অঞ্চলের বেকারত্ব দুর করতে চাই

সিলেটে আজিরগঞ্জ বাগলা হাওরের ৩১ একর জমিতে মৎস্য ও কৃষি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন খুরশেদ-বদরুল দুই ভাই। নিজেদের উন্নয়নসহ এ অঞ্চলের কিছু মানুষের বেকারত্ব দুর করার লক্ষে তারা দু্’ভাই এ প্রকল্প কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
খুরশেদ-বদরুল ইচ্ছে ছিল ইউরোপের কোন একটি দেশে পাড়ি জমাবেন। কয়েক লাখ টাকা খরচও করেছেন। কিন্তু সে স্বপ্ন আপাতত স্থগিত। হাওরের এক ফসলি প্রায় ৩১ একর জমিতে মৎস্য ও কৃষি প্রকল্প হাতে নিয়েছেন খুরশেদ-বদরুল। পর্যায়ক্রমে এর পরিধি আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নিজেদের লাভের পাশাপাশি প্রায় শতাধিক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি হবে। সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার মধ্যবর্তী হাওরবেষ্টিত এলাকা আজিরগঞ্জ বাগলা হাওর। এ অঞ্চলের বাসিন্দা এ দুই ভাইয়ের।
দুই ভাই মিলে বাড়ির পাশে নিজস্ব ২৫ একর ও অন্যের কাছ থেকে লিজ নেওয়া ৬ একর জমিতে মাছ চাষের জন্য ফিশারিজ করার পরিকল্পনা হাতে নেন বছরখানেক আগে। সম্প্রতি প্রকল্পটির কাজ শুরু করেছেন তারা। এক বছর আগে নেওয়া পরিকল্পনা বাস্তবে রূপ দিতে গত প্রায় ৪ মাস ধরে মাটি কাটা, পুকুর খনন, বাঁধ নির্মাণের কাজশুরু করেছেন তারা।
আজিরগঞ্জ বাজার থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে জকিগঞ্জ-ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের পাশে ইতিমধ্যে এই প্রকল্পটিতে ৭টি পুকুর খনন ও বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। বাঁধের মাটিতে ফলানো হয়েছে শীতকালীন সবজি। শুধু ফিশারিজ নয়, ফিশারির মাছের খাবার তৈরি ও তীরের উঁচু জায়গাকে কাজে লাগাতে তাদের রয়েছে ব্যতিক্রমধর্মী পরিকল্পনা।
বর্তমানে এ প্রকল্পে পুকুর খননের পাশাপাশি ৮টি ট্রাক্টরে মাটি টানার কাজ করছেন শ্রমিকরা। আজিরগঞ্জ তথা বাদেপাশা ইউনিয়নে দুই ভাই এ উদ্যোগ যথেষ্ট প্রশংসা কুড়াচ্ছে। আজিরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ, লামা চন্দরপুরের সাহাব উদ্দিন ও পার্শ্ববর্তী বিয়ানীবাজার উপজেলার দেবারাই গ্রামের জয়নাল আবেদিন এই প্রকল্পটি দেখতে গিয়ে বেশ অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
বড় ভাই খুরশেদ আলম বলেন, আমেরিকান একটি কোম্পানীর দক্ষ কর্মকর্তার মাধ্যমে তারা নিজেদের প্রকল্পটির নকশা সাজিয়েছেন। সবজি চাষের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাস ও মোরগী চাষের জন্য আলাদা আলাদা শেড তৈরি করবেন ফিশারির তীরে। যেখানে প্রায় দেড়শ’ বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। প্রকল্পের মধ্যে থাকবে একটি মসজিদ ও পানিতে ভাসমান বাংলো।
বদরুল আলম জানান, প্রায় চারমাস ধরে মাটি খনন ও তীর সংরক্ষণের কাজ চলছে। অর্ধশত শ্রমিক প্রতিদিন কাজে ব্যস্ত রয়েছেন। এদের অনেকে বেকার ঘোরাফেরা করত। এখন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। পুকুরের তীরে ইতিমধ্যে সবজি চাষও করা হয়েছে।
