কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসকসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

কুষ্টিয়ায় ফসলি (ধানী) জমিকে বাড়ি দেখিয়ে সরকারের প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সাবেক এক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক ও প্রশাসনের ৫ কর্মকর্তাসহ ২৮ জনকে আসামী কওে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রশাসনের কর্মকর্তারাও ছাড়াও জমির মালিকরাও আসামী হয়েছেন এ মামলায়। মামলায় যে কোন সময় গ্রেফতার হতে পারেন আসামীরা।
মামলার অন্যতম আসামী অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক খন্দকার আজীম বর্তমানে মাগুরায় কর্মরত। মামলা দায়ের করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার উপ-পরিচালক আব্দুল গফ্ফার। গত ২৬ এপ্রিল রাতে কুষ্টিয়া মডেল থানায় উপস্থিত হয়ে তিনি এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ‘ভেড়ামারা- খুলনা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন নির্মাণ প্রকল্পের’ জমি অধিগ্রহনে ‘ধানী জমি’ কে ‘ভিটা’ শ্রেনী হিসেবে দেখিয়ে আসামীরা পরস্পর যোগসাজসে অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারনা পুর্বক অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারের ২ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার ৩৩৩ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হওয়ায় এ মামলা দায়ের করা হয়।
মামলার আসামীরা হলেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক কাননুগো বর্তমানে যশোর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মরত রেজাউল করিম, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক ভুমি দখল কর্মকর্তা বর্তমানে রাজশাহী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার মখলেসুর রহমান, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক সার্ভেয়ার (বর্তমানে চাকুরীচ্যুত) রবিউল ইসলাম, কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সাবেক ভূমি অধিগ্রহন কর্মকর্তা বর্তমান মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মরত আবুল কালাম, কুষ্টিয়ার সাবেক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বর্তমানে মাগুরা জেলার স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক খন্দকার আজিম আহম্মেদ, অধিগ্রহনকৃত জমির ২৩জন মালিক জগতি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান খসরুব হোসেন খোকন, সৈয়দ আলী নাজিম মনিরুজ্জামান, রোকেয়া খাতুন,শাজাহান খান খোকন, আলতাফ হোসেন খান, মাহফুজা খানম, হোসনা ও হোসনা পারভিন, লালজান খাতুন,মীর রকিবুজ্জামান, মীর রুকনুজ্জামান, ফরিদুল ইসলাম তারা, লাইলী বেগম,আব্দুল মান্নান, আনোয়ার হোসেন ওরফে আনারুল, বাচ্চু মিয়া, রুস্তম আলী, আবু হানিফ, নুরজাহান, মতিয়ার রহমান, তোফাজ্জল হোসেন, মহর আলী মন্ডল, আলাউদ্দিন ও জোমারত সর্দার।
মামলার এজাহারে উলেখ করা হয়েছে- আসামীদ্বয় পরস্পর যোগসাজশে বিধি বহির্ভুত এলএ কেস নং-০৬/২০০৯-১০ এর আওতায় ‘ভেড়ামারা-খুলনা গ্যাস সঞ্চালন পাইপ লাইন নির্মান প্রকল্পে ’কুষ্টিয়া জেলা সদর উপজেলার বটতৈল মৌজার ০.০৮৬৫ একর ধানি জমির স্থলে ৩.৩৯৩ একর জমিকে ভিটা শ্রেনী দেখিয়ে অতিরিক্ত ঐ পরিমান টাকা আত্মসাত করে। সরকারের ২ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার ৩৩৩ টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধন পূর্বক আসামীরা আত্মসাত করায় দন্ডবিধির ৪০৬/৪২০/৪০৯/১০৯ তৎসহ ১৯৪৭ সালের ২নং দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হয়েছে।
মামলার আরজিতে আরো উলেখ করা হয় যে, দুদক ঢাকার নির্দেশে অভিযোগভুক্ত করে অনুসন্ধান পরিচালনা শেষে প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হয়েছে যে, বিভিন্ন এওয়ার্ডের ৫নং কলামে ‘জমির শ্রেনীর জায়গায়’ ‘‘ ভিটা/ধানী’’ শ্রেনী লিখে ‘‘ভিটা/বাড়ি’’ হিসেবে জমির ক্ষতি পুরনের টাকা নির্ধারন করে এওয়ার্ড প্রস্তুত করা হয়।
প্রস্তুতকৃত এওয়ার্ড অনুযায়ী জমির মালিকগণের অনুকুলে জমির ক্ষতি পুরনের চেক বিতরণ রেজিষ্ট্রাওে স্বাক্ষর করে ঐ জমির মালিকগণ চেক গ্রহন করেন। মামলার আরজিতে আরো উলেখ করা হয় যে, অভিযোগটি প্রাথমিকভাবে প্রমানিত হওয়ায় আসামীদের বিরুদ্ধে বর্ণিত ধারায় নিয়মিত মামলা করার সুপারিশ চেয়ে দুদক প্রধান কার্যালয়ে অনুসন্ধান
প্রতিবেদন পাঠানো হলে আসামীদেও বিরুদ্ধে বর্ণিত ধারায় মামলা দায়েরের অনুমোদন দেয়া হয়। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে-মামলার তদন্তে আরো যাদেও সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদেরকেও চার্জশীটভুক্ত করা হবে। এদিকে দুদক কুষ্টিয়া অফিসের একটি সূত্র জানায়- মামলার আসামীদের আইনের আওতায় আনতে যে কোন মুহুর্তে আসামীদেও গ্রেফতারের অভিযানে নামবে দুদুক।