English Version
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০১৬ ১৪:৪২

নববর্ষে নড়াইলে ঐতিহ্য ঘোড়াদৌড়

অনলাইন ডেস্ক
 নববর্ষে নড়াইলে ঐতিহ্য ঘোড়াদৌড়

নড়াইলে নবগঙ্গা নদীর পাড়ে আকবর আমল হতে বাংলা নববর্ষে হয়ে আসছে ব্রাহ্মণডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহি গ্রামীণ আড়ং। পুরনো বছরের সকল গ্লানি ধুয়ে মুছে নতুন বছরকে বরণ করতে  ব্রাহ্মণডাঙ্গায় পহেলা বৈশাখে এই আড়ংকে ঘিরে ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতার আয়োজন হয়।

দেখি নাই কোথাও চক্ষু মেলে বাংলাদেশে এমন প্রাণখোলা মেলা। মেলাকে ঘিরে প্রতিবছর  এই এলাকায় এক মিলন মেলা রূপে সাজে । নবগঙ্গা নদীর এপার-উপারের প্রতিটি গ্রামের বাড়িতে কুম্বের ঘ্রাণ পাই। ভাল-মন্দ খাবারের আয়োজন হয়। এ যেন চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি চর্চা। এটা কোন আইন বা অন্য কোন অনুশাসন দিয়ে চাপিয়ে রাখার নয়। যদিও বাড়তি আমেজে ভরপুর হয়ে উঠে মেলার মুল আয়োজনের চারটি গ্রাম।

তাদের দায়িত্বও বেশি থাকে। সফলতা ও ব্যর্থতা তাদের বেশিরভাগ বহন, দহন ও সহ্য করতে হয়। এবছর ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতায় নড়াইল, মাগুরা, যশোরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৫টি ঘোড়া অংশ নেয়। পয়েন্টভিত্তিক এই প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকারী ঘোড়ার মালিক নড়াইল সদর উপজেলার হৈদের খোলার শান্ত মিনাকে ছয় হাজার টাকা প্রদান করেন। পাশাপাশি দ্বিতীয় স্থান অধিকারী যশোরের অভয়নগরের ঘোড়ার মালিক জসিম মোল্যাকে ৪ হাজার টাকা এবং তৃতীয় স্থান অধিকারী লোহাগড়া উপজেলার নওখোলা গ্রামের ঘোড়ার মালিক ফাঁরুক খানকে ২ হাজার টাকা এবং অংশগ্রহণকারী সকল ঘোড়ার মালিককে সান্তনা পুরস্কার দেওয়া হয়।

মেলার অন্যতম আকর্ষন দলিত সম্প্রদায়ের তৈরী বাঁশ বেতের কুলা, ডুলা, চালন, ধামা, খুচি, পালা। প্রতিবছর এ ধরনের মালামাল মেলায় নিয়ে আসে নবগঙ্গার পারের ফেদীগ্রামের দলিত সম্প্রদায়ের মানুষ।

এছাড়া দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো দোকানী কুঠির শিল্প, হস্তশিল্প, কামার- কুমর শিল্প, বাঁশ বেত ও কাঠের জিনিসপত্র দিয়ে মেলার বাঙালিয়ানার ঐতিহ্য আবহাওয়া তৈরী করেন। মেলায় এসে ছেলে-মেয়েরা পরিচিত হন এসব উপকরনের সাথে।

মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম শরিফুজ্জামান জানান, এলাকাবাসীর আর্থিক সহযোগিতায় এ মেলার আয়োজন করা হলেও অর্থনেতিক সমস্যার কারনে মেলা চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কয়েকশত বছরের ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় ধরে রাখা সম্ভব। এজন্য তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।  গত ১৩, ১৪ ও ১৫ এপ্রিল দুদিন জুড়ে এই মেলায় ঐহিত্যবাহী লাঠিখেলা, হাড়িভাঙ্গা, ঘুড়ি ওড়ানো, দড়ি টানা, সাইক্লিং, সাতারসহ গ্রামীণ খেলাধুলা, জারীগানসহ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়।

উৎসবের বার্তা নিয়ে বছর ঘুরে আবারও বাংলা নববর্ষ ও মেলা ফিরে আসবে সেই প্রতীক্ষায় থাকবেন এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, আকবরের সময়কাল থেকেই পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন শুরু হয়। তখন প্রত্যেককে চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সকল খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হত। এর পর দিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে ভূমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টান্ন দ্বারা আপ্যায়ন করতেন। এ উপলক্ষ্যে বিভিন্ন উৎসবের আয়োজন করা হত। এই উৎসবটি একটি সামাজিক অনুষ্ঠানে পরিণত হয় যার রুপ পরিবর্তন হয়ে বর্তমানে এই পর্যায়ে এসেছে। তখনকার সময়ে এই দিনের প্রধান ঘটনা ছিল একটি হালখাতা তৈরি করা।

প্রকৃতপক্ষে হালখাতা হল বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানপাঠের হিসাব আনুষ্ঠানিকভাবে হালনাগাদ করার প্রক্রিয়া। গ্রাম, শহর বা বাণিজ্যিক এলাকা, সকল স্থানেই পুরনো বছরের হিসাব বই বন্ধ করে নতুন হিসাব বই খোলা হয়। হালখাতার দিনে দোকনদাররা তাদের ক্রেতাদের মিষ্টান্ন আপ্যায়ন করে থাকে। এই প্রথাটি এখনও অনেকাংশে প্রচলিত আছে, বিশেষত স্বর্ণের দোকানে। আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওযা যায়। পরবর্তী সময়ে ১৯৬৭ সনের আগে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয় নি।