English Version
আপডেট : ২২ এপ্রিল, ২০১৬ ১৮:২১

পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হলো সোহেলের

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল প্রতিনিধি:
পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হলো সোহেলের
ছবির ক্যাপশন হবে নড়াইলে পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন ভঙ্গ হলো সড়ক দুর্ঘটনায়।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মাকড়াইল গ্রামে সড়ক দুর্ঘটনায় সোহেল নামে অষ্টম শ্রেণি পড়ুয়া এক স্কুল ছাত্র নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে লাহুড়িয়া-ডহরপাড়া কালীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন তেঁতুলবাড়ীয়ার মোড়ে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটে। সোহেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঘটনার সময় সোহেল কয়েকজন যাত্রী নিয়ে তার ভ্যানে করে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে লাহুড়িয়া-ডহরপাড়া কালীগঞ্জ বাজার সংলগ্ন তেঁতুলবাড়ীয়ার মোড়ে পৌঁছালে তার ভ্যানের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি খাদে পড়ে যায়। এতে করে সোহেলের মাথায় প্রচণ্ড আঘাত লাগে এবং ঘটনাস্থলেই সে মারা যায়।

পরবর্তীতে এলাকাবাসী এসে তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ডাঃ বাতেন খাঁনের কাছে নিয়ে গেলে সোহেল অনেক আগেই মারা গেছে বলে তিনি জানান।

জানা গেছে, সোহেল স্থানীয় মাকড়াইল কে.কে.এস.ই. নীঃ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ার কারণে সে পড়াশুনার পাশাপাশি মাঝে মধ্যে সে তার বাবার নিজস্ব ইঞ্জিন ভ্যান চালাতো। নিজের পড়াশুনার খরচ যোগানো ও পরিবারের ভরণ পোষণে সহায়তা করার জন্য সোহেল এ কাজ করতো বলে তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।

এছাড়াও সে তার কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে ছোট বোনের কাপড় কেনা ও সহপাঠীদের চকলেট কিনে খাওয়াতো বলেও জানা গেছে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে সোহেলকে অকালেই চলে যেতে হলো পৃথিবীর মায়া ছেড়ে।

এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, সোহেল খুব ভালো ছেলে ছিল। কখনও কারো সাথে ঝগড়া-বিবাদ করতো না এছাড়া ছোট বেলা থেকে সে কখনও নিজের কথা ভাবেনি। তার পরিবারের সুখের জন্য পড়াশুনার পাশাপাশি বিকেল বেলায় বাবার ইঞ্জিনচালিত ভ্যান চালিয়ে অর্থ উপার্জন করতো। সোহেল নিহত হওয়ায় এলাকায় শোকের মাতম চলছে।

সোহেলের বাবা ফজল মোল্যা বিলাপ করে বলেন, আমার সোহেল পুলিশ হতে চেয়েছিল। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনা আমার ছেলের জীবনটা কেঁড়ে নিল। আমার সোহেলকে পুলিশ হতে দেখতে পারলাম না। সোহেলের মা বারবার মুর্ছা যাওয়ার কারণে তার সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। সোহেলের সহপাঠীরা জানায়, সোহেলের মতো একটি ভালো ছেলে বর্তমান সমাজে খুবই বিরল। সে কষ্ট করে টাকা উপার্জন করে বন্ধুদের চকলেট কিনে খাওয়াতে কখনও কার্পন্যতা করতো না। এছাড়া সময় পেলেই সে বন্ধু কাদের ও সুমনের সাথে গল্প করতে চলে যেত। সোহেলের এক শিক্ষক জানান, সোহেল একজন মেধাবী ছাত্র ছিল। সে নিয়মিত বিদ্যালয়ে আসতো এবং ঠিকমতো পড়াশুনা করতো। আমরা আশাবাদী ছিলাম সোহেল ভবিষ্যতে তার স্বপ্ন পুরণে সফল হবে। এছাড়া দারিদ্রতার কারণে সে বাবার ভ্যান চালাতেও পিছপা হয়নি। কিন্তু সবকিছু কেমন জানি এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেল।

শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর সোহেলের জানাজা সম্পন্ন হয় বলে তার পরিবারের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের নিশ্চিত করেছেন। দরিদ্রতাই কেড়ে নিল সোহেলের স্বপ্ন। কারণ সে যদি সমাজের আর দশটা শিশুর মতো স্বাভাবিকভাবে পড়াশুনা করার সুযোগ পেতো তাহলে হয়তো তার বাবা-মাকে আজ এদিনটা দেখতে হতো না এবং সোহেলও বড় হয়ে বাংলাদেশ পুলিশের একজন গর্বিত সৈনিক হয়ে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করার সুযোগ পেত।