English Version
আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০১৬ ০৭:৪৫

‘নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে’

বদলুল আলাম জাদু, লালমনরিহাট প্রতিনিধি:
নিজস্ব প্রতিবেদক
‘নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে’

পহেলা বৈশাখ। বাংলা নতুন বছরের শুরু। বাঙালির মনে সম্ভাবনার আলো জ্বালাতে আবারো এলো বৈশাখ। নতুন বছরের প্রথম আলো পাঠায় নতুন স্বপ্নের হাতছানি। ‘নব আনন্দে জাগো আজি নব রবি কিরণে/ শুভ্র সুন্দর প্রীতি-উজ্জ¦ল নির্মল জীবনে’।

পহেলা বৈশাখ একটি নতুন বছরের সূচনা। প্রতিটি মানুষের প্রত্যাশা নতুন বছর যেন বয়ে আনে শুভ্রতা, মঙ্গলবারতা। প্রতি বছরই আমরা দুবার নতুন বছরকে উদ্যাপন করি দুভাবে। ইংরেজি মাস আমাদের কেজো মাসের হিসাব বাচ্চার স্কুলে নতুন ক্লাস, দেয়ালে নতুন ক্যালেন্ডার, বাড়িওয়ালা ভাড়া বাড়াবে কি বাড়াবে না-এ নিয়ে মনের মাঝে দোলাচল। এসবের হিসাব-নিকাশ করতে করতেই স্বাগত নতুন বছরকে। কিন্তু পহেলা বৈশাখ ভিন্ন দ্যোতনা নিয়ে আসে। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে তীব্র আবেগ কাজ করে সবার মনে ? বাংলাদেশি বাঙালিদের কাছে পহেলা বৈশাখ উদযাপন আত্মপরিচয় সন্ধানের নাম।

সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলেও ঢাকায় পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু হয়েছিল বাঙালি সংস্কৃতিকে অবলম্বন করে প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে। পহেলা বৈশাখ উদযাপন হয়ে উঠেছিল একটি আন্দোলন। ছায়ানট যার কান্ডারি।

বাংলা সন গণনা শুরু হয়েছিল ফসলের হিসাবেই। মহামতি সম্রাট আকবরের আমলে আরবী ‘সনহ্’, যার অর্থ শতাব্দ বা অব্দ, থেকে বাংলা সন হয়েছে। এই ‘বাংলা সন’ এর নাম প্রথমে ছিল ‘ফসলি সন’। কিন্তু সেই সন গণনা ছিল এ অঞ্চলের মানুষের ফসল উত্পাদন ও জীবনযাত্রাকে অবলম্বন করেই। সেসময় বাংলা সনের শুরুর দিন এই পহেলা বৈশাখ উত্সবে মেতে উঠতো এ অঞ্চলের মানুষ। সেই আনন্দধারা এখনো বহমান। রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য দিল্লির সম্রাট আকবরের আমলে বৈশাখ থেকে প্রবর্তন হয়েছিল বাংলা সালের। বর্ষ শুরুর সেই দিনটিই এখন বাঙালির প্রাণের উত্সব। বাদশাহ আকবরের ‘নবরত সভার’ আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী খাজনা আদায়ের সুবিধার জন্য ফসলি সালের শুরু করেছিলেন, হিজরি চান্দ্রবর্ষকে বাংলা সালের সঙ্গে সমন্বয় সাধন করেছিলেন ও পহেলা বৈশাখ থেকে বাংলা নববর্ষ গণনা শুরু করেছিলেন। পহেলা বৈশাখের দিনে উৎসবের শুরুটা সেই মোগল আমল থেকে শরু। এ দিনে তিনি মিলিত হতেন প্রজাদের সঙ্গে। সবার শুভ কামনা করে চারদিকে বিতরণ করা হত মিষ্টি। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে বর্ষবরণ উৎসব চলে আসে জমিদার বাড়ির আঙিনায়। খাজনা আদায়ের মত একটি রসহীন বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিল গান-বাজনা, মেলা আর হালখাতার অনুষ্ঠান। দেশের সাধারণ ব্যবসায়ী মহলে ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠান মানে নতুন অর্থবছরের হিসাব খোলা। নতুন বছরের প্রথম দিনটিতে নতুন একটি ‘লাল কভারের’ খাতায় হিসাব খুলে নতুন উদ্যমে শুরু করা হয় ব্যবসা।

বাঙালী জাতি শত শত বছর ধরে নানা বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্যের মধ্য দিয়ে নববর্ষ উদযাপন করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় অশুভ, অকল্যাণ, দুঃখ বেদনা, গ্লানিকে মুছে ফেলে জেলায় দলমত, ছোট বড়, ধনি নির্ধন, সকলে মিলে শোভাযাত্রা, গ্রামীণ মেলা, আলোচনা সভা, বর্ষবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জেলাবাসী নববর্ষ উদ্যাপন করে। সকাল ৯টায় লালমনিরহাট সরকারি হাই স্কুল প্রাঙ্গন থেকে নববর্ষের শোভাযাত্রা বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেএশখ রাসেল শিশু পার্কের মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সৌধ প্রাঙ্গনে এসে শেষ হয়। শোভাযাত্রায় শিশু, কিশোর, কিশোরী, ছাত্র-ছাত্রী, যুবক-বৃদ্ধ, নর-নারীরা সুসজ্জিত রঙবে রঙের পোশাক পরে, নেচে গেয়ে, গ্রামীণ ঐতিহ্য ঘোড়ার গাড়ী, গরুর গাড়ী, পালকি ও ভ্যানে সুসজ্জিত হয়ে রঙিন কুলায়  বর্ষবরণ লেখা নিয়ে রমণীদের আনন্দ উচ্ছাসে পদযাত্রা মানুষের হৃদয়ে স্পন্দন সৃষ্টি করে।

মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গনে বর্ষ বরণের বৈশাখী গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়। পাশেই ছিল পান্তা উৎসব। এ কর্মসূচীতে জাতীয় সংসদ সদস্য এ্যাড. সফুরা বেগম, জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান, পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম, সিভিল সার্জন, লালমনিরহাট বার্তার সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এস.এম শফিকুল ইসলাম কানু, জেলা ও উপজেলা সরকাররি কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক কর্মী, এনজিও নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহন করেন।