English Version
আপডেট : ১৫ এপ্রিল, ২০১৬ ১৮:৪৮

নড়াইল ৫০ শয্যা হাসপাতালে জনবল সঙ্কটে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল প্রতিনিধি:
নড়াইল ৫০ শয্যা হাসপাতালে জনবল সঙ্কটে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি
নড়াইলের লোহাগড়ার ৫০ শয্যার হাসপাতাল

নড়াইলের লোহাগড়া হাসপাতালটি কাগজে-কলমে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন। এ ক্ষেত্রে রোগীরা ৫০ শয্যার সেবামূল্য গুনছেন, কিন্তু সুবিধা পাচ্ছেন ৩১ শয্যার। ২১ ডাক্তার ও ১৩ নার্স থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে হাসপাতালটিতে পাঁচ ডাক্তার ও সাত নার্স কর্মরত রয়েছেন। প্রতিদিন এ হাসপাতালে ২০০ থেকে ৩০০ রোগী সেবা নিতে আসেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক জানান, এখানে রোগীর এত চাপ থাকে যে, চিকিৎসাসেবা প্রদানে আমাদের হিমশিম খেতে হয়। হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, রোগীরা বেডের অভাবে মেঝেতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। পুরুষ এবং মহিলা ওয়ার্ডের টয়লেটের অবস্থা বেহাল। হাসপাতালের ঢাকনাবিহীন ড্রেনে বর্জ্য ভাসতে দেখা যায়। এতে পরিবেশ নষ্ট হলেও কর্তৃপক্ষ উদাসীন। এসব নিয়ে রোগীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।

স্বাধীনতার পর ৩১ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি চালু হয়। পরে বর্তমান সরকার হাসপাতালটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে একটি তিনতলা ভবন নির্মাণ করে। ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর নবনির্মিত ভবনটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। নতুন ভবনটি চালু না হওয়ায় রোগীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। ফলে ৩১ শয্যায় রোগীদের ভিড় বাড়ছে। বেড খালি না থাকায় পুরনো ভবনের বারান্দায় রোগীদের থাকতে হচ্ছে। অথচ নতুন ভবন প্রস্তুত হলেও অজ্ঞাত কারণে তা চালু হচ্ছে না বলে সূত্রে জানা গেছে।

গত বছরের ৪ নভেম্বর থেকে কাগজে-কলমে হাসপাতালটি ৫০ শয্যার কার্যক্রম শুরু করেছে। এরপর রোগীদের কাছ থেকে ৫০ শয্যার জন্য সেবামূল্য আদায় করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভবনের নিচতলায় টিকিট কাউন্টার এবং পাশের কয়েকটি কক্ষে ডাক্তারদের চেম্বার রয়েছে। নতুন ভবনের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে অপারেশন থিয়েটারের মূল্যবান যন্ত্রপাতি, অক্সিজেন সিলিন্ডার, জরুরি ওষুধ, আলট্রাসনো মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি বিক্ষিপ্তভাবে অযতেœ অবহেলায় পড়ে আছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকা এসব সরঞ্জাম নষ্ট হওয়ার পথে। তাছাড়া সনোলজিস্ট না থাকায় আলট্রাসনো সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা। হাসপাতালের এক্সরে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, পুরনো ভবনে ৩১ বেড থাকার কথা থাকলেও আছে ২৮টি। এতে অধিকাংশ রোগী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। চিকিৎসা নিতে আসা পৌর এলাকার গোপীনাথপুর গ্রামের জিনাত রেহানা বলেন, এত বড় হাসপাতালে পায়ের ব্যথায় ডাক্তার দেখাতে এসে বাইরে থেকে এক্সরে ও রক্ত পরীক্ষা করতে হচ্ছে। উপজেলার নেয়াগ্রাম ইউনিয়নের সত্রহাজারী গ্রামের সবুর কাজী বলেন, ভাইজিকে (ভাইয়ের মেয়ে) নিয়ে ডাক্তার দেখাতে এসেছি। সরকারি হাসপাতালে ফ্রি ডাক্তার দেখাতে পারলেও একটি ওষুধও বিনামূল্যে পেলাম না। সবই বাইরে থেকে কিনতে হলো।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লুৎফুন নাহার বলেন, কাগজে-কলমে হাসপাতালে ৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু। প্রয়োজনীয় জনবল ও সরঞ্জামাদির অভাবে বাস্তবে এর কার্যক্রম নেই। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ৩১ শয্যার ওষুধ বরাদ্দ আছে। তাই দিয়ে রোগীর সেবা দিচ্ছি। ৫০ শয্যার ক্ষেত্রে ২১ চিকিৎসকের থাকার কথা কিন্তু এখানে কর্মরত আছি মাত্র পাঁচজন। আশা করছি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে এ অবস্থার অবসান ঘটবে।