ফিশারি করার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এই বিশাল পরিমাণজমিতে প্রতিবছর এক ফসল চাষ হতো। তাও বন্যার পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যেতো। ফলে অনেকটা অনাবাদি থাকে তাদের প্রায় ২৫ একর জমি। বছরখানেক আগে ফিশারি করার চিন্তা মাথায় আসে। তারপর দুইভাই মিলে পরিকল্পনা হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে অগ্রসর হন। প্রথমে নিজেরাই নকশা তৈরি করেন। পরে গোলাপগঞ্জমৎস্য অফিসের কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেন। মৎস্য অফিসের পরামর্শে এবং স্থানীয়ভাবে কাজ করা আমেরিকান একটি কোম্পানীর সহযোগিতায় পুরো নকশা সাজানো হয়। এখন পর্যন্ত তাদের এই প্রকল্পে প্রায় অর্ধকোটি টাকা খরচ হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
প্রাথমিকভাবে নিজেদের পরিকল্পনার ৮০ ভাগ সফলতা পেয়েছেন বলে মনে করেন তাইবা এন্টারপ্রাইজ এন্ড ফিশারিজেরস্বত্তাধিকারি খুরশেদ আলম।
তিনি বলেন, সৌদি আরব থেকে ফিরে ইউরোপের কোনো দেশে পাড়ি জমানোর আশায়বহু টাকা খরচ করেছেন। এখন সেই পরিকল্পনা মাথায় নেই। যে উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন সেটার শতভাগ বাস্তবায়ন চান তিনি। নিজেদের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বছরে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকা আয় হবে বলে আশা করছেন তিনি। অন্যদিকে নিজেদের লাভের পাশাপাশি এলাকার বেকার মানুষের কর্মসংস্থান বাড়াতে আরও বিস্তৃত হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য এনাম উদ্দিন বলেন, খুরশেদ সহোদরের এমন উদ্যোগ এই অঞ্চলের বেকারত্ব দূরীকরণ, খাদ্যের অভাব দূর হবে। পাশাপাশি পুষ্টি ও আমিষের সংকট মেটাতে সাহায্য করবে।
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেহান উদ্দিন রায়হান বলেন, একটি অনবাদী জায়গা কাজে লাগিয়ে এলাকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির উদ্যোগ নিশ্চয়ই প্রশংসার দাবি রাখে। এর ফলে শুধু উদ্যোক্তারা লাভবান হবে না, আমাদের মাছের সংকট দূর হবে। হাওর অঞ্চলে এই চাষ আমিষের অভাব দূর করবে। তাদের দেখে এলাকার আরও মানুষ এমন উদ্যোগ গ্রহণে এগিয়ে আসবে।
এ ব্যাপারে গোলাপগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অনিন্দ্র চন্দ্র সরকার বলেন, মৎস্য অফিসের পরামর্শানুযায়ী কাজ হলে ভুল ত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। খুরশেদ আহমদ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন, দিকনির্দেশনা নিয়েছেন। হাওর অঞ্চলে তাদের এই উদ্যোগটি বেশ এ অঞ্চলের মানুষদের আর্থিক দিক দিয়ে ইতিবাচক হবে বলে ।
তিনি বলেন, এ বিনিয়োগের ফলে সরাসরি কিছু লোকের কর্মসংস্থান হবে। পরোক্ষভাবেও মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। জাতীয় উৎপাদনের মাছের চাহিদা পূর্ণ হবে। এরকম উদ্যোগকে সরকারও উৎসাহিত করে থাকে।
মৎস প্রকল্পের সাথে গরু, ছাগল ও হাঁসের শেড তৈরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাওরাঞ্চলে গরু ও ছাগলের শেড মৎস্য খামারে থাকতে পারে। তবে এগুলোর চারণভূমি বাইরে থাকতে হবে। আর মাছেরফার্মে হাস প্রতিপালন উচিত হবে না বলে জানান ওই কর্মকর্তা।