নির্বাচনী প্রচারনার দুই পক্ষের সংঘর্ষে আটক ২৭

একই জায়গায় নির্বাচনী প্রচারনা ও মিছিল করাকে কেন্দ্র করে গতকাল রাতে কালিয়ার বাঐসোনা ইউনিয়নের চরডুমুরিয়া গ্রামে আওয়ামীলীগ প্রার্থী ও স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে এক পুলিশসহ ৩ জন আহত হয়েছে। অবশ্য এসময়ে ২৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
জানা যায়, আহতদেরকে গোপালগঞ্জ ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ থামাতে পুলিশ ১৭ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি বর্ষন করেছে। ওই ঘটনায় পুলিশ আ.লীগ ও যুবলীগ নেতাসহ ২৭ জনকে আটক করেছে।
ব্যাপক পুলিশী অভিযানের মুখে ঘটনা স্থল চরডুমুরিয়া গ্রাম পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে। ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
ওই গ্রামের বাসিন্দা ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারন সদস্য পদের প্রার্থী মিজানুর রহমানের স্ত্রী লিমা বেগম ও জামাল সরদারের স্ত্রী মমতাজ বেগমসহ অনেকেই জানান, ওই রাত ৯ টার দিকে মিজানুরের বাড়িতে একটি নির্বাচনী বৈঠক চলাকালে ওই ইউনিয়নের আ.লীগ প্রার্থী শাহ মোঃ ফোরকান মোল্যা কয়েকটি মটর সাইকেল নিয়ে মিজানুরের বাড়ির সামনের রাস্তায় থামলে ওই বৈঠকে থাকা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. চুন্নু শেখের সমর্থকরা রাস্তায় নেমে চুন্নুর সমর্থনে মিছিল শুরু করলে ফোরকান মোল্যা তার লাইসেন্সকৃত শর্টগান দিয়ে ২/৩ রাউন্ড ফাকা গুলি বর্ষন করলে দুই গ্র“পের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
ঘটনা স্থলের পাশে থাকা টহল পুলিশের একটি দল সেখানে পৌছে সংঘর্ষ থামাতে চেষ্টা করলে নড়াগাতি থানার কনেষ্টবল মো গোলাম ফারুককে দুস্কৃতকারিরা কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে। তাকে প্রথমে কালিয়া হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এছাড়া স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই সংঘর্ষে চরডুমুরিয়া গ্রামের হৃদয় শেখ (১২) ও ডাবলু শেখ (৪৫) আহত হয়েছেন। তাদেরকে গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনা স্থল থেকে পুলিশ ভাংচুর হওয়া ৯টি মটর সাইকেল উদ্ধার করেছে।
ওই ঘটনায় পুলিশ বাঐসোনা ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারন সম্পাদক উত্তর ডুমুরিয়া গ্রামের শামীম মোল্যা ও জেলা যুব লীগের সহ সভাপতি সালাউদ্দিন বশির কানাইপুর গ্রামের লিটন মোল্যা (২৭), তাহিদুল ইসলাম (২৫), নইমুল ইসলাম (২৫), কামরুজ্জামান মোল্যা (৩৫), রাহাত মোল্যা (৫০), নকুল কুমার বাউলি (৪০), উত্তরডুমুরিয়া গ্রামের নাজমুল (২৫), কিনাই মোল্যা, (৫০)হেমায়েত শেখ (৫৫), নিধিপুর গ্রামের সাইবুর মোল্যা (১৮), শাহ মো. ইমন মোল্যা (১৮), বাঐসোনা গ্রামের বিল্লাল হোসেন (৫০), যোগানিয়া গ্রামের মানিক শেখ (১৮), শিমুল শেখ (২২), রুমান খন্দকার (১৮), এলাহী খন্দকার (২৪), সাখাওয়াত হোসেন (৫৫), গোলাম রসুল (৫০), ফুল মিয়া কাজী (২৩), চরকেকানিয়া গ্রামের জিন্নাত খা (৩২), কালিয়া থানার নলডাঙ্গা গ্রামের কামাল শেখ (৩৫) ও খুলনার তেরখাদা থানার কুমিরডাঙ্গা গ্রামের ইমদাদুল ফকিরকে(১৮) আটক করেছে।
গ্রেফতার এড়াতে ওই গ্রামের পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। সরেজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে মহিলা ও শিশু ছাড়া পুরুষের দেখা মেলেনি। তাদের মধ্যে বিরাজ করছে এক অজানা আতংক।
আ.লীগ প্রার্থী শাহ মোঃ ফোরকান মোল্যা বলেছেন, তিনি ওই রাতে গনসংযোগ করতে মিজানুরের বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় চুন্নুর সমর্থকরা মিছিল করে তাদের ওপর হামলা চালালে তিনি শর্টগান দিয়ে ফাঁকা গুলি বর্ষন করে মটর সাইকেল ফেলে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন। চুন্নুর সমর্থকরা তাদের ৫/৬ টি মটর সাইকেল ভাংচুর করেছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. চুন্নু শেখর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছেন, তিনি ওই সংঘর্ষের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। একটি মামলায় জামিনের জন্য তিনি বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ওই বৈঠকে যাননি।
নড়াগাতি থানার ওসি লস্কার জায়াদুল হক ওই ঘটনাকে ফোরকান মোল্যা ও চুন্নু শেখের মধ্যকার নির্বাচনী সহিংসতা হিসাবে উল্লেখ করে বলেছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী চুন্নু শেখ একটি মামলার পলাতক আসামী হওয়ায় তাকে ধরতে পুলিশ ঘটনা স্থলের পাশেই ছিল। এবং সংঘর্ষ ঠেকাতে গিয়ে কনেস্টবল ফারুক আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ১৭ রাউন্ড শর্টগানের ফাঁকা গুলি বর্ষন করেছে। ওই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে উভয় পক্ষের ২৭ জনকে আটক করা হয়েছে। অপরাধিদের ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ঘটনা স্থল থেকে ভাংচুর হওয়া ৯টি মটর সাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনা স্থল পরিদর্শন করেছেন।