া-ভাঙ্গা-পদ্মা সেতু-মাওয়া-ঢাকা-সিলেট-তামাবিল সড়কের মাধ্যমে ‘আঞ্চলিক সড়ক যোগাযোগ’ স্থাপিত হবে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক ও খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটির কার্যকরী সভাপতি ছাদেক আহম্মেদ খান বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পরে আমরা খুব আশান্বিত হলেও জমি অধিগ্রহণসহ বাস্তবে সেতুর কোনো কার্যক্রম দেখছি না। অথচ এই কালনা সেতুর গুরুত্ব অপরিসীম। সেতুটি নির্মিত হলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে বেনাপোলসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সহজ ও উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার জ্বালানি তেল সাশ্রয় হবে।

আশা করছি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেতু নির্মাণে দ্রুত উদ্যোগী হবে।

জেলা অনলাইন মিডিয়া ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ হিমেল মোল্যা বলেন, মধুমতি নদীর কালনাঘাটের পশ্চিমপ্রান্তে নড়াইল এবং পূর্বপ্রান্তে গোপালগঞ্জ জেলার অবস্থান। সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কালনাঘাটটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে আসছে। এ ঘাট দিয়ে খুলনা, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, যশোর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, বরিশাল, মাদারীপুর, ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সড়কে যাত্রীবাহীবাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে।

যাত্রীবাহী বাসসহ অন্য যানবাহন চালকেরা জানান, কালনাঘাটে প্রতিনিয়ত অসংখ্য যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় থাকলেও বেশির ভাগ সময় আধাঘণ্টা বা তার চেয়ে বেশি সময় দেরিতে ফেরি এপার থেকে ওপারে ছেড়ে যায়। সেতুটি নির্মিত হলে এ ভোগান্তির অবসান হতো।

নড়াইল জেলা বাস ও মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী জহিরুল হক জানান, কালনা ফেরিঘাট থেকে ঢাকার দুরত্ব ১০৮ কিলোমিটার, নড়াইল ১৯ কিলোমিটার, যশোর ৫৩ এবং বেনাপোল ৯৩ কিলোমিটার। এক্ষেত্রে বেনাপোল-কালনা-ঢাকা সড়ক ২০১ কিলোমিটার, যশোর-ঢাকা ১৬১ কিলোমিটার, নড়াইল-ঢাকা ১২৭ কিলোমিটার, খুলনা-বসুন্দিয়া-ধলগা-কালনা-ঢাকা ১৯০ কিলোমিটার। অথচ দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাট দিয়ে ঢাকা যেতে এসব সড়কে ৩০০ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার অতিক্রম করতে হয়। তাই স্বল্প সময়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে কালনা সেতু দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

নড়াইল জেলা উন্নয়ন সমন্বয় ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শরীফ মুনীর হোসেন বলেন, ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের প্রায় ১০ মাসেও কালনা সেতুর কোনো কার্যক্রম দেখছি না। দরপত্র (টেন্ডার) না হওয়ায় আমাদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে।

কৃষি গবেষক ও বাংলাদেশ কৃষক সমিতি নড়াইল জেলা সভাপতি খন্দকার শওকত বলেন, দক্ষিণবঙ্গের কৃষি ও কৃষকের ভাগ্য উন্নয়নসহ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে স্বল্প সময়ে বাংলাদেশ-ভারতে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি-রফতানিতে কালনা সেতু বাস্তবায়ন একান্ত প্রয়োজন।

নড়াইলের বিচারক আদালতের (জজকোর্ট) আইনজীবী রমা রাণী রায় বলেন, ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নড়াইলের সুলতান মঞ্চে নির্বাচনী জনসভায় কালনা সেতু নির্মাণের অঙ্গীকার করেছিলেন। তারই ধারাবাহিকতায় কালনা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। আশা করছি, সেই কাজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতেই শুরু হবে।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ গোপালগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী সমীরন রায় জানান, কালনা সেতুর নকশা ও দরপত্র (টেন্ডার) এখনো হয়নি। এক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য কাজও শুরু হয়নি।

সেতু বাস্তবায়নকারী প্রকল্প ‘ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট বাংলাদেশ’ এর প্রকল্প পরিচালক আব্দুল বাকি মিয়া জানান, প্রথমদিকে সরকারের পক্ষ থেকে সেতুটি নির্মাণের কথা থাকলেও পরবর্তীতে জাইকার সহযোগিতা চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে জাইকার পক্ষ থেকে মাঠ পর্যায়ের (ফিল্ড স্টাডি) কাজ চলছে। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর সেতুর নকশা বিষয়ে কথা বলা যাবে। কতদিনের মধ্যে সেতুর নকশার কাজ শুরু হবে ? এ প্রশ্নে আব্দুল বাকি মিয়া বলেন, এ মুহূর্তে আগাম কিছু বলা যাচ্ছে না।