English Version
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি, ২০১৬ ১৭:৫২

শিশু পায়েল হত্যাকাণ্ডে মায়ের যাবজ্জীবন ও তার প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড বহাল

নিজস্ব প্রতিবেদক
শিশু পায়েল হত্যাকাণ্ডে মায়ের যাবজ্জীবন ও তার প্রেমিকের মৃত্যুদণ্ড বহাল

 

নরসিংদীর শিহাবুর রহমান পায়েল হত্যা মামলায় মা আফরোজা সুলতানা নূপুরের যাবজ্জীবন ও তার প্রেমিক গাজী আবদুস সালাম ওরফে উজ্জ্বল ওরফে রাজীবের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার নিম্ন আদালতের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল ও দণ্ড কার্যকরের আবেদন (ডেথ রেফারেন্সের) শুনানি শেষে বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার ও বিচারপতি এ এন এম বশিরউল্লাহর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। আসামিদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহজাহান কবীর এবং রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এম মান্নান মোহন এবং সহকারী অ্যাটর্নি  জেনারেল  আমিনুর রহমান চৌধুরী। এ বিষয়ে আমিনুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘পরকীয়ার জের ধরে সাড়ে তিন বছরের শিশু শিহাবুর রহমানকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তার মায়ের যাব্জ্জীবন এবং তাঁর প্রেমিক গাজী আবদুস সালাম ওরফে উজ্জ্বল ওরফে রাজীবকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছেন।’ ওই আইনজীবী বলেন, ‘শুনানিকালে আমরা বলেছি, শিশু শিহাবুর রহমান পায়েলের কোনো শত্রু নেই। পরকীয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে বলে তার মা আদালতের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, সাড়ে তিন বছরের শিশুকে নির্মমভাবে হত্যা করা হৃদয়বিদারক ঘটনা। এ বিষয়টি আমলে নিয়ে আদালত আসামিদের দণ্ড বহাল রেখেছেন।  এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট শাহজাহান কবীর বলেন, ‘হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের রায় বহাল রেখেছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে আমরা আপিল দায়ের করব।’  মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালে নরসিংদীর পলাশ থানার পণ্ডিতপাড়ার সিঙ্গাপুর প্রবাসী সোহরাব হোসেন ভুঁইয়া মামুনের সাড়ে তিন বছরের ছেলে পায়েলকে হত্যা করা হয়। মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, শিশুটিকে চোখ, হাত, হাতের কবজি, পা, কেটে টুকরো টুকরো করে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। এ ঘটনায় ২০০৯ সালে তার মা আফরোজা সুলতানা নূপুরকে যাবজ্জীবন এবং তার প্রেমিক গাজী আবদুস সালাম ওরফে উজ্জ্বল ওরফে রাজীবের মৃত্যুদণ্ড  দিয়েছিলেন নিম্ন আদালত। এ মুহূর্তে দুই আসামি কারাগারে রয়েছেন। মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০০৬ সালের মোবাইল ফোন নষ্ট হওয়ার পর তা সচল করতে দোকানে গিয়ে  নূপুরের সঙ্গে  উজ্জ্বলের পরিচয় হয়। পরে  টেলিফোনে প্রেমের সূত্রপাত হয়। উজ্জ্বল বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে নূপুর তাতে রাজি হয়। ঠিক করা  হয়, উজ্জ্বল প্রথমে শিশু পায়েলকে নিয়ে ঘর থেকে নিয়ে যাবে, পরে নূপুরকে নিয়ে যাবে। পরিকল্পনা মোতাবেক শিশুকে ২০০৬ সালের ৬ ডিসেম্বর নিয়ে যান উজ্জ্বল। পরে ৮ ডিসেম্বর তিনি জানান, ছেলে ভালো আছে। পরে আবার জানান, ছেলেকে অজ্ঞান করে রেখেছিলেন : জ্ঞান না ফেরায় গলা টিপে তাকে হত্যা করে ফেলেছে।  এ ঘটনায় ২০০৬ সালের ৭ ডিসেম্বর শিহাব পাশের বাড়িতে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হন মর্মে নরসিংদী থানায় একটি জিডি করেন শিশুটির চাচা মজিবুর রহমান ভুঁইয়া বাদল। পরে শিশুর লাশ পাওয়ার পর মামলা হিসেবে নিয়ে পুলিশ পরের বছর ৯ আগস্ট শিশুটির মা নূপুর ও প্রেমিক উজ্জ্বল ও তাঁর বন্ধু হারুনুর রশিদ গাজীর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। ১৬ জনের সাক্ষ্য শেষে ২০০৯ সালের ১ সেপ্টম্বর নরসিংদীর অতিরিক্ত দায়রা জজ এ কে এম আবুল কাসেম রায় ঘোষণা করেন।  রায়ে শিশুর মা নূপুরকে যাবজ্জীবন, আসামি উজ্জ্বলকে ফাঁসি এবং অপর আসামি হারুনুর রশিদকে খালাস দেন। ওই রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল করলে শুনানি শেষে হাইকোর্ট আজ নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন।