রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোরতা যৌক্তিক

বিলাসবহুল পণ্য আমদানি নিরুৎসাহিত করা ও হার্ড লোন এড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তকে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করে আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ (আইসিসিবি)। এছাড়া বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থান অত্যন্ত যৌক্তিক বলে মনে করে সংগঠনটি।
গতকাল আইসিসিবি নির্বাহী বোর্ডের ২৭তম বার্ষিক সভায় আইসিসিবির বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় এমনটা বলা হয়।
আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সরকার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব নীতিমালা বাজার ও অর্থনীতিতে একটি ইতিবাচক সংকেত পাঠানোর পাশাপাশি মুদ্রাস্ফীতি রোধ করবে। তিনি বলেন, আসন্ন বাজেটে বিদ্যুৎ, গ্যাসের ও জ্বালানির দাম না বাড়ানোর পাশাপাশি করপোরেট রেট ট্যাক্স কমানোর জন্য ব্যবসায়ীদের দাবিকেও সমর্থন করে আইসিসিবি।
আইসিসিবির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত দুই বছরে মহামারী বৈশ্বিক অর্থনীতির কাঠামো গঠনে বড় ভূমিকা পালন করেছে। গত বছর শক্তিশালী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সত্ত্বেও আর্থিক অসুবিধাগুলো এখনো শেষ হয়নি। অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি রয়েই গেছে। উপরন্তু অনেক দেশ ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা, উচ্চমুদ্রাস্ফীতি ও রাজনৈতিক উত্তেজনার সম্মুখীন হয়েছে, যার সবকিছুই অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ সময় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক অর্থনীতি আরেকটি অনিশ্চয়তার পথে যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। এ যুদ্ধ অনিশ্চিত সময় এবং মাত্রার গুরুতর অর্থনৈতিক ধাক্কায় ফেলতে পারে গোটা বিশ্বকে। কাছাকাছি মেয়াদে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ও উল্লেখযোগ্যভাবে শক্তিশালী মুদ্রাস্ফীতি চাপের ওপর যুদ্ধের প্রভাব পড়বে।
নির্বাহী বোর্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে। এরই মধ্যে তেলের দাম দ্রুত বাড়ার ফলে এ অঞ্চলের অর্থনীতি প্রভাবিত হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী আর্থিক অস্থিতিশীলতা বেড়েছে। কভিড-১৯ এশিয়ার অনেক উন্নয়নশীল অংশকে প্রভাবিত করে চলেছে, আবার কিছু অঞ্চলে নতুন শনাক্তের সংখ্যা বাড়ছে।
বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের যাত্রা অসাধারণ এবং অনেকের কাছে এটি একটি অসম্ভব অর্জনের দেশ। বাংলাদেশের প্রভাবশালী আখ্যানটি একটি অর্থনৈতিক অলৌকিক ঘটনা। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সফলতা বাংলাদেশের দ্বৈত গ্র্যাজুয়েশন এনে দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকের মাপকাঠি অনুযায়ী ২০১৫ সালে নিম্নআয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া ও জাতিসংঘের মানদণ্ড অনুযায়ী ২০১৮ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়া।
আইসিসিবি সভাপতি বলেন, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও কভিড-১৯ মহামারী থেকে পুরোপুরি পুনরুদ্ধার করার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে, যা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত করেছে। ফলে গত দশকে অর্জিত কিছু অর্জন হুমকির মুখে পড়েছে। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও অভিজ্ঞ অর্থনীতিবিদরা স্নাতকোত্তর চ্যালেঞ্জের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ যদি এ পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে যথাযথ কৌশল তৈরি করতে ব্যর্থ হয় তবে গুরুতর প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের সামনে থাকা তিনটি প্রধান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ হলো—ক্রমাগত উচ্চমূল্যস্ফীতির হার, বৈদেশিক মুদ্রার হারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ও ব্যাংক খাতে গভীরতর তারল্য সংকট। এসব চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলবে। যুদ্ধ দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে এর প্রভাব আরো তীব্র হবে। রফতানি হ্রাস ও আমদানি বিল বৃদ্ধির মাধ্যমে এরই মধ্যে বাংলাদেশ যুদ্ধের প্রভাব অনুভব করছে।