English Version
আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ১৮:০৬
নড়াইল দত্তপাড়া পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে হচ্ছেটা কী?..!!

ঘুষ ছাড়া মিটার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার

উজ্জ্বল রায়, নড়াইল প্রতিনিধি
ঘুষ ছাড়া মিটার পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার

 

যশোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর লোহাগড়া বিলিং এরিয়া অফিসে ঘুষ ছাড়া মিটার সংযোগ পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সমীক্ষা থেকে শুরু করে সংযোগ পাওয়া পর্যন্ত অফিসের পরিদর্শকসহ সংশিষ্ট অনেককেই ঘুষ দিতে হয়। ঘুষ না দিলে তার নেই মিটার নেই বলে অহেতুকর্ দিনের পর দিন ধরণা দিতে হয় অফিসে। মিটার সংযোগ পাওয়ার জন্য নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত পাচ-ছয় হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। সাধারণ গ্রাহকদের নতুন সংযোগ পেতে অপেক্ষা করতে হয় বছরের পর বছর ।

আমাদের নড়াইল জেলা প্রতিনিধি উজ্জ্বল রায়ের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ভুক্তভোগী গ্রাহকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নতুন আবাসিক মিটার পেতে সমীক্ষা ফি বাবদ ১’শ টাকা জমা দেওয়ার পর সমীক্ষার জন্য সংশিষ্ট পরিদর্শকের আগমণের দিন গুনতে হয়। দিন যায়, মাস যায় কিন্তু পরিদর্শকের দেখা মেলেনা সহজে। ভীষণ ব্যস্ত থাকেন তিনি। এমনকি  তাকে অফিসেও সচরাচর পাওয়া যায়না। তবে অতিরিক্ত টাকা গুনলেই দ্রুত সমীক্ষার  ব্যবস্থা করেন । আর অফিসকে সন্তুষ্ট করতে না পারলে  মিটার পাওয়াতো দূরের কথা আবেদনের কাগজপত্রও হারিয়ে যায়। গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে বিদ্যুৎ অফিসে রয়েছে ইলেকট্রিশিয়ান নামক এক শ্রেনীর দালালচক্র। এই দালাল শ্রেনীর পাশাপাশি কথিত রাজনৈতিক  পরিচয়ে একশ্রেনীর তদবিরবাজ নেতারা এজিএম (কম) রথীন্দ্র নাথ বসাকের অফিস কক্ষে বসে গ্রাহকদের সাথে আপোস রফা করে দেন। লক্ষীপাশা পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের পরিদর্শক ইমাম হোসেন শিবলুর সাথে ইলেকট্রিশিয়ানদের যোগসাজসে গ্রাহকদের দ্রুত মিটার দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন তারা।

সরেজমিনে লক্ষীপাশা পল্লীবিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে দেখা যায়, নোটিশ বোর্ডে ১৮ জন ইলেকট্রিশিয়ানের নামের তালিকা।ভূক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, ্ওই নোটিশ বোর্ডের   ইলেকট্রিশিয়ানদের মাধ্যমেই অফিসের লোকজন মিটার বানিজ্য করছেন। উপজেলার গন্ডব গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ কেরামত আলী বলেন, ২০১০ সালে একটি মিটারের জন্য তিন দফা আবেদন করেছি। অথচ অফিস থেকে বলা হয়েছে, আমার আবেদন হারিয়ে গেছে। তাই গত বছর নতুন করে মিটারের জন্য আবার আবেদন করলে অফিসের পরিদর্শক আমাকে জানান, ১০ হাজার টাকা দিলে মিটার পাওয়া যাবে।এ ব্যাপারে অভিযোগ দেওয়ার জন্য বেশ কয়েকদিন এজিএম( কম) সাহেবের রুমে গিয়েও তার দেখা পাই নাই। পৌরসভার কচুবাড়িয়া গ্রামের ভ্যান চালক বিল্লাল বলেন, ২০১৫ সালে লক্ষীপাশা বিদ্যুৎ মেলায় মিটারের আবেদন করি। সে সময়কার ইনেস্পেক্টর প্রতি মিটার বাবদ ২ হাজার টাকা করে দাবি করেছিল। টাকা না দিতে পারায় আমি মিটার পাই নাই। সর্ব শেষ ৭/৮দিন আগে বর্তমান পরিদর্শক আমার বাড়ির ৪টি মিটারের জন্য মোট ৫ হাজার টাকা দিতে হবে বলেছেন। টাকা দিতে না পারলে মিটার পেতে দেরি হবে বলে তিনি (পরিদর্শক)আমাকে জানান।

লক্ষীপাশা গ্রামের মহিদুল ইসলাম বলেন, চার বছর ধরে আমি মিটারের জন্য ঘুরছি। অফিসে বারবার খোজ নেয়ার পর আমার আবেদন পত্র হারিয়ে গেছে, নতুন করে কাগজপত্র জমা দিতে হবে এমনটাই অফিস থেকে জানানো হয়। সর্বশেষ ৩ ফেব্রুয়ারী পরিদর্শক ইমাম হোসেন শিবলু আমাকে জানান ২ হাজার ১শ টাকা দিলে সিএমও হবে। এ বিষয়ে এজিএম কম রথীন্দ্র নাথ বসাক এর কাছে অভিযোগ করলে তিনি আমার সমীক্ষা ফি এর রশিদটি দেখে বলেন, এই রশিদ বাতিল হয়ে গেছে-  ইনেস্পেক্টরের সাথে যোগাযোগ করে নতুন আবেদন করতে বলেন । এ বিষয়ে পরিদর্শক ইমাম হোসেন শিবলুর নিকট জানতে চাইলে তিনি অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি নিজে গ্রাহকের নিকট থেকে কোন টাকা গ্রহন করি না।

লক্ষীপাশা পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের এজিএম(কম) রথীন্দ্রনাথ বসাক বলেন, অফিসের কাজের অনেক চাপ, লোকবল কম এবং বর্তমানে সার্ভিস তার না থাকায় মিটার সংযোগ দিতে দেরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে যশোর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার সালাহ্ উদ্দিন আল-বিতারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, একজন গ্রাহক সমীক্ষা ফি জমা দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে মিটার সংযোগ নিশ্চিত করার কথা। তবে অফিসের জিনিস পত্রের সংকটের কারনে একটু দেরি হচ্ছে, আশাকরি দ্রুত এ সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।