English Version
আপডেট : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ১৭:৪৩

এশিয়ার এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

অনলাইন ডেস্ক
এশিয়ার এলএনজি সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা

ইউক্রেন সংকট আরো তীব্র আকার ধারণ করলে সরবরাহ সংকটে পড়তে পারেন এশিয়ার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিকারকরা। ইউরোপের বাজারে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহেও এতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। কিন্তু এমন পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য এখনো বেশির ভাগ দেশই প্রস্তুতি নিতে পারেনি। গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতে বিকল্প কোনো পদক্ষেপও নেয়া হয়নি। খবর এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটস।

এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে জাপান, চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অর্থনীতিগুলো ব্যাপকভাবে এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু এসব দেশের ঝুঁকি মোকাবেলার সক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত। এর মানে দাঁড়ায়, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের যে পরিমাণ মজুদ বাজারে রয়েছে, গ্যাসের বাজারে সে পরিমাণ মজুদ নেই।

তথ্য বলছে, ২০২০ ও ২০২১ সালে গ্যাসের দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে। এর মধ্যে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। বিষয়টি এশিয়ার দেশগুলোর জন্য অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কারণ আটলান্টিক ও প্যাসিফিক বেসিনের মধ্যে যে আন্তঃসংযোগ রয়েছে তা বাজার পরিস্থিতি পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রাখে।

এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল প্ল্যাটসের বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইউরোপে রাশিয়ার গ্যাস সরবরাহ কমে যাওয়া কোনো পক্ষের জন্যই ভালো নয়। এমনকি রাশিয়া যদি ইউক্রেনকে পুরোপুরি দখল করে নেয়, তবু সরবরাহ বন্ধ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা নেই।

নিউইয়র্কভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংকিং কোম্পানি সিটিগ্রুপ এক নোটে জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন বিরোধ আরো প্রকট আকার ধারণ করলেও আরো ৫০ বছরে গ্যাস রফতানি বাধাগ্রস্ত হবে না। তবে এ সংকটের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যটির দাম আরো বেড়ে যাবে। ঊর্ধ্বমুখী দামের কারণে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে এশিয়া।

তবে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, দেশটি রাশিয়ার পরিবর্তে বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে এলএনজি সরবরাহের কথা ভাবছে। এ লক্ষ্যে দেশটি এলএনজি সক্ষমতাসম্পন্ন দেশগুলোকে চিহ্নিত করার প্রয়াস চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।

এশিয়ার এলএনজি আমদানিকারকরা বর্তমানে দ্বিমুখী সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। ইউরোপ যদি তাদের প্রাকৃতিক গ্যাস চাহিদার বড় একটি অংশই এলএনজি থেকে পূরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে স্পট মার্কেটে পণ্যটির দাম আরো বাড়বে। অন্যদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশ ইউরোপে সরবরাহ বাড়ালে বিপাকে পড়তে পারেন এশিয়ার আমদানিকারকরা।

২০২১ সালে বিশ্ববাজারে এলএনজির শীর্ষ আমদানিকারকের স্থান দখল করে রেখেছে চীন। গত বছর মোট ৮ কোটি ১০ লাখ টন এলএনজি আমদানি করে দেশটি। ফলে জাপানের কাছ থেকে শীর্ষ আমদানিকারকের তকমা দখলে নেয় চীন। এ সময়ে দেশটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহারও রেকর্ড পরিমাণ বাড়ে। ৮ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও ১০ শতাংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়ার ফলে চীনে এলএনজি চাহিদায় বিশাল আকারের উল্লম্ফন দেখা দেয়।

চলতি বছর চীনে এলএনজির চাহিদা গত বছরের তুলনায় আরো বাড়ার পূর্বাভাস রয়েছে। তবে ২০২১ সালের তুলনায় এ প্রবৃদ্ধির হার অনেকটা ধীরগতি লাভ করবে বলে জানান বিশ্লেষকরা। অর্থনৈতিক চাপ ও স্পট এলএনজির ঊর্ধ্বমুখী দামের ফলে এ প্রবৃদ্ধি ধীরগতি অর্জন করবে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।

চীনের জাতীয় তেল কোম্পানি সিনোপ্যাকের গবেষণা বিভাগ সিনোপ্যাক ইকোনমিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ধারণা অনুযায়ী চলতি বছর দেশটিতে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি ঘনমিটারে পৌঁছবে, যা ২০২১ সালে ব্যবহূত আনুমানিক ৩৭ হাজার কোটি ঘনমিটারের তুলনায় ৭ শতাংশ বেশি।