English Version
আপডেট : ২ মার্চ, ২০১৬ ১৬:৪০

এখনও ভোদড় দিয়ে মাছ শিকার করেন চিত্রা পাড়ের জেলেরা!

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল প্রতিনিধি
এখনও ভোদড় দিয়ে মাছ শিকার করেন চিত্রা পাড়ের জেলেরা!

 

ভোদড় দিয়ে মাছ শিকারের এই পেশাটি বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। ভোদড় মাছ শিকার করে খেতে পছন্দ করে। তাদের এই শিকারকে কাজে লাগায় এখানকার জেলেরা। ভোদড়ের মাছ শিকারের সুযোগ নিয়ে নৌকায় বাঁধা জাল নদীতে ফেলে দিয়ে জেলেরা ভোদড় ছেড়ে দেয়। এরপর ভোদড় মাছ তাড়া করে খেতে গেলে সেই মাছ জেলেদের জালে এসে ধরা পড়ে। প্রতিদিন রাতে জেলেরা ভোদড় নিয়ে মাছ ধরতে বের হয়।

নড়াইল সদরের কলোড়া ইউনিয়নের একটি গ্রাম গোয়ালবাড়ি। এই গ্রামে অন্তত ২শ' জেলে পরিবারের বসবাস। এদের মধ্যে ২৬-২৭ পরিবারের জেলেরা ভিন্ন একটি প্রক্রিয়ায় ভোদড় দিয়ে মাছ শিকার করেন। এরকম রতডাঙ্গা আর লস্করপুর গ্রামে আরো কয়েকটি জেলে পরিবার একইভাবে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এভাবে প্রায় ২শ' বছর ধরে মাছ শিকার করে আসছেন শচীন বিশ্বাস, গুরুপদ বিশ্বাস আর পাগল চান বিশ্বাসের পরিবারসহ এলাকার জেলে পরিবারগুলো।প্রতিবছরই অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ৩ মাসের অধিক সময়ে ১০ খানা নৌকা আর ভোদড় নিয়ে নদীপথে পাড়ি জমান জেলেরা । মাছ ধরেন আর ঘাটে ঘাটে বিক্রি করেন। বছরের এই সময়ে যা আয় হয় তা দিয়ে প্রায় সারা বছর চালাতে হয় সংসার।

এক সময় নদীতে বেশি পানি থাকায় সুন্দরবন পর্যন্ত চলে যেতেন চিত্রা পাড়ের এই জেলেরা। এখন জলদস্যুদের ভয়ে সুন্দরবন না গিয়ে চিত্রা নদীর পাশের মধুমতি আড়িয়াল খাঁ পাড়ি দিয়ে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, ফরিদপুর চলে যান। আগে বাড়ির পাশের চিত্রা নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো যা বিক্রি করে ভালোভাবেই ৭-৮ জনের পরিবার খেয়ে পরে চলে যেতো। দিন চলেনা তাই মাছ ধরা ছেড়ে মাছ বিক্রি করছেন অনেকে, কেউ কেউ আবার অভাবের তাড়নায় দেশ ছেড়ে বিকল্প আয়ের জন্য ভারতে চলে গেছেন।

প্রতিটি জেলে নৌকার একপ্রান্তে ভোদড়ের জন্য আলাদা করে ঘর বানানো থাকে। এই ঘরে ওরা রাতে ঘুমায়। বাইরে থাকা ভোদড় সাধারণত ছাড়া থাকে। মাছ ধরার সময় হলে ঘরের ডালা খুলে দিলেই লাফিয়ে পড়ে পানিতে তারপর মাছ শিকার করতে থাকে। বছরের অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে নদীতে মাছ থাকে তাই ভোদড়দের খাবারের জন্য বাড়তি পয়সা ব্যয় করতে হয় না। জেলেদের ধরা মাছেই তাদের খাওয়া চলে যায়। কিন্তু বাকি সময়ে নদীতে মাছ কমে যাওয়ায় সে সময় বাইরে থেকে মাছ কিনে খাওয়াতে এদের । জেলার মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তারা ভোদড় দিয়ে মাছ ধরা জেলেদের সম্পর্কে জানলেও এদের ব্যাপারে তাদের আলাদা কোনো নজর নেই ।